টিএমসিপি ছাত্রসমাজের হৃৎস্পন্দন

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাদিবস মানেই সংগ্রামের নতুন অধ্যায়, স্বপ্নের নতুন প্রতিশ্রুতি।

Must read

তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য: তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাদিবস মানেই সংগ্রামের নতুন অধ্যায়, স্বপ্নের নতুন প্রতিশ্রুতি। বাংলার ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস যেমন গৌরবময়, তেমনি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের সংগঠনের ভূমিকা আরও গভীর, আরও তাৎপর্যপূর্ণ। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় বলেছেন, ছাত্ররাই পরিবর্তনের আসল দূত। তিনি নিজে ছাত্র আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছেন, ছাত্রদের হাতে হাত রেখে রাস্তায় নেমে লড়েছেন, আর সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে আজ মানুষের নেত্রী হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য, তাঁরই নেতৃত্বে গড়ে ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেই ঐতিহাসিক ধারারই অংশ আমরা।

আরও পড়ুন-প্রতিবাদের আগুনই হোক শিক্ষার আলো

সভাপতি হিসেবে আমি লক্ষ্য করেছি, বর্তমান নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা অনুপ্রেরিত হওয়ার চূড়ান্ত প্রবণতা, তাঁর আন্দোলনের মেজাজ, ধরন এবং প্রক্রিয়া আজও আমরা চেষ্টা করি মেনে চলার। একইভাবে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বাংলার ছাত্র-যুবদের বুকে সঞ্চার করেছেন চোখে চোখ রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার অফুরন্ত সাহস। সভা, মিছিল—সর্বত্রই অনুভব করেছি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সত্যি ছাত্র-ছাত্রীদের ‘এনার্জি’, তাঁর নেতৃত্ব বাংলায় ছাত্র রাজনীতিকে নতুন দিশা দেখিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবে সর্বদা দলনেত্রীর আদেশ পালন করবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, বন্ধুসম বহু ছাত্র-ছাত্রীর অবিরাম পরিশ্রম এবং সর্বদা প্রস্তুত কর্মীবল আমাকে সাহায্য করেছে সময়মতো আন্দোলনে নিয়োজিত হতে—সেটা বিজেপি সরকারের ওষুধের দাম বাড়ানো থেকে কলেজে-কলেজে অক্সফোর্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালীন উঠে আসা বিশৃঙ্খলতাকে নিন্দা করে আন্দোলন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পথে ছিল এবং আগামী দিনেও স্বমহিমায় থাকবে, এই বিশ্বাস রাখি। দিদির নির্দেশমতো আমরা আয়োজন করেছি ছাত্র রাজনীতির জেলাভিত্তিক কর্মশালা, প্রকাশিত হয়েছে বাংলার জাতীয়তাবাদী ছাত্র রাজনীতিকে কেন্দ্র করে বই ‘সাথী’। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের বিভিন্ন ছাত্রকেন্দ্রিক প্রকল্প যাতে সহজে ছাত্ররা পায়, সেই ব্যবস্থায় বদ্ধপরিকর থেকেছে আমাদের কর্মীরা। তাই নেত্রীর স্বপ্নের শাখা সংগঠন হিসেবে আমরা বাংলায় আজ ছাত্র রাজনীতির শ্রেষ্ঠ মঞ্চ।
আজ প্রতিষ্ঠাদিবসে যখন আমরা একত্রিত হই, তখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রামী পথচলা, ভেসে ওঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃঢ় নেতৃত্ব। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার ছাত্র-যুবদের বলেছেন, অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়ানো যাবে না। তাঁর কথাগুলো আমাদের জন্য শুধু বার্তা নয়, এগিয়ে চলার শপথ। তিনি যে বিশ্বাস ছাত্রদের মধ্যে জাগিয়েছেন তা হল সংগঠন মানেই মানুষের পাশে থাকা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। এই দর্শনেই আজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ রাজ্যের প্রতিটি কোণে, প্রতিটি ক্যাম্পাসে মানুষের হয়ে কথা বলছে, লড়াই করছে। বর্তমান সময়ে ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা কতটা তা আমরা প্রতিদিনই উপলব্ধি করছি। NEET পরীক্ষার