ভোট চোরদের সরকার আর নেই দরকার

ভোট চোর ফ্যাসিস্ট মোদি সরকারের জন গর্জন এখন দেশের কোনায় কোনায়। প্রজ্বলন্ত প্রহর অপেক্ষমাণ কখন মোদির বিদায় পর্ব সমাধা হবে। সম্ভবায়িত আগামী তির তির করে কাঁপছে। লিখছেন পার্থ সারথি গুহ

Must read

বাদল অধিবেশনের শেষ লগ্নে আচমকাই ১৩০তম সংবিধান সংশোধনীর নামে যে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কালা বিল এনেছে মোদি সরকার তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। যার মধ্যে অগ্রণী অতিঅবশ্যই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূল সাংসদ তথা ভারতীয় রাজনীতির তরুণ তুর্কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জননেত্রীর নির্দেশে বাংলায় লেখায় প্ল্যাকার্ড সম্বলিত বিক্ষোভ-প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা।
কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিজেপিবিরোধী দলগুলির প্রতিবাদেও দিল্লির আকাশ-বাতাস মুখরিত। স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট ভোট চোরের তকমা পাওয়া মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে যে অগণতান্ত্রিক এসআইআর চাপিয়ে দিতে চাইছে মোদি সরকার তীব্র ক্ষোভের মুখে সেদিক থেকে নজর ঘোরাতে এই কালা বিল এনেছে বিজেপি।
মণ্ডল-কমণ্ডলুর জমানায় রাজীব গান্ধীকে যে বোফর্স গান্ধী বদনাম করা হয়েছিল তাতে বিজেপি তথা রাম এবং সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। মাঝে ছিল বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের জনতা দল। রাজীব গান্ধীর অপমান আজ বিজেপি-আরএসএসের দিকে ব্যুমেরাং হয়ে ফেরাচ্ছেন বর্তমানে লোকসভায় বিরোধী নেতা। সর্বতোভাবে সহায়তা করছেন সেসময়ে রাজীবের অত্যন্ত স্নেহধন্যা বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এও যেন ইতিহাসের এক চরম সন্ধিক্ষণ।
নেই কাজ তো খই ভাজের মতো হঠাৎ ৫০ বছর আগেকার জরুরি অবস্থা নিয়ে প্রোপাগান্ডা শুরু করেছিল কেন্দ্রের বিজেপি থুড়ি এনডিএ সরকার। হাবভাবটা এমন যেন ওরা ধোয়া তুলসীপাতা। বাকি সবাই বোকাহাবা।
আর কী কাণ্ড! ক’দিন যেতে না যেতেই দেখা গেল সাধু সাজা বিজেপি বকধার্মিকে পরিণত হয়েছে। হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়েছে বিজেপির ভোটচুরি। অবশ্য, ইভিএমের জারিজুরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অনেকদিন ধরেই সোচ্চার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোদি-শাহের নেতৃত্বাধীন ইভিএম কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে বারংবার প্রতিবাদ করেছেন। ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট ফেরানোর দাবি তুলেছেন তিনি। সেই দাবিতেই সিলমোহর দিয়ে বর্তমান কংগ্রেস নেতৃত্ব রীতিমতো প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মো-শা’র বিজেপি কীভাবে ভোট চুরি করেছে।
পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, ভোটচুরি ছাড়া কোনওভাবেই ২০২৪-এ দিল্লির কুর্সিতে বসতে পারত না বিজেপি। দুধে জল মেশানো এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে দুধের ‘দ’ টুকু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটাই হল ভোট চোর বিজেপির গণতন্ত্র।
এভাবেই বছরের পর বছর ধরে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিরুদ্ধাচারণকে অস্বীকার করে গদি আঁকড়ে রেখেছে বিজেপি।
