প্রতিবেদন: মোদি জমানায় কর্মসংস্থানের বেহাল ছবি ধরা পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ক্ষেত্রেও। স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না, কাজের চাপ বাড়লেও কমছে কর্মীসংখ্যা। গ্রাহকদের পরিষেবা দিতে গিয়ে নাকাল হতে হচ্ছে। অন্যদিকে ঋণখেলাপিরা বিপুল টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালাচ্ছেন!
আরও পড়ুন-‘মায়ের টাকা-গয়না হাতাতে ভুয়ো মামলা’
গত তিন বছরে ভারতের বেশিরভাগ পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক তাদের শাখা সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখলেও ব্যাঙ্কে কর্মচারীর সংখ্যা বিপুলভাবে কমে গেছে। বিজেপি সরকারের আমলে কর্মহীনতার ছবি ধরা পড়ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেও। এই প্রবণতা ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলির মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কারণ এটি গ্রাহক পরিষেবা এবং কর্মীদের সুস্থতাকে একইসাথে প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, কানাড়া ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা এবং ইউকো ব্যাঙ্ক-এর মতো পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলিতে কর্মচারীর সংখ্যা কমেছে। অন্যদিকে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে কর্মী সংখ্যা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কর্মচারীর সংখ্যা ২০২৩ অর্থবর্ষে ৫২,৩৭৪ থেকে কমে ২০২৪ অর্থবর্ষে ৫০,৯৪৪ হয়েছে, এবং ২০২৫ অর্থবর্ষে তা আরও কমে ৫০,৫৬৪-তে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, কানাড়া ব্যাঙ্কে কর্মচারীর সংখ্যা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে, যা ২০২৩ অর্থবর্ষে ৮৪,৯৭৮ থেকে কমে ২০২৪ অর্থবর্ষে ৮২,৬৩৮ এবং ২০২৫ অর্থবর্ষে ৮১,২৬০ হয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ বরোদা তাদের কর্মী সংখ্যা কমিয়ে চলেছে। এখানে ২০২৩ অর্থবর্ষে ৭৬,৫১৩ থেকে ২০২৪ অর্থবর্ষে ৭৪,২২৭ এবং ২০২৫ অর্থবর্ষে আরও কমে ৭৩,৭৪২ হয়েছে। ইউকো ব্যাঙ্কের কর্মী সংখ্যা ২০২৩ অর্থবর্ষে ২১,৬৯৮ থেকে কমে ২০২৪ অর্থবর্ষে ২১,৪৫৬ এবং ২০২৫ অর্থবর্ষে ২১,০৪৯-এ নেমে এসেছে। অন্যদিকে, ভারতের বৃহত্তম পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক এসবিআইতে ২০২৩ অর্থবর্ষে ২,৩৫,৮৫৮ থেকে কমে ২০২৪ অর্থবর্ষে ২,৩২,৫৯৬ হওয়ার পর সামান্য পুনরুদ্ধার হয়েছে। যদিও তা যথেষ্ট নয়। কর্মীসংখ্যা কমলেও এই সমস্ত পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলির শাখা নেটওয়ার্ক ২০২৫ অর্থবর্ষে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কর্মীদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। গত কয়েক বছরে কর্মী সংখ্যা হ্রাসের বিষয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা কিছু শহরে প্রতিবাদও করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, কর্মীস্বল্পতা গ্রাহক পরিষেবা এবং কর্মীদের সুস্থতাকে প্রভাবিত করছে। একজন সিনিয়র ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা বলেছেন, এমন অনেক শাখা আছে যেখানে মাত্র দু’জন কর্মী কাজ করছেন। চরম ক্ষেত্রে, আমরা দেখেছি এক বা দুটি শাখা মাত্র তিনজন কর্মী নিয়ে চলছে। এই বিষয়টি সমাধান করা দরকার। ব্যাঙ্কগুলিতে কর্মীদের উপর কাজের বোঝা বাড়ছে, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং গ্রাহক পরিষেবার মান নষ্ট করছে। কর্মী ইউনিয়নগুলির বক্তব্য,
বর্তমান পরিস্থিতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে কর্মী ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক পরিষেবা এবং কর্মীদের সুস্থতা নিয়ে একটি বৃহত্তর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে আর্থিক লক্ষ্য পূরণের পাশাপাশি মানবিক দিকগুলির উপরও মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।