পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি। বাঁধা হচ্ছে মণ্ডপ। তুমুল ব্যস্ততা মৃৎশিল্পীদের পাড়ায়। এরমধ্যে শরতের বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে বইয়ের গন্ধ। কলকাতার রবীন্দ্র সদন-নন্দন-বাংলা আকাদেমি প্রাঙ্গণে চলছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড আয়োজিত ‘শারদ বই পার্বণ’ (sharod boi parbon)। সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। ভিড় জমাচ্ছেন বইপ্রেমীরা। শীতের মরশুমে বড় মাপের বইমেলা হয়। কলকাতা বইমেলা। আন্তর্জাতিক মানের। বিশাল আয়োজন। তবে পুজোর মুখে এই ছোট্ট বইমেলা ঘিরেও রয়েছে যথেষ্ট আগ্রহ, উৎসাহ, উন্মাদনা।
৩০ অগাস্ট, শনিবার, সন্ধ্যায় একতারা মুক্তমঞ্চে ‘শারদ বই পার্বণ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, শিবেন্দু ভট্টাচার্য, তাপস সাহা, শুভঙ্কর দে প্রমুখ। তাঁরা ঘুরে দেখেন বিভিন্ন স্টল। ঢাকের বোল তুলেছেন একদল মহিলা ঢাকি।
মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘বইয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাঙালির প্রাত্যহিকতার মধ্যে বই কোথাও আছে। প্রতি বছর পুজোর আগে এই বইমেলা হয়। এই মেলা সফল হবে।’
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘রবীন্দ্র সদন-চত্বর বাঙালির সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এমন একটি জায়গায় ছোট করে হলেও, একটা বইমেলা হচ্ছে দেখে ভাল লাগছে। পাঠকের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। এখন তরুণ লেখকরাও জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। সবাই আসুন। এই মেলাকে সফল করুন।’
আরও পড়ুন-বিপ্লব বেচে অর্থ উপার্জনের ফিকির বনাম ত্যাগব্রতী এক নেত্রীর নজির
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে জানালেন, ‘পাঠকের জন্য রকমারি বই নিয়ে হাজির নামীদামি প্রকাশকেরা। রয়েছে প্রায় ৬৩টি স্টল। কোনও কোনও স্টলে পাওয়া যাচ্ছে একাধিক প্রকাশন সংস্থার বই। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটকের বই যেমন আছে, তেমন আছে কবিতা, ছড়া, ভ্রমণ, রান্না ইত্যাদি বিষয়ের বই। ছাড় দেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ। নতুন বই যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনই বিক্রি হচ্ছে পুরোনো বই। মূল উদ্দেশ্য পুজোর মুখে পাঠকের হাতে সস্তায় বই তুলে দেওয়া। এখানে আগের মুদ্রণ বা সংস্করণের বই যেমন আছে, তেমনই আছে কিছু খুঁত ধরা বই, যেগুলো বইমেলা-ফেরত। বহু পাঠক এইসব বই কম দামে সংগ্রহ করেন। বৃষ্টিবাদল মাথায় প্রতি বছর এই বই পার্বণ সফল হয়। এবারেও সফল হবে।’
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানালেন, শারদ বইপার্বণের (sharod boi parbon) এবার দশ বছর। বাংলার প্রায় ৭০টি নামী প্রকাশন সংস্থা অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকটি স্টলে পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় স্তরের বেশকিছু ইংরেজি প্রকাশন সংস্থার বই। সবমিলিয়ে ১৫০-র বেশি প্রকাশন সংস্থার বই এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
আনন্দ পাবলিশার্স, আজকাল, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, দে’জ পাবলিশিং, পত্রভারতী, দেব সাহিত্য কুটীর, দীপ প্রকাশন, অবভাস, অভিযান পাবলিশার্স, অক্ষর পাবলিকেশনস, অনুষ্টুপ, অরণ্যমণ প্রকাশনী, বাণীশিল্প, বী বুকস, বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ, বিজল্প, বৈভাষিক প্রকাশনী, সপ্তর্ষি প্রকাশন, করুণা প্রকাশনী, শিশু সাহিত্য সংসদ, পারুল প্রকাশনী, জয়ঢাক প্রকাশন, প্রতিভাস, ঋত প্রকাশন, পরম্পরা প্রকাশন, শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ, রা প্রকাশন ও মুদ্রণ, উবুদশ, প্রমা প্রকাশনী, স্টার ওয়ার্ল্ড বুক সেন্টার, উডপেকার, ফ্যামিলি বুক শপ ইত্যাদি স্টলে চোখে পড়েছে ভিড়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিক্রি হচ্ছে ভালই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বইঘর স্টল ঘিরেও রয়েছে পাঠকের উৎসাহ। পাওয়া যাচ্ছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন আকাদেমি ও পর্ষদের বই। কোনও কোনও বইয়ের উপর দেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়। অনেকেই সংগ্রহ করছেন। আছে ভারত সরকারের পাবলিকেশন ডিভিশনের স্টলও। একটি স্টলে চোখে পড়ল বাংলাদেশের বইও।
প্রাঙ্গণ জুড়ে নরম স্বরে বেজেছে রবীন্দ্রগান। বড়দের হাত ধরে গুটি-গুটি পায়ে এসেছে ছোটরাও। কিনেছে ভূত, গোয়েন্দা, ছড়া। অটোগ্রাফ সংগ্রহের পাশাপাশি অতি-উৎসাহীরা বই কিনে সেলফি তুলেছেন প্রিয় লেখকের সঙ্গে। কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে বই বিক্রি করেছেন। সবমিলিয়ে আনন্দঘন পরিবেশ। আন্তরিক আয়োজন।
৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এবারের ‘শারদ বই পার্বণ’ (sharod boi parbon)। প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা। আজ রবিবার। মেলার দ্বিতীয় দিন। আশা করা যায়, শুরু থেকেই আছড়ে পড়বে বইপ্রেমীদের ঢেউ। —ছবি : শুভেন্দু চৌধুরী