ট্রাম্পের শুল্কনীতির গোপন অঙ্ক ফাঁস করে দিল মার্কিন নথিই?

Must read

প্রতিবেদন: ঝোলা থেকে বেড়াল বের করে দিল মার্কিন নথিই। আর তার জেরে এবার নিজের দেশেই নিন্দিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হচ্ছে, নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষার খাতিরেই বিভিন্ন দেশের উপর অন্যায্য শুল্ক চাপিয়ে বৈদেশিক নীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছেন ট্রাম্প(Donald Trump)। তাঁর নিজের এবং ঘনিষ্ঠ শিল্পসংস্থাগুলির লাভ নিশ্চিত করতে গিয়ে এমন সব নীতি নিচ্ছেন ট্রাম্প, যার ফলে টালমাটাল হতে পারে মার্কিন অর্থনীতি।

আরও পড়ুন-নিমিশাকে নিয়ে আপাতত ভয়ের কিছু নেই, সুপ্রিম কোর্টে এবার জানাল কেন্দ্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) শুল্কনীতিকে এতদিন কেবল বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখা হত। কিন্তু সম্প্রতি ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার হাতে আসা কিছু ফাঁস হওয়া সরকারি নথি সেই ধারণাকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। এই গোপন নথিগুলি থেকে জানা যাচ্ছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির পিছনে ছিল এমন কিছু উচ্চ-গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য, যা দেখে হতবাক বিশেষজ্ঞরা। ফাঁস হওয়া সরকারি নথিগুলিতে ‘সম্পূরক আলোচনার উদ্দেশ্য’ শিরোনামে বেশ কিছু পৃষ্ঠা রয়েছে। এর মধ্যে দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ককে একটি চাপ প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এর মূল লক্ষ্য বিভিন্ন দেশকে বাধ্য করা যাতে তারা মার্কিন কোম্পানি, যেমন তেল জায়ান্ট শেভরন বা ইলন মাস্কের স্টারলিংককে, বিশেষ ছাড় বা সুবিধা দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের প্রাক্তন কূটনীতিক ওয়েন্ডি কাটলার, যিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে আলোচকের ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’কে বলেছেন, কোনও বাণিজ্য চুক্তিতে এই ধরনের শর্ত আমি আগে কখনও দেখিনি। আলোচনার টেবিলে সাধারণত এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলা হয় না। স্বার্থের সংঘাত তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে এমন নথিগুলিতে একটি নির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকার দেশ লেসোথোকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, দেশটিকে চাপ দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থা ‘ওয়ান পাওয়ার’কে  একটি পাঁচ বছরের কর অব্যাহতি প্রদান করানো, যাতে তারা সেখানে একটি বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে পারে। ট্রাম্পের শুল্কনীতির অন্যান্য গোপন উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে : চিনের সীমান্তবর্তী দেশগুলিকে আমেরিকার সাথে আরও শক্তিশালী সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাপ দেওয়া। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বিদেশি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে চাপ দেওয়া— যা এখন একটি বহুল পরিচিত বিষয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, এই নথিগুলি প্রকাশ্যে আসার পর গোটা প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত এই পদ্ধতিতে কাজ হয় না। ট্রাম্পের শুল্কনীতির পেছনে থাকা গোপন উদ্দেশ্যগুলির একটি বড় অংশ ছিল চিন ও বিশ্বজুড়ে তার ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করা। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, শুল্কের চাপ ব্যবহার করে কম্বোডিয়াকে তাদের রিম নৌঘাঁটির কাছে চিনা সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি নিষিদ্ধ করতে বলা হয়েছিল। আরেকটি নথিতে দেখা যায়, ইজরায়েলকে চাপ দেওয়া হয়েছিল যেন তারা হাইফা বন্দর শহরে চিনের মালিকানাধীন বন্দরকে সরিয়ে নেয়। এই নথিগুলি প্রমাণ করে যে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি কেবল অর্থনৈতিক হাতিয়ার ছিল না, বরং এটি ছিল একটি বহুমাত্রিক কৌশল, যার মাধ্যমে তিনি ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক এবং কর্পোরেট স্বার্থ চরিতার্থ করতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তান নিয়ে যে চাঞ্চল্যকর পর্দাফাঁস হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যবসার অন্যতম শরিক পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। পাকিস্তানে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা থেকে লাভ করার দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন মুনিরকে। আর এই নির্লজ্জ স্বার্থের সংঘাতের নমুনা দেখা যাচ্ছে অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ‘অসত্য’ দাবিতে, যা খারিজ করেছে ভারত এবং যা সমর্থন করে ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ করেছে পাকিস্তান!

Latest article