দুর্নীতি, পেপার ফাঁস, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা—এ সবই আজকের ভারতের বাস্তবতা। কেন্দ্রের ব্যর্থতা, কেন্দ্রের অবহেলা ছাত্রসমাজের স্বপ্নকে ধ্বংস করছে। বাংলার ছাত্ররা, যারা নিজেদের যোগ্যতায় ভবিষ্যৎ গড়তে চায়, তারা বারবার অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। এই সময়েই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ রাজপথে নেমেছে, ভবিষ্যতেও নামবে, কারণ আমাদের লড়াই কেবল একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম নয়, আমাদের লড়াই ছাত্রসমাজের জীবন এবং ভবিষ্যৎ বাঁচানোর সংগ্রাম। বাংলার ছাত্র আন্দোলন শুধুমাত্র শিক্ষার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আজ গোটা সমাজের প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতো প্রকল্প দিয়ে ছাত্র সমাজকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ছাত্রদের জীবনমান বদলানো সম্ভব। আজ যখন কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য অর্থ আটকে রাখছে, যখন গ্রামীণ উন্নয়নের টাকা বন্ধ করে দিয়ে বাংলার মানুষকে শাস্তি দিতে চাইছে, তখন ছাত্রদের উপরও তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন থেমে যাচ্ছে, গবেষণার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র পরিষদ লড়াই চালাচ্ছে, কারণ আমরা জানি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই বাংলার মর্যাদা রক্ষা সম্ভব। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রজন্মের কাছে আশার প্রতীক। তাঁর নেতৃত্বে বাংলার ছাত্র-যুবরা বুঝতে পেরেছে কীভাবে একটি সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়ালে পরিবর্তন আনা যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ছাত্র আন্দোলন মানেই সাহস, ছাত্র আন্দোলন মানেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তাঁর এই দিকনির্দেশনা আমাদের শক্তি, আমাদের আত্মবিশ্বাস। তাঁর কথামতোই আজ আমরা রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে শপথ নিচ্ছি— অন্যায়কে রুখে দেব, বাংলার ছাত্র সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাব। প্রতিষ্ঠাদিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা কেবল একটি ছাত্র সংগঠনের কর্মী নই, আমরা বাংলার ভবিষ্যতের নির্মাতা। রাজনীতি মানেই ক্ষমতা দখল নয়, রাজনীতি মানেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই শিক্ষা দিয়েছেন আমাদের, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই লড়াইকে নতুন গতি দিয়েছেন। তাই আমরা জানি, যত বাধাই আসুক, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পিছিয়ে যাবে না। বাংলার ছাত্র সমাজের আশা, বাংলার মানুষের স্বপ্ন আমাদের পথকে আলোকিত করছে।

আরও পড়ুন-রাজনীতির শিকড় ছাত্রসমাজ

আজ আমরা প্রতিষ্ঠাদিবসে একটাই শপথ নিচ্ছি—ছাত্র আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করব, বাংলার প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর পাশে থাকব, বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করব, শিক্ষার অধিকার রক্ষা করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের অভিভাবক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পথপ্রদর্শক, আর বাংলার ছাত্রসমাজ আমাদের শক্তি। এই তিনের সমন্বয়েই গড়ে উঠবে নতুন পথ, নতুন দিশা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তাই কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি বাংলার ছাত্রসমাজের হৃদস্পন্দন। প্রতিষ্ঠাদিবস সেই হৃদস্পন্দনের নবায়ন, সেই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি যে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার প্রতিটি ছাত্রের অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাব, নত হব না, থামব না, লড়াই করে জিতব।

Latest article