ডাউকির হাতছানি

পর্যটকেদের (Tকাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মেঘালয়ের ডাউকি। অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নদীর নির্মলতা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলায় অবস্থিত ‘ডাউকি’। ছোট্ট একটি হিলস্টেশন। যেন এক স্বপ্নের জায়গা। রূপকথার মায়ারাজ্য। সাদাকালো মেঘ ভেসে বেড়ায় মাথার উপর। এই কারণে ডাউকিকে অনেকেই বলেন মেঘের দেশ। অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উমঙ্গট নদীর নির্মলতা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। নদীর জল এতই স্বচ্ছ যে, তলদেশ স্পষ্ট দেখা যায়। গত কয়েক বছরে জায়গাটা পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উমঙ্গট নদীর আরেক নাম ডাউকি নদী। খাসি এবং জয়ন্তিয়া অঞ্চল দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ডাউকি নদীতে নৌবিহার করেই সারাটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। তখন মনে হতে পারে যেন মহাশূন্যে ভাসছেন। কীভাবে যে দিন কেটে যাবে, বুঝতেই পারবেন না। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যেতে পারে চুপচাপ নদীর তীরে বসেও।

আরও পড়ুন-থাকছেন নেত্রী ও অভিষেক, শহরে পড়ুয়াদের ঢল, আঠাশের সমাবেশে ছাব্বিশের দিকনির্দেশ

আশেপাশে আছে আরও বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় অবস্থিত ছোট্টো গ্রাম মাওলিননং। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিলং থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ডাউকি থেকে খুব কাছে। সবথেকে বড় কথা, মাওলিং গ্রামে নারীদের বিশেষভাবে সম্মান জানানো হয়। আজও দেখা যায় মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। নির্দিষ্ট দূরত্বে পর পর বাঁশের তৈরি ডাস্টবিনে আবর্জনা জমা করা হয় এবং তা থেকে প্রস্তুত করা হয় জৈবসার। গ্রামে প্রবেশ করলে মনে হতে পারে বাস্তব জগতে নয়, যেন চিত্রশিল্পীর আঁকা কোনও ক্যানভাসে ঢুকে পড়েছেন। এতটাই সুন্দর, এতটাই নিখুঁত। মন ছুঁয়ে যাবে।
ডাউকি থেকে মাওলিননং যাওয়ার পথেই পড়ে রাওয়াই গ্রাম। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল রাবার গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি একটি সেতু। জানা যায়, প্রায় তিনশো বছর আগে খাসি আদিবাসীরা এই সেতুটি তৈরি করেন। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। জঙ্গলের ভিতরের নদী পারাপারের জন্য এই সেতু ব্যবহার করা হয়। পৌঁছানো যায় একটি সংক্ষিপ্ত ট্রেকের মধ্যে দিয়ে। অতিবৃষ্টিতে সেতুটি কখনও কখনও নষ্ট হয়ে যায়। তবে বৃষ্টি কমলে স্থানীয়রা হাত মিলিয়ে আবার তৈরি করে নেন। শুরু হয় পারাপার।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত জাফলং জিরো পয়েন্ট। এখানেই স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন উমঙ্গট নদী ভারতের সীমানা পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ডাউকি বাজার থেকে জাফলং জিরো পয়েন্ট দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। এখানকার রাস্তাঘাটে ভারতীয় সেনারা সবসময় পাহারা দেন। যদিও তাতে বেড়ানোর কোনও সমস্যা হয় না। ডাউকির অন্যতম আকর্ষণ হল ডাউকি-শ্নংপডেং সীমান্ত, যেটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বৈধ সীমান্ত। মন চাইলে পর্যটকরা শ্নংপডেং গ্রামেও যেতে পারেন। পারেন স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে। ডাউকি থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বড়হিল ঝরনা। জঙ্গলভর্তি পাহাড়, পরিষ্কার স্বচ্ছ জলের ঝরনা এখানকার সৌন্দর্যকে আরও মায়াবী করে তুলেছে। অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে খাসি পাহাড়, স্থানীয় বাজার এবং কাছাকাছি রেইনফরেস্ট।

আরও পড়ুন-ছাত্রনেত্রী মমতা

ডাউকি পরিদর্শনের সময়, পর্যটকদের কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি বৈধ আইডি প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে এবং একটি ভ্রমণ পারমিট সঙ্গে রাখতে হবে। সেইসঙ্গে যথাযথ পোশাক পরা এবং স্থানীয় রীতিনীতিকে সম্মান করাও গুরুত্বপূর্ণ। একজন স্থানীয় গাইড সঙ্গে রাখতে পারলে খুব ভাল হয়। এমন একজন, যিনি স্থানীয় সংস্কৃতি, বিশেষ জায়গাগুলো সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানেন এবং পর্যটকদের জানাতে পারবেন। নদী থেকে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত, দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য প্রচুর আকর্ষণ এবং আয়োজন রয়েছে। সবমিলিয়ে এই সময়ে বেড়ানোর আদর্শ জায়গা। হাতছানি দেয় ডাউকি? সপরিবার ঘুরে আসুন।

Latest article