আজ পঁচিশে ডিসেম্বর আর কয়েক দিন বাদেই নিউ ইয়ার ইভ। পার্টি, সেলিব্রেশন, খানাপিনা চালু। শীত উৎসবের একটাই অনুষঙ্গ যা অন্য সবকিছু ছাপিয়ে যায় আর তা হল কেক। কেকের ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। প্রাচীন যুগের কেক ছিল খানিকটা পাউরুটির মতো। গবেষকদের মতে প্রাচীন মিশরে প্রথম কেক বানানোর কৌশল আবিষ্কৃত হয়। ‘কাকা’ নামক প্রাচীন নোরস (স্ক্যান্ডেনেভিয়ান) শব্দ থেকে কেক শব্দের উৎপত্তি। আধুনিক কেক তৈরি হয় সতেরো দশকের মাঝামাঝি। শীতমাসের কেক যদিও ফ্রুট কেক আর প্লাম কেক কিন্তু আধুনিক কেক হল যাতে আইসিং করা হয়। মধ্যযুগে ইউরোপের বেকারিতে ফ্রুটকেক এবং জিঞ্জার ব্রেড বানানো হত। ওই সময় প্রথম কাঠ বা ধাতুর বেকিং ট্রের ব্যবহার শুরু হয়। তখন চিনির গুঁড়ো ডিমের সাদা অংশ এবং সুগন্ধী দিয়ে কেক সাজানো হত। ১৮৪০ সালে বেকিং পাউডার আবিষ্কার হয় তখন কেক তৈরি অনেক সহজ হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের কেকের বিভিন্ন রূপ। তাঁদের নিজস্ব পরিচিত রয়েছে। বছরের বিশেষ কোনও সময় বা দিনে কেক খান এক-একটি দেশের মানুষেরা।
গ্যালেট দে রোইস (ফ্রান্স)
এই কেকের ইংরেজি নাম কিংস কেক। ফরাসিরা এই কেক খান ক্রিসমাসের ঠিক পরেই। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে দেখা মেলে কেকটির। পুরো জানুয়ারি জুড়েই ওদেশের মানুষ এই কেক খান। এই বাটারেই পাফ পেস্ট্রির ভিতরে থাকে ক্রিমের লেয়ার। বিনস এবং ফ্রাঙ্গিপান (আমন্ড মিল্ক ক্রিম)-এর ফিলিং দেওয়া টার্ট হল কিংস কেক। এই কেকের বাইরের লেয়ারটি দেখতে হয় টোস্টের মতো। একটা মুচমুচে লুক থাকে। উত্তর ফ্রান্সের ট্রাডিশনাল কেক এটি। একটা ছোট্ট সেরামিক বেবি যা কেকের ভিতরে দেওয়া থাকে ট্রাডিশন অনুযায়ী এবং সেটি সমেত বেক করা হয়।
রেভানি (তুরস্ক)
আরব দেশে বিশেষ করে তুরস্ক বাকলাভার জন্য খুব বিখ্যাত। এই বাকলাভা হল একধরনের মিষ্টি যেটা ড্রাই ফ্রুটস, লেয়ারড পেস্ট্রি আর মধু দিয়ে তৈরি হয়। তুরস্কের ট্রাডিশনাল মিষ্টি বা ডেজার্ট রয়েছে অনেক ধরনের। রেভানি হল তুরস্কের একটি বিশেষ কেক বা বলা যেতে পারে ক্লাসিক ডেজার্ট যার মূল উপাদানের মধ্যে রয়েছে সুজি, সামান্য লেবু আর অরেঞ্জ সিরাপ। এই কেকে ময়েশ্চার বা ভিজে ভাব অনেক বেশি হয়। অপূর্ব স্বাদের এই কেক ওটোমান সাম্রাজ্যর সময় থেকেই খুব জনপ্রিয় ছিল। সারাবছরই পাওয়া যায় এই কেক তবে রেভানি মূলত রামাদান, ইদের বা টি পার্টিতে খাবার বেশি চল রয়েছে।
মোচি (জাপান)
