প্রতিবেদন : রাত ১টায় তোলা হল আমিরকে। খোলা হল গেট। বলা হল সোজা যেতে। ডাইনে-বাঁয়ে কিংবা পিছনে তাকালেই চলবে গুলি। কারা বলল? বিএসএফ। কাকে বলল? বাংলার (bengali worker) বাসিন্দা এক ভারতীয়কে। কোথায় পাঠাল? বাংলাদেশে। কেন পাঠাল? বাংলায় কথা বলার অপরাধে। এটাই এখন বিজেপি রাজ্যের চিত্র। এটাই এখন বিদ্বেষের ছবি। বিজেপির ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসির বাস্তব চিত্র।
আমির মাস ছয়েক আগে কাজ নিয়ে রাজস্থানে যান। বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন। একদিন কাজে যাওয়ার পথে হঠাৎ পুলিশ আটকাল। বাংলা (bengali worker) ভাষায় কথা বলায় পরিচয়পত্র দেখতে চাইল। সব দেখান আমির। এমনকী বাড়িতে ফোন করে দাদুর পাসপোর্টও দেখান পুলিশকে। কিন্তু বিজেপির রাজস্থান পুলিশ তা শুনবে কেন! প্রবল মারধর করে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে জেলে ঢোকানো হল। এরপর জেলে শুরু হয় অত্যাচার। প্রায় মাস দুয়েক জেলে কাটানোর পর আমিরকে ফ্লাইটে করে কলকাতায় এনে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হল। বিএসএফের ক্যাম্পে শুরু হল নতুন করে অত্যাচার। আমিরের ভাষায়, সারা দিন কার্যত খাবার-দাবারই দিত না। তার সঙ্গে চলত দিনভর খাটুনি। নিজেদের ইচ্ছেমতো কথা কাগজে লিখিয়ে নিয়ে টিপসই দিতে বাধ্য করত বিএসএফ। আর তার সঙ্গে তোলা হয়েছিল অসংখ্য ছবি। এরপর হঠাৎ এক রাতে নিয়ে আসা হল বনগাঁ সীমান্তে। খুলে দেওয়া হল সীমান্তের গেট। ছুটতে বলা হল। ডাইনে-বাঁয়ে নয়, পিছনে তাকানো নয়। নির্দেশের অন্যথা হলেই চলবে গুলি। বাংলার বাসিন্দাকে ঘাড় ধরে পাঠিয়ে দেওয়া হল বাংলাদেশে।
আরও পড়ুন-ভারত-বিরোধী বাগাড়ম্বর বন্ধ করুন, মুনিরের হুমকির কড়া জবাব বিদেশ মন্ত্রকের
যথারীতি বাংলাদেশে গিয়ে গ্রেফতার। দিন সাতেক পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আমির একেবারে রাস্তায় এসে পড়লেন। খাওয়া-দাওয়া নেই। কোনও পরিচিত মানুষ নেই। সাহায্যের কেউ নেই। দোকানের বেঞ্চে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন আমির। এইসময় বাংলাদেশেরই একজন ব্লগার তাঁর ভিডিও তৈরি করে সমাজমাধ্যমে ছেড়ে দেন। চোখে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের। যোগাযোগ করেন পরিবারের সঙ্গে।
এরপর আর এক লড়াই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে। আইনি জটিলতা পেরিয়ে তাঁকে আনা হল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলার পর মুক্তি পেলেন বৃহস্পতিবার। বসিরহাট থানায় আবার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ আমিরের। এতদিন পর পরিজনদের পেয়ে আমির খুশি। বললেন, এমন অত্যাচার যেন অন্য কাউকে সইতে না হয়। আমিরের কাছে এখনও বিস্ময়, বিএসএফের অত্যাচার এবং তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি। সব তথ্য ছিল তবুও কেন এরকম ঘটনা ঘটল? জবাব তো দিতেই হবে কেন্দ্রকে, বিজেপিকে।