প্রতিবেদন : কোন নৈতিকতার পাঠ শেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? এই নীতিকথা কোন বইতে লেখা আছে? দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের পাশে বসিয়ে আপনি দুর্নীতি দমনের কথা বলছেন! বলছেন দুর্নীতি দমন নতুন বিল আনার কথা। আর কত মিথ্যাচার করবেন, প্রধানমন্ত্রী?
আরও পড়ুন-ডায়মন্ড হারবারকে দ্রুত আইএসএলে চান বেনালি
গদ্দার অধিকারী থেকে হিমন্ত বিশ্বশর্মা, অজিত পাওয়ারের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের দলে নিয়েছেন। এখন নরেন্দ্র মোদি আপনি দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন? একবার তো ভাবুন, মঞ্চে আপনার পাশে কে বা কারা বসে আছেন? মোদির মুখে দুর্নীতি রুখতে বিলের কথা শুনে সাংবাদিক বৈঠকে গর্জে উঠেছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা ও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ছবি দেখিয়ে কুণাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়ছেন। যে সমস্ত অভিযোগ বিজেপি এবং মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে উঠছে, যে সমস্ত প্রশ্নের তিনি কোনও উত্তর দিতে পারেন না, সেইগুলোই তিনি বলছেন অন্যের দিকে আঙুল তুলে। হেমন্ত বিশ্বশর্মা থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ার, বাংলার তথাকথিত বিরোধী দলনেতা, যাঁদের বিরুদ্ধে বিজেপি অভিযোগ করেছিল, তাঁরা তদন্ত এড়াতে বিজেপিতে গিয়েছেন। এখন তাঁদের পাশে বসিয়ে নরেন্দ্র মোদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এ কেমন নৈতিকতা! শুনে রাখুন মোদিজি, বাংলায় আপনি যতবার আসবেন, সেই অনুপাতে বাংলায় তৃণমূলের আসনসংখ্যা বাড়বে। আমরা ২০১৬ সালে দেখেছি, ২০২১ সালে দেখেছি, আবকি বার ২০০ পার স্লোগান। ২০২৪ সালেও তৃণমূল বেড়ে গিয়েছে, বিজেপি কমে গিয়েছে। ২০২৬-এও চতুর্থবার বিপুল আসনে জিতে ক্ষমতায় আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখে রাখুন।
প্রধানমন্ত্রী, আপনি বাংলায় এসে দুর্নীতিগ্রস্তকে পাশে বসিয়ে দুর্নীতি দমনের কথা বলছেন? বাংলার এই তথাকথিত বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে নারদকাণ্ডে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সারদা মামলাতেও তিনি অভিযুক্ত। খোদ সুদীপ্ত সেন তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করেছেন। তারপর তিনি বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে সাধু হয়েছেন। তেমনই মহারাষ্ট্রের অজিত পাওয়ার। তাঁর বিরুদ্ধেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ তুলেছিলেন আপনারাই। এখন তাঁকেও আপনি সঙ্গী করেছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তাঁর বিরুদ্ধেও সারদা-কাণ্ডে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ। তাঁকেও বরণ করে নিয়েছেন দলে। আর এদিন মঞ্চে যাঁকে আপনি পাশে বসিয়েছিলেন, সেই রবনীত সিং বিট্টু নারী-নির্যাতনে অভিযুক্ত। আবার ব্রিজভূষণ, যাঁকে আপনি দেশের প্রতিনিধি করে অপারেশন সিঁদুরের প্রচারে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেও মহিলা খেলোয়াড়দের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ রয়েছে। তাই আপনার মুখে দুর্নীতি বা নারীর সম্মান রক্ষার কথা মানায় না।
আপনি দুর্নীতি দমনে বিল আনার কথা বলছেন, আপনার নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তো ভূরি ভূরি অভিযোগ। ৯৪ জন সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যার মধ্যে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, আপনার দল দুর্নীতির তদন্তে থাকা ২৫ জন বিরোধী নেতাকে দলে ভিড়িয়েছে, যার মধ্যে ২৩ জনকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। আপনার মন্ত্রিসভায় ২৮ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অপহরণ ও নারী নির্যাতনের মতো অভিযোগ রয়েছে। আপনার খাঁচাবন্দি তোতাপাখি ইডি গত এক দশকে ৫,৮৯২টি মামলার মধ্যে মাত্র ৮টিতে দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছে। বিজেপি আসলে ই-টু নীতি চালায়। প্রথম ‘ই’ হল নির্বাচন কমিশনকে অপব্যবহার করে ভোটারদের অধিকার হরণ করা। যদি প্রথম ‘ই’ ব্যর্থ হয়, তখন দ্বিতীয় ‘ই’ অর্থাৎ ইডি-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল দুর্নীতি দূর করার জন্য নয়, আসলে এটি বিরোধীদের নির্মূল করার একটি প্রচেষ্টা। আর বিজেপি ক্লান্তিকর এবং চেনা সূত্রে এগিয়ে চলেছে। এক, ইডি ও সিবিআই একজন বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করবে। দুই, সেই নেতা তারপর বিজেপিতে যোগদান করবে। তিন, বিজেপিতে যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে। ওয়াশিং মেশিনে সব দুর্নীতি ধুয়ে সাফ হয়ে যাবে।