কালিম্পংয়ের পানবুদারা (kalimpong panbu dara)। অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৫০০ ফুট উচ্চতায়। হিমালয়ের কোলে। দার্জিলিংয়ের খুব কাছেই। বছরের যে কোনও সময় বেড়াতে যাওয়া যায়। বর্ষা শেষে যথেষ্ট ভিড় থাকে। তখন থাকে আরামদায়ক পরিবেশ। কারণ পানবুদারায় গরম প্রায় নেই বললেই চলে।
অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ছোট-বড় পাহাড় চূড়া। সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা। ভোরবেলায় পাখির কিচিরমিচির ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। বেরিয়ে পড়া যায় গরম কফিতে চুমুক দিয়ে। পায়ে হেঁটে ঘুরে আসা যায় আশেপাশে। একা নয়, যেতে হবে দলবেঁধে। তবে গোল করা যাবে না। মাতা যাবে না খোশগল্পে। নির্জন নিরিবিলি পাহাড়ি পরিবেশ উপভোগ করতে হবে চুপচাপ। শান্ত ভাবে। জঙ্গলে চোখে পড়বে রকমারি ফুল। নানা রঙের। কিছু চেনা, কিছু অচেনা। বুনোফুলও মেলে ধরে সৌন্দর্য। পাহাড়ি অঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন বন্যপশু। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তাদের থেকে। নাহলে বিপদের সম্ভাবনা।
পাহাড়ের অন্যান্য জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার যে রূপ দেখা যায় তার তুলনায় পানবুদারা থেকে আরও ভালভাবে দেখা যায়। পাওয়া যায় ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। উপরে যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘা, নিচে তেমন তিস্তা। দার্জিলিং অথবা গ্যাংটক থেকে ফেরার পথেও ঘুরে আসা যায়। তিস্তা নদীর যে ভিউ এখান থেকে দেখা যায়, সেটা আর অন্য কোনও জায়গা থেকে পাওয়া যায় না। এই নদীর অনন্য সুন্দর রূপের সাক্ষী থাকতে পর্যটকরা ভিড় জমান পানবুদারায়। অনেকেই নদীর তীরে বসে সময় কাটান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এখানে একই ফ্রেমে ধরা পড়ে সেভকের রেল ব্রিজ আর ঐতিহ্যশালী করোনেশন ব্রিজ।
পানবুদারা ভিউ পয়েন্টকে মিস করতে চান না কোনও পর্যটক। ভিউ পয়েন্টে এসে দাঁড়ালে পাওয়া যায় স্বর্গের মাঝখানে দাঁড়ানোর অনুভূতি। মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখে উন্মনা হয় মন। ধীরে ধীরে জন্ম নিতে পারে ছন্দ। কথা হতে পারে কবিতায়।
এখানকার রাস্তাঘাট বেশ ভাল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আগে যথেষ্ট সমস্যা ছিল। গত তেরো-চোদ্দ বছরে লেগেছে সরকারি উন্নয়নের ছোঁয়া। মসৃণ রাস্তা দিয়ে সাঁই-সাঁই ছুটে যায় গাড়ি। একেবারে হোমস্টের দোরগোড়া পর্যন্ত। এখানে ক্যাম্পিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায়। সেইসঙ্গে আছে ট্রেকিংয়ের সুবিধা। এই ক্ষেত্রেও একা নয়, যেতে হবে দলবেঁধে।
আরও পড়ুন-অক্টোবরে আনন্দ-কাসপারভ
দিনের বেলায় রোদের নরম আদর শরীরে এসে লাগে। রাগী নয়, সূর্য যেন অনেক শান্ত। রাতেরবেলা হাসি ছড়ায় লাজুক চাঁদ। অসংখ্য তারা ফুটে ওঠে। যেন কিছু বলতে চায়। বনে বনে জেগে ওঠে বিন্দু বিন্দু জোনাকির দল। নিচে চোখে পড়ে আলো ঝলমলে শিলিগুড়ি শহর।
পানবুদারার (kalimpong panbu dara) আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম চারখোল। অফবিট ডেস্টিনেশন। প্রায় ৩৫০০ ফুট উচ্চতায় পাইন, সাইপ্রাস, ওক, শাক, গুরাস আর বরফঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্য নিয়ে নিশ্চুপে অবস্থান করছে।
সামথারা জায়গাটাও পানবুদারা থেকে খুব দূরে নয়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। দূর করে দেবে মন ও শরীরের ক্লান্তি। এখান থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ। আছে হোমস্টে। চাইলে থাকাও যায়। পানবুদারার কাছেই রয়েছে ইয়ামাখুম। এখান থেকেও মুখোমুখি হওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার। শহরের কোলাহলে থেকে দূরে নৈঃশব্দ্যের জগতে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। এ-ছাড়াও ঘুরে দেখা যায় সিঞ্জিদারা, ঝান্ডিদারা, ডেলো, দুরপিন।
চাইলে আশেপাশের যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে দিনকয়েক থাকার পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পানবুদারায় এসে কাটানো যায় দুটো দিন। দার্জিলিংয়ের ভিড়ভাট্টা এড়াতে বহু পর্যটক এখন বেছে নিচ্ছেন এই জায়গাটা। ছোট্ট পরামর্শ দিয়ে রাখি, পানবুদারার (kalimpong panbu dara) স্থানীয় খাবারের স্বাদ এককথায় অসাধারণ। অবশ্যই ট্রাই করতে হবে। গ্রামের মানুষজন অতি-মাত্রায় সহজ-সরল। অতিথিপরায়ণ। সবসময় ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে নরম হাসি। তাঁদের মন প্রকৃতির মতোই সুন্দর। কী ভাবছেন, যাবেন? সপরিবার? নিশ্চিন্তে ঘুরে আসুন। চোখ বন্ধ করে দেখুন, শুনুন— পানবুদারা হাতছানি দিয়ে ডাকছে।