মোচি হল জাপানের জনপ্রিয় ট্র্যাডিশনাল রাইস কেক। এই কেক তৈরির মূল উপাদান জাপানিস ভাত মোচিগোমের পেস্ট । এই কেক জাপানিরা খান মোচিতসুকি নামক একটি উৎসবে। জাপানিস নিউইয়ার ইভেও এই কেক খাওয়া হয়। জাপানিস রাইস কেকের হরেক বৈচিত্র্য যেমন কিরিমোচি, কাকুমোচি, মারুমোচি। মোচি কেকের মধ্যে নানারকম পুরও ভরা থাকে। নানারকম রঙেরও হয়। সাধারণত চৌকো এবং গোলাকৃতি হয় মোচি কেক।
আরও পড়ুন-বড়দিনে বো ব্যারাকস
পাভলভা (নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া)
বিখ্যাত রাশিয়ান ডান্সার আনা পিভলভার নামানুসারে এই কেকের নাম হয় পাভলভা। আনা পাভলভা যখন এই দুটি দেশ ঘুরতে এসেছিলেন তখন তার আগমন উপলক্ষে এই কেক তৈরি হয়েছিল। এই কেকের উপরিভাগে ক্রিসপি এবং ক্রাস্টি ব্যাপার থাকে। কিন্তু ভিতরে খুব নরম, হালকা হয়। নানারকম ফল যেমন কিউইফ্রুট, প্যাশন ফ্রুট, স্ট্রবেরি এবং হুইপড ক্রিম দিয়ে গার্নিশিংই এর স্টাইল। মূল উপাদানের মধ্যে থাকে ডিমের সাদা, ক্যাস্টর শুগার, ভিনিগার বা লেবুর রস। অস্ট্রেলিয়ায় পাভলভা ক্রিসমাসের সময় খাওয়ার রীতি রয়েছে। ওই সময় এই কেক শুধুমাত্র স্ট্রবেরি দিয়েই গার্নিশিং করা হয়।
মাওয়া কেক (ভারত)
ভারতের ট্রাডিশনাল কেকের অন্যতম মাওয়া কেক। এর মূল উপাদান হল দুধ এবং খোয়াক্ষীর, ময়দা, মাখন, ক্রিম আর চিনি। দারচিনি, আমন্ড, কাজুতে ভরপুর এই কেক অপূর্ব স্বাদের হয়। খুব অল্প আঁচে দুধ জ্বাল দেওয়া হয়। ঘন দুধ আর ক্ষীরের সংমিশ্রণে তৈরি মাওয়া কেক এদেশের বিশেষত মুম্বইয়ে কিছু বিশেষ বিশেষ অকেশনেই তৈরি হয়। ডিম দিয়ে অথবা ডিম ছাড়া দুভাবেই হয় মাওয়া কেক। ডিমের পরিবর্তে দইও থাকে মাওয় কেকে।
চিকেনদুজা (আফ্রিকা)
আফ্রিকার ট্রাডিশনাল ডেজার্ট বা কেক চিকেনদুজা। মূলত জিম্বাবোয়েতে এই কেকের জন্ম। এই কেকের মূল উপাদানের মধ্যে থাকে ময়দা, দুধ, ভ্যানিলা, ডিম, পাউডার শুগার, রেড কালার ইত্যাদি। এই ক্যান্ডি কেক মাফিনের ডবল সাইজ। এর উপর পিঙ্ক আইসিং করা হয় পাউডার শুগার দিয়ে।
ডান্ডি কেক (স্কটল্যান্ড)
ডান্ডি কেক হল ট্রাডিশনাল স্কটিশ লাইট ফ্রুট কেক। এর আসল উপাদান হল কিশমিশ, ব্ল্যাক কারেন্ট, আমন্ড ও নানারকম চেরি। স্কটিশ হুইস্কি দেওয়া হয় কেকে। খুব হালকা অথচ রিচ ফ্লেভার সমৃদ্ধ এই কেক খুব ময়েশ্চারে পরিপূর্ণ থাকে। তবে এই কেকের ড্রাই ফ্রুটকে অ্যালকোহলে ভিজিয়ে রাখতে হয় না।
পাশকা চিজ কেক (রাশিয়া)
রাশিয়ার এই কেক মূলত ইস্টারের সময় খাওয়ার নিয়ম ওদেশে। এই কেকটির রং সাদা যা যিশুর পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে মানা হয়। এটি নো বেকড চিজ কেক। পাইন্যাপল, জেলি বিন দিয়ে গার্নিশ করা হয়। এর আকার পিরামিডের মতো হয়। ইস্টার ব্রেডের সঙ্গেই পরিবেশিত হয় পাশকা। এই কেকে মূল উপাদানের মধ্যে থাকে ডিম, মাখন, সাওয়ার ক্রিম, আমন্ড, কিশমিশ ও নানাধরনের ড্রাই ফ্রুট।