প্রতিবেদন : কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শুক্রবারের বক্তব্য ‘হতাশার আর্তনাদ’ ছাড়া আর কিছুই নয়, তোপ তৃণমূল কংগ্রেসের। এদিন সকালেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পাঁচটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল দল। স্বাভাবিকভাবেই যার কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি। কিন্তু এদিন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে যেভাবে মিথ্যাচার করেছেন তার পাল্টা কড়া জবাব দিয়েছে তৃণমূল। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একটার পর একটা ভিডিও দেখিয়ে (হাত পেতে টাকা নিচ্ছে গদ্দার অধিকারী) উদাহরণ তুলে ধরে মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা ও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মোদির মিথ্যাচারের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। দুর্নীতির ইস্যু থেকে বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের প্রতি বিদ্বেষ, এসআইআর, ‘সংবিধান সংশোধনী’ কালা বিল, পরিযায়ী শ্রমিক, দুর্গাপুজো, বাংলার বকেয়া, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি সবক’টি বিষয় তুলে ধরে তৃণমূল মোদি ও তাঁর দল বিজেপিকে আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে, বাংলার মানুষ কিছুই ভোলেনি। ভুলবেও না। ২০১৬, ২০২১, ২০২৪-এর মতো ২০২৬ সালেও গোহারা হারবে বিজেপি। বাংলার মানুষের বিপুল জনসমর্থন ও আগের থেকে রেকর্ড সংখ্যক বিধায়ক বাড়িয়ে ক্ষমতায় ফিরবে তৃণমূল কংগ্রেস। আর চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন বাংলার ঘরের মেয়ে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি-শাহ সহ বিজেপি নেতারা যতবার বাংলায় আসবেন সেই অনুপাতে বাংলায় তৃণমূলের ভোট বাড়বে। ড্যামেজ কন্ট্রোলের বৃথা চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন-মোদিজি আসুন ক্ষতি নেই, এসে বাংলার উন্নয়ন দেখে যান : চন্দ্রিমা
রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প : শুক্রবার যে রেল প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, সেগুলি আসলে রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা পরিকল্পনা (২০১১) এবং আর্থিক বরাদ্দের ফসল। একটিবারের জন্যও তাঁর নামটুকু পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী। বাংলার জন্য এই প্রকল্পগুলি ঠিক করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এদিন ফলকে নাম তুললেন প্রধানমন্ত্রী। তোপ তৃণমূলের।
বাংলাবিরোধী বিজেপি : এদিন টেলিপ্রম্পটারের দিকে তাকিয়ে বাংলা বলেছেন। অথচ সেসময় তাঁর পিছনের সারিতে বসে আছেন তাঁরই দলের নেতা, যিনি বলেছেন, বাংলা কোনও ভাষাই নয়। বাংলা ভাষা হল বাংলাদেশের। তাঁকে মঞ্চে বসিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। কটাক্ষ শশী পাঁজা ও কুণাল ঘোষের।
হিম্মত থাকলে এক্সপেল করুন : তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগের দিনই বলেছেন, হিমন্ত বিশ্বশ্বর্মা, অজিত পাওয়ার, বাংলার গদ্দার অধিকারী-সহ যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছিল, তদন্ত এড়াতে সবক’টা বিজেপিতে যেতেই সব তদন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চ আলো করে বসে থাকে। দেশের সোনার মেয়েদের যে শ্লীলতাহানি করে, সে টিকিট পায় বিজেপির। তাদের ২৪০ জন সাংসদের মধ্যে ৯৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ। মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রেও একই ছবি। কোন মুখে প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে কালা কানুন আর দুর্নীতি নিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন? হিম্মত থাকলে আগে এদের দল থেকে একস্পেল করে দেখান! চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের। কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়ছেন মোদি।
আরও পড়ুন-মোদিজি আসুন ক্ষতি নেই, এসে বাংলার উন্নয়ন দেখে যান : চন্দ্রিমা
অনুপ্রবেশের দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর : কুণাল ঘোষ বলেন, মোদি তো অমিত শাহর উপর অনাস্থা দেখিয়ে গেলেন। উনি বলেছেন ঘুষপেটিয়া বাড়ছে। কী করে বাড়তে পারে? দেশের সীমান্ত যদি অরক্ষিত হয়, সীমান্তের দায়িত্ব কার? বিএসএফ। কোন দফতরের আয়তায়? স্বরাষ্ট দফতর। মন্ত্রী কে? অমিত শাহ। বাংলা সীমানা দিয়ে যদি দু’জন ঢোকে, ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে কুড়িজন ঢুকেছে। ধরা পড়েছে। ডবল ইঞ্জিন সরকার। যতগুলো অভিযোগ উনি ভিত্তিহীনভাবে তোলার চেষ্টা করেছেন, প্রত্যেকটা অভিযোগে বিজেপি নিজে অভিযুক্ত। কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়েছেন। আপনি যা যা অভিযোগ করেছেন তার প্রত্যেকটির উত্তর আমাদের কাছে রয়েছে। আপনার কাছে আমাদের যে প্রশ্নগুলি ছিল, একটিরও উত্তর আপনি দিতে পারেননি। কুণালের সংযোজন, যে প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এসেছেন তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী, তাঁর তৈরি করা। একবার অন্তত তাঁর নামটা বলা উচিত ছিল, বাংলার ঘরের মেয়ে তিনি। মেট্রো সম্প্রসারণের স্বপ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখেছিলেন। ভেবেছেন, টাকা বরাদ্দ করেছেন আপনারা! এত দেরি করেছেন যে! ভোটের আগে ফলকে নিজেদের নাম লেখাতে এসেছেন। যে মহিলা, যে নারী, বাংলার যে অভিভাবক কাজটি করে গিয়েছেন, এত বড় বড় প্রকল্প, আপনার তো নামটুক অন্তত উচ্চারণ করার সৌজন্য দেখানো উচিত ছিল।
দুর্গাপুজোর আবহ : মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাঁর আগের বক্তব্য খাতিজ করেছেন। উনি বললেন, কলকাতাতে এখন আনন্দের একটা পরিবেশ, দুর্গাপুজোর আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে। যেখানে বিজেপি বলেছে যে বাংলায় দুর্গাপুজো হয় না। করতে গেলে নাকি কোর্টে যেতে হয়! সেসব খারিজ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, এখন দুর্গাপুজোর সমস্ত প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। আনন্দ প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য এই আনন্দ হয় বাংলার মাটিতে। মনে রাখবেন মোদিজি।
বাংলার প্রাপ্য : বাংলার মানুষ উপহার চায় না, তিনি উপহারের কথা বলছেন। বাংলার মানুষ নিজেদের ন্যায্য প্রাপ্যটা চায়। যেটা এখনও পর্যন্ত বাকি। ১. ৯৩ লক্ষ কোটি টাকা। সেই টাকা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১২ লক্ষ বাড়ি তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন, বাকিটাও দিয়ে দেবেন। আপনার বক্তব্য হতাশার আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। মন্তব্য মন্ত্রী শশী পাঁজার।