দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে বিজেপির ভারতে বাঙালি আক্রান্তের খবর

ছিঃ! বিজেপি এখন আন্তর্জাতিক লজ্জা

Must read

প্রতিবেদন : মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন। সেটাই সত্যি হল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মুখ পুড়ল বিজেপির (Shame oN BJP)। বিজেপির বাংলা-বিদ্বেষ ও ভাষা-সন্ত্রাসে নিন্দা গোটা বিশ্বজুড়ে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তা ফলাও করে প্রচার করল দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। আন্তর্জাতিক এই সংবাদ মাধ্যমে শীর্ষ খবর হিসেবে পরিবেশিত হল, বিজেপির ভারতে আক্রান্ত বাংলাভাষা ও বাঙালি। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের ধরনার ছবি দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল পেজে গত ১৫ অগাস্ট লিড স্টোরি হিসেবে ছাপানো হয়েছে এই খবর।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে গত ১০ আগস্টও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ইন ইন্ডিয়া ইমিগ্রেশন রেইডস ডিটেইন থাউজেন্ডস অ্যান্ড ক্রিয়েট এ ক্লাইমেট অফ ফিয়ার।
এবারের শিরোনাম, দ্য ফিয়ার অফ স্পিকিং বেঙ্গলি। তথ্য সহ মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে গুজরাতে পরিযায়ী বাঙালিকে বেল্ট দিয়ে মারের নির্মম কাহিনি। বাংলা থেকে কর্মসূত্রে গুজরাতে গিয়েছিলেন বাংলাভাষী হাসান শাহ। তাঁকে গুজরাতে ভাড়া বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে তুলে এনে মোদি-রাজ্যের পুলিশ বেধড়ক মারধর করে চোখ ও হাত বেঁধে নৌকায় চাপিয়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ছেড়ে আসে। বৈধ আধার, ভোটার ও প্যান কার্ড থাকার পরও নির্মম হেনস্থার শিকার হতে হয় তাঁকে। আব্দুর রহমান নামে আর এক বাংলাভাষীকেও একইভাবে নৌকায় চাপিয়ে নগ্ন করে বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে বিএসএফের সাহায্যে
বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ফেলে দিয়ে আসা হয়েছিল। কোনও মতে আব্দুর ও হাসান সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে প্রাণরক্ষা করেন। তারপর এক সহৃদয় বাংলাদেশি পরিবারের সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আইনি লড়াই জিতে ফিরে আসা। শুধু গুজরাত নয়, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি এবং অসম-সহ বিজেপিশাসিত (Shame oN BJP) অন্য রাজ্যেও বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে নির্যাতন চলছে বাঙালিদের উপর। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা রহিমা বেগমকে একইভাবে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে সীমান্ত পার করে দেয় অসম পুলিশ। এই তিন ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে বিজেপি রাজ্যের বাঙালি নির্যাতনের ভয়ঙ্কর কাহিনি। কীভাবে বিজেপিশাসিত নরেন্দ্র মোদির ভারতে শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাঙালি নিপীড়ন চলছে, অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে বাংলাভাষীদের রাতারাতি দেশছাড়া করা হচ্ছে, তার বর্ণনা করা হয়। উল্লেখ করা হয়, মোদির শাসনে ভারতবর্ষের মৌলিক ঐক্য ব্যাহত হচ্ছে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা বহনকারী ভারতবর্ষকে আচ্ছন্ন করেছে বিদ্বেষ ও ঘৃণার রাজনীতি। বাংলায় কথা বলা মানেই এখন আতঙ্ক! এই না দেশছাড়া হতে হয়! ছিঃ বিজেপি, এ কোন রাজনীতি! ঘৃণার রাজনীতিতে নিন্দিত দেশেও, এখন মুখ পুড়ছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও।

আরও পড়ুন- বৃষ্টি-হড়পা বানে বিধ্বস্ত পাকিস্তান, মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছুঁইছুঁই!

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে আরও লেখা হয়েছে, শুধুমাত্র গত মে মাস থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত দু’হাজারেরও বেশি বাংলাভাষী বাঙালিকে ভারতের সীমান্ত পার করে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়েছে বাংলাদেশে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া মহাদেশীয় ডিরেক্টর মিনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য দ্য নিউইয়র্ক টাইমস নিশ্চিত করেছে বলেও লেখা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর বিজেপির এই বিদ্বেষ রাজনীতির প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে তৃণমূলের মহিলা শাখার ধরনা-অবস্থানের কথাও ছবি-সহ প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদপত্রটি। এবং লেখা হয়েছে মোদির ভারতে ঘটে চলা এই ঘটনা গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে অত্যন্ত আতঙ্কের।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ভারত সরকার যাদের বিরুদ্ধে এই নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের। রয়েছে কিছু হিন্দু পরিবারও। ‌ কয়েক পুরুষ ধরে ভারতের বাসিন্দা তাঁরা। তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের ইস্যু করা সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র রয়েছে। তারপরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক আক্রোশ মেটাতে নির্যাতন চালাচ্ছে দেশের সরকার।
উল্লেখ্য, বিজেপির বাংলা-বিদ্বেষ ও ভাষা-সন্ত্রাসের ঘটনাকে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়ে ভাষা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এই মর্মে বাংলা, বাংলাভাষা ও বাঙালিদের অধিকার রক্ষায় ইতিমধ্যেই ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছেন তিনি‌। তাঁর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

Latest article