প্রতিবেদন : ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, তার আগেই ডিগবাজি খেলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। তার আগে দলের মধ্যেই মন্তব্যের জন্য কড়া ধমক খেলেন৷ কৃষি আইন সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে, নতুন চেহারায় আবার তা ফিরিয়ে আনা হবে, একথা বলার পরই দেশজুড়ে কড়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়৷ তীব্র ক্ষোভ জানায় তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি৷ ফের আন্দোলনের হুমকি দেয় কৃষক সংগঠনগুলি৷
বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে অভিযোগ তোলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আইন প্রত্যাহারের কথা বলে নাটক করেছেন৷ এরপরই টনক নড়ে বিজেপি নেতৃত্বের৷ পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে তোমরের মন্তব্য পরিস্থিতি ঘোরালো করে দিতে পারে বুঝে কৃষিমন্ত্রীকে দিয়ে প্রকাশ্যে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করানো হয়৷ দলের চাপে এবার নিজের কৃতকর্মের দায় কৃষিমন্ত্রী চাপান সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে। বললেন, কৃষি আইন নিয়ে আমার মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। বাতিল হওয়া তিন কৃষি আইন ফিরিয়ে আনা হতে পারে, এমন কোনও কথাই বলিনি। নতুন করে কৃষি আইন কার্যকর করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
আরও পড়ুন-বাঙালি কাঁকড়াদের একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বিজেপির পার্টি অফিস, ক্ষোভ বাবুল সুপ্রিয়র
উল্লেখ্য, শুক্রবার মহারাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, আপাতত তাঁরা কৃষি আইন নিয়ে পিছিয়ে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আগামী দিনে ফের এই আইন সামনে আনা হতে পারে। তোমরের এই মন্তব্য নিয়ে যথারীতি গোটা দেশে তৈরি হয় তীব্র চাঞ্চল্য। অনেকেই বলতে থাকেন, মোদি সরকার সময় ও সুযোগ পেলে ফের কৃষি আইন কার্যকর করবে। কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমরের ওই মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তৃণমূল সহ বিরোধী দলগুলি বলে, আগামী বছরের শুরুতে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন মিটে গেলেই সংশোধনী-সহ নতুন করে তিন কৃষি আইন কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে মোদি সরকারের।
আরও পড়ুন-লোকায়ুক্ত গঠনে কাল বৈঠক
তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক চাপ তো ছিলই, পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষক সংগঠনও নতুন করে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই খবর বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের গোচরে আসার পরেই কৃষিমন্ত্রীকে দিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল শুরু হয়৷
এরপরই ২৪ ঘণ্টা আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে মন্ত্রী বললেন, কৃষি আইন নিয়ে আমি এ ধরনের কোনও কথাই বলিনি। কৃষি আইন ফের সামনে আনা হবে, এটা তো একটা কল্পনা। আমি বলেছিলাম, সরকার স্বাধীনতার পর একটা বড়সড় পদক্ষেপ করেছিল। কৃষি ব্যবস্থায় একটা সংস্কার আনতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু ওই আইন যে যথেষ্ট ভাল ছিল সেটা আমরা সকলকে বোঝাতে পারিনি। বিশেষ করে যাদের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য এই আইন, তাদেরই আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু সংবাদমাধ্যম আমার এই মন্তব্যকে বিকৃত করেছে।
আরও পড়ুন-মা সারদার জন্মতিথিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধার্ঘ্য
উল্লেখ্য, তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছিল একাধিক কৃষক সংগঠন। সেই আন্দোলনের চাপে পড়ে গুরু নানকের জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী এই তিন আইন বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন। এরপর সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাশ করিয়ে আইন ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়৷ কিন্তু আইন প্রত্যাহারের পরেও কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরের মন্তব্য জল্পনা উসকে দেয় যে, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন মিটে গেলেই মোদি সরকার তিন কৃষি আইন সামনে আনতে পারে। ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত তোমর তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করলেন। যদিও নিজের বক্তব্যের দায় তিনি চাপিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে।