বিশ্বজয়ীর মা

সন্তান মানুষ করা যেমন মায়ের ধর্ম তেমনই মা-ই হন সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সেই জন্মদাত্রীর শিক্ষা, শ্রম কেউ মনে রাখে না। কিন্তু ছেলে যখন মানব থেকে মহামানব হয়ে ওঠেন তখন সেই মাকে স্মরণ করা অবশ্য-কর্তব্য। শিক্ষক দিবস দিনটিকে স্মরণে রেখে সেই মাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য যিনি এক দুরন্ত, জেদি অথচ দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত, মননশীল ছেলেকে তৈরি করে বিশ্বের দরবারে জাতির মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। তিনি বিশ্বজয়ী স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী। লিখলেন চৈতালী সিনহা

Must read

ভাগ্য মানুষের সঙ্গে থাকে। ভাগ্য মানুষকে ওঠায় বসায় হাসায় কাঁদায়। মাঝখানের বাকিটা সময় কর্মের নাম চেষ্টা। যে বালিকাটি দশ বছর বয়সে পিতৃগৃহ ছেড়ে স্বামীর ঘরে ঢোকে তার আর অতীত বলে কিছুই থাকে না। তবুও তিনি সিমলার নন্দলাল বসুর মেয়ে এইটুকু তথ্য সহজ লভ্য। ক্ষুদ্রকায় মানুষটিকে বৃদ্ধ বয়সে যাঁদের দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁরা জানেন সত্যি আভিজাত্যে তিনি ছিলেন সম্রাজ্ঞী। তাই তো বিশ্বজয়ী পুত্র নির্দ্বিধায় বলেছিলেন মা-ই তাঁর আধ্যাত্মিক এবং আত্মিক উন্নতির প্রথম পথ নির্দেশক।

আরও পড়ুন-ধরনায়-বিক্ষোভে উত্তাল ধর্মতলা চত্বর

১৮৪১ সালে কুলীন কায়স্থ বোস পরিবারে জন্ম। ছোটবেলায় মেমের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন আর সেই বিদ্যেটুকু স্মরণে রেখে ছেলেকে ইংলিশ পড়িয়েছেন, এমনকী পরবর্তী জীবনে পুত্রের বিদেশি শিষ্য ভক্তদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথাও বলেছেন! অথচ পিতৃগৃহে বিদ্যার্চনা করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র কয়েক বছর। নিতান্তই দশ বছর বয়সে সে-সবই ছেড়ে দত্ত পরিবারের বউ হয়ে এলেন। এর পর বাকি জীবন সেই খাঁচাতে বন্দি। আদরে ও ঐশ্বর্যে লালিত হওয়া মেয়েটির এর পরের জীবন দুঃখের ভারে আনত। ছয় কন্যা, চার পুত্রের জন্ম দেওয়া, অতি অল্প বয়সে বৈধব্য, অত্যন্ত দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই, সন্তানদের লালনপালন, ছোট অবস্থাতেই সন্তানের মৃত্যু, কন্যাদের আত্মহনন, পুত্রের সন্ন্যাস গ্রহণ— সব ঝড় এই মানুষটি মাথা পেতে নিয়েছিলেন। তাই তো তিনি পৌঁছতে পেরেছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। তিনি ভুবনেশ্বরী দেবী, তিনি বিশ্বজয়ী সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের মা। প্রদীপকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে আলোকিত করার এক পিলসুজ।
অনেক মানুষের অবদান,অনন্য কীর্তি সমাজে বিরাট এক পরিবর্তন আনে। মহান কাজের সে আলোকবর্তিকা যিনি জ্বালান তিনি বিশ্বে হন বন্দিত, নন্দিত। শুধু সেই আলোক শিখা জ্বালানোর জন্য, উচ্চে তোলার জন্য যাঁরা নিজেদের পিলসুজের মতো সমর্পণ করেন, সেই আলোক শিখায় জগৎ যখন হয় আলোকিত, পিলসুজের গা দিয়ে শ্রমের তেল গড়িয়ে পড়ে, পিলসুজ থাকে প্রদীপের ছায়ায়, অন্ধকার মেখে। শিবের কাছে মানত করে ছেলে পেয়েছিলেন, সে বড়ই দুরন্ত তাই মায়ের অভিমান শিব নিজে না এসে তাঁর ভূতকে পাঠিয়েছেন। এই ভাবেই এক দুরন্ত, জেদি অথচ দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত, মননশীল ছেলেকে তৈরি করে বিশ্বের দরবারে জাতির মুখ উজ্জ্বল করে তৈরি করতে জননীর শ্রম কেউ মনে রাখে না কারণ ছেলে মানুষ করা তো মায়ের ধর্ম। কিন্তু ছেলে যখন মানব থেকে মহামানব হয়ে ওঠে তখন সে জননীকে স্মরণ করা অবশ্য-কর্তব্য হয়ে ওঠে।
ভুবনেশ্বরী দেবী অতি সচ্ছল পরিবারের আদরের কন্যা, রীতিমতো লেখাপড়া শিখেছেন। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক রীতি অনুসারে বিয়ে হল দশ বছর বয়সে। পাত্র সিমলের দত্ত পরিবারের বিশ্বনাথ দত্ত। পেশায় হাইকোর্টের অ্যাটর্নি। কালনা শহরের কাছে এদের পৈতৃক ভিটা দত্ত দারিয়াটন। মালক্ষ্মী ব্যাগ ভরে ঢোকেন ঠিকই কিন্তু ব্যয় সংকোচ না হওয়ায় আর আত্মীয় পরিজনের সীমা না থাকায় আবার বাইরের দরজা দিয়ে বেরিয়েও যান। ফলস্বরূপ সঞ্চয়ের কোনও ভার নেই, যেমন আয়, তেমন ব্যয়।
ছোটবেলায় দুরন্ত বিলেকে মা সামলালেন একেবারে অন্য ভাবে। রেগে গেলে মাথায় জল ঢালতেন শিব শিব বলে— ঠান্ডা হত শিবের প্রমথ। সে-ছেলে বিদেশি ভাষা পড়বে না, মা দায়িত্ব নিয়ে ছেলেকে ইংরেজি শেখালেন। ছেলে কোনও বিশেষ দুষ্টুমি করলে মা বকতেন না— কীর্তিটা কাগজে লিখে টাঙিয়ে দিতেন সবার চোখের সামনে।

আরও পড়ুন-৩৪ জন মানববোমা ৪০০ কেজি আরডিএক্স, মুম্বইয়ে ফের জঙ্গি হামলার হুমকি

বিবেকানন্দ ছিলেন সেবার মাধ্যমে ভক্তির এক আদর্শ। তিনি তাঁর সারা জীবন ধরে তাঁর মাকে জীবন্ত দেবী হিসেবে সেবা করেছিলেন, যা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর এক নতুন মাত্রা প্রকাশ করে, এই মানবিক দুঃখকষ্টের জগতের সাথে আবদ্ধ করার জন্য একটি অখণ্ড বন্ধন বজায় রেখেছিলেন : তাঁর মায়ের প্রতি তাঁর অনুরাগ— বিবেকানন্দ তাঁর মায়ের প্রতি চিরন্তন ভালবাসার অঙ্গীকার বজায় রেখেছিলেন। ভুবনেশ্বরী দেবী তাঁর পুত্রকে একজন বিচরণকারী সন্ন্যাসী, ত্রাণকর্তা এবং বিশ্ব শিক্ষক হিসেবে বিশ্বের কাছে উৎসর্গ করেছিলেন। ১৮৯৮ সালের ২২ নভেম্বর, স্বামীজি বেলুড় মঠ থেকে মহারাজা অজিত সিংকে লেখেন, ‘আমার বুকে সবসময় একটা বিরাট পাপ ঘুরপাক খায়, আর তা হল পৃথিবীর সেবা করার জন্য, দুঃখের সাথে আমি আমার মাকে অবহেলা করেছি। এখন আমার শেষ ইচ্ছা হল অন্তত কয়েক বছর ধরে আমার মায়ের সেবা করা এবং সেবা করা। আমি আমার মায়ের সাথে থাকতে চাই… এখন আমার শেষ ইচ্ছা হল আমার মায়ের সেবা করা’। তিনি মহারাজের কাছে মায়ের জন্য অর্থসাহায্য চান। ১৯০১ সালে মহারাজার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত স্বামীজির মায়ের কাছে এই মাসিক ভাতা নিয়মিত পাঠানো হত। যদিও তাঁর মৃত্যুর পরেও তিনি তা পেতেন কি না তা বিতর্কের বিষয়। সন্তান সর্বত্যাগী, সন্ন্যাসী, জগতের সেবাকার্যে নিয়োজিত। মায়ের দেখে সুখ, ছেলে বিশ্বনন্দিত। কিন্তু মাতৃ হৃদয়ের গোপন রক্তক্ষরণ গোপন থেকে যায়, মা স্বাচ্ছন্দ্য চান না, চান সন্তানসঙ্গ। খাওয়াপরার ব্যবস্থা করে পুত্র জানল, মায়ের প্রতি কর্তব্য করছে— মায়ের হৃদয়ের ব্যথার অবসান হল কি!
ভুবনেশ্বরী দেবী বিশাল পরিবারে ব্যতিক্রমী কর্ত্রী। তিনি তাঁর দুই বড় মেয়েকে বেথুন কলেজে এবং তাঁর দুই ছোট মেয়েকে রামবাগানের মিশন স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছিলেন। যোগেন্দ্রবালা বেথুন কলেজের অধ্যক্ষ মিস কামিনী সিলের কাছ থেকে ইংরেজি পড়াশোনা করেছিলেন। অধ্যাপক ম্যাকডোনাল্ডের স্ত্রী মিসেস ম্যাকডোনাল্ডও তাঁকে তাঁর বাড়িতে পড়াতে আসতেন।
তাঁর বিরল মহত্ত্ব এবং আত্মত্যাগের মনোভাবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে। ১৮৯১ সালে পঁচিশ বছর বয়সে সিমলা পাহাড়ে তাঁর মেয়ে যোগেন্দ্রবালার আত্মহত্যার পর তাঁর জামাতা পুনরায় বিবাহ করেন। নিজের আবেগকে উজ্জীবিত করে তিনি নতুন স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে গ্রহণ করেন এবং তাকে নিজের মেয়ের মতোই সম্মান করেন।
দত্ত পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য ১৮৬৭ সালে নবগোপাল মিত্র কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক হিন্দু মেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি জাতীয় গর্বকে উৎসাহিত এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিচালিত হয়েছিল। ভুবনেশ্বরী দেবীর কন্যারা তাঁদের হস্তশিল্পের নমুনা প্রদান করেছিলেন। এক বছর দুই সন্তান সর্বোচ্চ পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি পেয়েছিল— লাল মখমলের উপর জারি— সূচিকর্ম নকশা প্রদর্শনের জন্য মেয়ে হারামানি এবং জিমন্যাস্টিকসের জন্য ছেলে নরেন। ১৮৮০ সালে কলকাতায় ইউবার্ট প্রদর্শনীতে, তাঁর মেয়ে যোগেন্দ্রবালার পুঁতির মালা প্রদর্শনীও একটি পদক জিতেছিল।
কঠোর কর্তব্য পালনের মাঝেও স্বামীজির মা ইংরেজি শেখার জন্য সময় বের করে নিয়েছিলেন। ভগিনী নিবেদিতা এবং ভগিনী ক্রিস্টিনের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি তাঁদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। তিনি বাড়িতে তাঁর তিন ছেলেকে প্রাথমিক ইংরেজি শিক্ষা দিতেন। ইংরেজিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তিনি নৈতিক শিক্ষাও দিতেন। তিনি তাঁদের দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে, যত কষ্টই হোক না কেন, নৈতিক নীতিগুলি কখনই ত্যাগ করা উচিত নয়।
তিনি প্রতিদিন রামায়ণ ও মহাভারত থেকে পাঠ করার জন্য, সেই সময়ের বাংলা সাহিত্য পড়ার জন্য এবং বাংলা পদ রচনা করার জন্য সময় বের করতেন। তাঁর বাংলা হাতের লেখা ছিল অসাধারণ সুন্দর। তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য ধন্যবাদ, নরেন্দ্রনাথ তাঁর কোলে বসে মহাকাব্য এবং পুরাণ থেকে অনেক গল্প শিখেছিলেন। তিনি এই গল্পগুলির অনেকগুলি ভগিনী নিবেদিতার সাথে ভাগ করে নিয়েছিলেন, যিনি সেগুলি সংশোধন করেছিলেন এবং তাঁর নিজস্ব শৈলী দিয়ে সেগুলিকে অমর করে রেখেছিলেন তাঁর ক্র্যাডল টেলস অফ হিন্দুইজম বইটিতে।

আরও পড়ুন-খাদে গাড়ি উদ্ধার ৩ যাত্রী

প্রচণ্ড অভাব, নরেনের একটা কিছু কাজ হয়ে গেলে পরিবারটা বাঁচে। একদিন মা পুজো করে উঠতেই চান না, ছেলে রেগে যাচ্ছে। মা উঠতে চান না কারণ পুজোর শাড়িটা শতচ্ছিন্ন। শেষে মা বলেই ফেললেন একটা গরদের শাড়ির কথা। ছেলে নতমুখে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে— বেকার ছেলে, কোনও পয়সা নেই হাতে। মন খারাপ ভুলতে সোজা দক্ষিণেশ্বর। সেখানে দেখে ঠাকুর অপেক্ষা করছেন লরেনের জন্য, একথালা মিছরি আর একটা গরদের শাড়ি নিয়ে। ঠাকুরের দান দেখে নরেন চটে গেলেন, বাড়িতে ভাত নেই আর আপনি আমাকে মিছরি দিয়ে ভোলাচ্ছেন!! আর গরদের শাড়ি নিয়ে আমি কী করব? ঠাকুর বললেন, মাকে দিবি, আমি জানি তোর মায়ের শাড়িটা পুরনো হয়ে গেছে। নরেন চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনি জানলেন কী করে? ঠাকুরের হাস্যময় উত্তর, আমার মা বলেছে। কিন্তু নরেন তেজোদীপ্ত গলায় বলল, মায়ের জন্য আপনার ভিক্ষে নেব কেন, যখন নিজে পারব কিনে দেব। ঠাকুর লরেনের ফোঁস দেখে হেসেই অস্থির। পরে রামলালকে দিয়ে লুকিয়ে পাঠালেন— লরেন বাড়িতে না থাকলে তবেই মাকে দিতে বললেন। রামলাল সারা সকাল লুকিয়ে রইলেন বাড়ির সামনে, দুপুরে ছেলে বেরোলে মাকে দিলেন শাড়ি। মা ছেলের অমতে কিছুতেই নেবেন না সে শাড়ি এটা ঠাকুর জানতেন তাই রামলালকে সেভাবেই শিখিয়ে পাঠিয়েছিলেন। বিকেলে বাড়ি ফিরে মায়ের অঙ্গে নতুন গরদ দেখে নরেনের শিরদাঁড়ায় শিহরন খেলে গেল— গুরুকে চিনলেন আবারও।
ভুবনেশ্বরী দেবীর আর্থিক বঞ্চনা এবং মানসিক দুর্দশার এক সংকটময় সময়ে কনিষ্ঠ ভূপেন্দ্রনাথ ১৯০৩ সালে ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯০৭ সালে, বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন-এর মুখপত্র যুগান্তরের সম্পাদক হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। তাঁকে এক বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার পর তিনি মুক্তি পান। সিস্টার ক্রিস্টিনের পরামর্শ এবং আর্থিক সহায়তায়, মায়ের শেষ সম্বল কিছু গহনা নিয়ে তিনি একই দিনে কলকাতা ত্যাগ করেন। একসময় ডাঃ নীলরতন সরকারের বাড়িতে এক সমাবেশে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল যেখানে তাঁকে সম্মানসূচক একটি স্ক্রোল প্রদান করা হয়েছিল। তার উত্তরে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি তাঁর পুত্রকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন— ভূপেনের কাজ সবে শুরু হয়েছে। আমি তাকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি। জনসমক্ষে বার্তা দেওয়ার সময় মাতৃহৃদয়ের ক্ষত আড়াল করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি ভুবনেশ্বরী। স্বামীজির শেষ বছরগুলিতে তিনি চন্দ্রনাথ এবং পূর্ববঙ্গের অন্যান্য তীর্থস্থান পরিদর্শন করেছিলেন। পরে তিনিও কোনও সন্ন্যাসী বা ব্রহ্মচারীর সাথে তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন এবং একবার স্বামী ব্রহ্মানন্দের সাথে পুরীতে গিয়েছিলেন। স্বামীজি যখন বেলুড় মঠে থাকতেন, তখন তিনি মাঝে মাঝে সেখানে তাঁর সাথে দেখা করতে যেতেন। বুকে পাথর চেপে তিনি তাঁর মৃত পুত্রের পাশে ছিলেন। স্বামীজির ভাই-ভিক্ষুরা তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন এবং তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। তিনি তাঁদের নিজের পুত্র হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং প্রতি বছর স্বামীজির জন্মদিন উদযাপনে ১০ টাকা অনুদান দিতেন। একজন মাকে তাঁর পুত্রের মৃতদেহ দেখতে যে মনের জোর দরকার তাকে ঈশ্বর সেটা তাঁকে হয়তো দিয়েই পাঠিয়েছেন যেহেতু তিনিই এই চিত্রনাট্যের লেখক।

আরও পড়ুন-দেওয়াল ধসে মৃত্যু মা ও দুই মেয়ের, সাহায্য অভিষেকের

এক দীর্ঘ কর্মময় ও দুঃখময় জীবনের অবসান ঘটে ১৯১১ সালের জুলাই মাসে। জগদীশ্বর একের পর এক সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিয়ে গিয়েছিলেন ভুবনেশ্বরীর থেকে। চরম কষ্টেও সে পরীক্ষায় ‘পাশ’ করেছিলেন তিনি। সেই জন্যই তিনি হয়তো এই বাংলারই এক অজানা মহীয়সী নারী। মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন সিস্টার নিবেদিতা।
ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় স্বরাজ পত্রিকায় একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবীর তাতে লেখা ছিল— আমরা নরেন্দ্রর মাতার চিত্র দিলাম। নরেন্দ্রর মাতা রত্নগর্ভা। আহা, মায়ের ছবিখানি দেখো, দেখিলেই বুঝিতে পারিবে নরেন্দ্র মায়ের ছেলে বটে আর মাতা ছেলের মা বটে। এটিই ভুবনেশ্বরী দেবীর একমাত্র প্রকাশিত ছবি। সত্যিই তিনি রত্নগর্ভা, তিনি সর্বংসহা— তিনিই আদ্যাশক্তি ভুবনেশ্বরী।

Latest article