‘‘নির্জনে গেলে রেপড হতে পারো।” …ওহ্ আচ্ছা তাই!! বাঃ বাঃ বেশ বেশ। গুজরাত পুলিশের এহেন নিষেধাজ্ঞা জারির খবরটি পড়ে ভাবছি ঠিকই তো মেয়েরা নির্জনে যাবেই বা কেন? এই নির্জনে যাবার জন্যই তো বিলকিস বানুরও রেপ হয়েছিল তাই না? তাছাড়া মণিপুর, হাতরাস, উন্নাও, আসিফা ও হাল আমলের ওড়িশার ছাত্রীটিও নিশ্চয় নির্জনে বেরিয়েছিল?
আরও পড়ুন-পরীক্ষা স্বচ্ছ করতে কড়া ব্যবস্থা, আজ ডিএলএড পার্ট-টু
খবর পড়েই জানলাম গুজরাতে এখন দিনে পাঁচটা করে রেপের অভিযোগ জমা পরে। ভাইব্র্যান্ট গুজরাত বলে কথা। একেবারে মডেল রাজ্য। ফলত পুলিশ একদম ঠিক বলেছে। রাস্তাঘাটে, অফিসে, স্কুলে, বাজার, দোকানে লোকজন থাকলে তখনই বেরোনো ভাল। কোনও দরকার নেই নির্জনে যাবার।
আসলে ব্যাপারটা তুচ্ছ!! কী বলুন তো চারদিকে সব পুরুষসিংহের ঘোরাঘুরি। কার কখন কী ইচ্ছা করবে সেটা কি বলা যায়? একটু সামলে গুছিয়ে চলাটাই তো উচিত। তাই তো মেয়েদের জন্য লেডিস কম্পার্টমেন্ট রাখা হয়েছে। রাত বেশি করে বাড়ি না ফেরার হুকুম আছে। গা ঢাকা দেওয়া জামাকাপড় পরার নিদান আছে। পুরুষের লোলুপতা নয় কোথাও রেপ হলেই এগুলোর অন্যথা হওয়ার কারণটি দাগানো হয়।
২০২৫-এ দাঁড়িয়ে আছি আমি যারপরনাই তাজ্জব শুধু নই লজ্জিত। যখন একদিকে মানুষ মঙ্গলগ্রহে যাবার চেষ্টা করছে তখন বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশে প্রায় তালিবানি ফতোয়াই জারি করা হচ্ছে।
সবথেকে লজ্জার তো গুজরাতে মেয়েদের রাতে বেরোনোর নিষেধাজ্ঞার খবরটি কী সুন্দর দেখুন গদগদ চিত্তে সত্যযুগ থেকে কলিযুগে এসেও কীরকম পুরুষ-নির্ভরতার বাঁধা গতের গল্প বোনা হয়েছে। এই খবর যে কতখানি ভয়ানক তার কোনও বোধ কি আদৌ মিডিয়ার আছে? এমন ন্যক্কারজনক সাবধানবাণী ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’-এর রাজ্যের বলেই এতে মিডিয়ার নাকে আইনের শাসন নষ্ট কিংবা গণতন্ত্রের বিপদ সংকেত কিছুরই গন্ধ ঢুকছে না।
কিন্তু যেই মেরুদণ্ড লটপট করা পুলিশের রাজ্য বাংলার বিষয় হবে ওমনি চতুর্থ স্তম্ভের রথীরা সান্ধ্য আসরে কোমরখানা পারলে গামছায় বেঁধে নিয়ে গগনবিদারী চিৎকার জোরে যে এখানে আইনকানুন নামক কোনও বস্তুই নেই।
এই তো সামনেই আসছে সদ্য বছর ঘোরা রাতদখল পার্বণ… তাও কেন নবান্নে নামল না হেলিকপ্টার এই প্রশ্নটার প্রায়ই সম্মুখীন হই। সে না নামুক তবুও পিছিয়ে রাখা খবরে গুজরাত হল মডেল আর বাংলা হল নরককুণ্ড। তাই দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই ঠিকঠাক রেপ হয়। বাকি দেশে নির্জনতার বলি হয় মেয়েরা। নাহলে ওইসব রাম রাজত্বে রেপড নৈব নৈব চ। তাই তো?
আচ্ছা এই গুজরাতের মতোই রকমসকম মেরুদণ্ডওয়ালা পুলিশই কি আমাদের বাংলার সুশীল সমাজ চাইছে? নইলে ওরা কী কারণে গতবছর আরজি করের ঘটনায় পুলিশ কমিশনারকে মেরুদণ্ড উপহার দিয়েছিল?
সিজনাল সিপিএম কখনও বিজেপির মুখোশ পরে স্বপ্নে বিভোর হয়ে ড্রইংরুমের ঠাণ্ডায় বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালি দেওয়াটা আবারও ঝালিয়ে নিল অভ্যাসবসত। ছাব্বিশ অবধি এই কেত্তন গাওয়া চলবে।
আরও পড়ুন-মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের ব্যাকরণ
আসলে আপনাদের দুঃখ বুঝি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামক জনসুনামিতে আপনারা দিশেহারা। আর তাই যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেচনা, সত্য, মিথ্যা, বিবেক সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছেন কুৎসার কাছে। নোংরা মানসিকতা দিয়ে রাজনীতিকেও কলুষিত করছেন।
কিন্তু এতে লাভ কী হল? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখার অযোগ্য ভাষায় আক্রমণ করার ধারাবাহিক ধারা জারি রেখেও রাজ্যবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া গেল না। কারণ এর ভিত্তিটাই ছিল রাজনীতির রুটি সেঁকবার উদ্দেশ্যে। আর তার জন্য যতরকমের মিথ্যা আমদানি করা যায় তার ফুলঝুরি ছড়ানো হয়েছিল।
কিন্তু সত্যের সামনে মিথ্যার বেসাতি টেকে না বেশিদিন। মানুষ ঠিকই বুঝে গেল সবটাই ছিল রাজনৈতিক। ছাব্বিশের কেত্তন গাওয়া শেষ হলে যেটুকু টিকে আছে ওটাও কর্পূরের মতো উবে যাবে। রাজনীতির বোড়ে হওয়ার দায়ভারটুকু একমাত্র কাটাতে হবে ওই মা-বাবাকেই। কারণ রাজনীতির অংকটা রাতদখল দিয়েই কষা শুরু হয়েছিল ওদেরই টার্গেট করে। এই গোটা ব্যাপারটাতে এটাই খুব দুর্ভাগ্যজনক।
‘রাজনীতি করাটা রাজনীতি হলে, রাজনীতি না-করাটাও রাজনীতি। সুতরাং দাবি মানবিক হলেও তার ভিতরেও আছে রাজনীতি। কারণ অরাজনৈতিক বলে কিছু হয় না।’ … গতবছর আজকের দিনে বলেছিলাম। ঠিক একবছর পর ফেসবুক মেমোরি জলের মতো পরিষ্কার করেই ফেরাল কথাগুলো।