সেদিক থেকে ভোট চোর মোদির কোনওভাবে প্রধানমন্ত্রী থাকার অধিকার নেই। নৈতিকভাবে তিনি কুর্সিতে বসার যোগ্যতা হারিয়েছেন। একইভাবে তাঁর মন্ত্রিসভাও অবৈধ। তৃণমূল সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়েও সরব হয়েছেন। মোদি সরকারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেছেন, ভোট চুরির দায় ঝেরে ফেলতে হিম্মত থাকলে লোকসভা বাতিল নতুন করে জনাদেশ নিক বিজেপি। বস্তুত, মোদিজি এবং তাঁর চল্লিশ চোরের স্যাঙাত এবার ঘরে-বাইরে চারদিক থেকে চাপে পড়েছে। ঠ্যালার নাম বাবাজি কাকে বলে বাপরে বাপ বলে মালুম পড়ছে ৫৬ ইঞ্চির। গণতন্ত্রের ষষ্ঠীপুজো করতে গিয়ে আজ ফ্যাসিবাদী হিটলারের প্রতীক হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদি। সঙ্গে দোসর মুসোলিনি ওরফে অমিত শাহ। ভোটচুরির অভিযোগ তামাম ভারতবাসী যেভাবে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছেন তাতে প্রমাদ গুনছেন মো-শাহ। কথায় বলে না, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। এবার সেই পাপাগ্নি ছুঁতে চলেছে দিল্লির দানবদের৷ বস্তুত, এদেশের ইতিহাসে যা কোনওদিন ঘটেনি অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান মো-শা’র বিরুদ্ধে সাধারণ ভারতবাসীর ক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এদের পরিস্থিতি না রোমানিয়ার স্বৈরাচারী চেসেস্কুর মতো হয়। এনিয়েও প্রশ্ন উঠছে ওয়াকিবহাল মহলে। তবে ভারত যেহেতু গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি চরমে চলে যাওয়ার আগে একটা হিল্লে নিশ্চয়ই হবে। তবে তাতে যেনতেন মূল্যে বিদায় নিতে হবে ভোট চোর মোদি অ্যন্ড হিজ টিমকে। এমনিতেই সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি মোদি সরকার। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার নামক দুটি ক্রাচে ভর দিয়ে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোদি। স্ট্যাটিসস্টিক্স বলছে, এনডিএ-র ভোট প্রাপ্তির হার মাত্র ৪৫ শতাংশ। আর বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হিসেব ধরলে সংখ্যাটা আরও অনেকটাই কম।
অর্থাৎ দেশের মানুষের একটা বড় অংশ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। পুরোপুরি অনৈতিকভাবে সরকার গড়েছেন মোদি। তার ওপর বিরোধীদের সাম্প্রতিক অভিযোগের সদুত্তর দিতে না পেরে বিজেপি সরকার নিজের অবৈধতার কফিনে শেষ পেরেকটা নিজেই ঠুকেছে। তাছাড়া চন্দ্রবাবু নাইড়ু এবং ‘পাল্টুরাম’ নীতীশ কুমারের ট্র্যাক রেকর্ড বলছে তাঁরা ঘন ঘন শিবির পাল্টেছেন। সেদিক থেকে দুটো সম্ভাবনা। প্রথমত, মোদি সরকারের পতন এবং দেশে অন্তর্বর্তী অকাল লোকসভা ভোট। নচেৎ ইন্ডিয়া জোটের সরকার। দুটো সম্ভাবনাই প্রবল। তবে এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, মোদিবাবুদের বিদায় আসন্ন। এমনকী ৭৫ বছর হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি যে ছাড়তে হবে এই সংক্রান্ত কঠোরবাণীও শুনিয়ে রেখেছে বিজেপির ধারক-বাহক গডফাদার বলে পরিচিত আরএসএস। যদিও আরএসএস-বিজেপির তু তু মে মে নিয়ে দেশের মানুষের কোনও কৌতূহল নেই। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, স্তালিন, কানিমোঝি, শরদ পাওয়ার, সুপ্রিয়া সুলেদের ওপর ভরসা করতে আরম্ভ করেছেন এবং মোদি সরকারের অবিলম্বে বিদায় চাইছেন। দেশের আম গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ টিম মোদির পিছনের রাস্তা দিয়ে সরকার গড়ায় ব্যাপক খেপে উঠেছেন। সত্যজিৎ রায়ের অমর চলচ্চিত্র হীরক রাজার দেশের মতো আওয়াজ উঠে গিয়েছে— দড়ি ধরে মারো টান, ভোট চোর মোদি খান খান। এভাবেই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা ভোট চোরের বিদায় নাটিকার প্রেক্ষাপট প্রস্তুত।

আরও পড়ুন-ছাত্র সমাবেশে এবারের থিম ভাষা-সন্ত্রাস ও বাংলা-বিদ্বেষ

Latest article