প্রতিবেদন : উপলক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান। আসলে বাম নেতৃত্বাধীন নেপাল সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ আর বেকারত্বের কারণে নেপালের জেন-জি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সোমবার থেকেই। প্রথমে সংসদ দখল। পাল্টা পুলিশের গুলিতে কম করে ২৩ জনের মৃত্যুতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মানুষ। রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান তুলেও কাজ হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্টপতির বাড়ি আক্রমণ। লাগানো হয় আগুন। প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে যান। কার্যত সেনা দখল নিয়েছে দেশের। দেশের অন্তর্বর্তী দায়িত্ব বালেন্দ্র শাহর হাতে যেতে পারে। আক্রান্ত দেশের অর্থমন্ত্রী, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী। নেপাল জুড়ে পালাবদলের দৃশ্য।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
মঙ্গলবার সকালে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডলের বাসভবনে আগুন লাগানো হয়৷ জ্বালানো হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বামনেতা প্রচণ্ড, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও টেলিমন্ত্রীর বাসভবনও৷ বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে বাঁচেনি নেপালি কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দেউবা ছাড়াও গগন থাপার বাড়ি৷ তাণ্ডব চলে পার্লামেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টে৷ রাস্তার সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় ক্ষিপ্ত জনতা লাথি-ঘুসি মারছে দেশের অর্থমন্ত্রী বিষ্ণপ্রসাদ পৌডলকে। বিদ্রোহীদের আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালাকান্ত খানালের স্ত্রী রবিলক্ষ্মী চিত্রকরের। প্রধানমন্ত্রী অলি নিরাপদে দেশছাড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েই হেলিকপ্টারে চড়ে কাঠমান্ডু ছাড়েন। সঙ্গে ছিলেন কয়েক জন মন্ত্রী। বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারেননি। কারণ সেখানেও ছিলল বিক্ষোভকারীরা। কোথায় গিয়েছেন সবটাই ধোঁয়াশা। প্রশ্ন হল, নেপালে বাম নেতৃত্বাধীন সরকরের পতন হয়েছে। আগামী দিনে নেপালের ভবিষ্যৎ কী? ফের রাজতন্ত্র, না গণতন্ত্র নাকি সেনাশাসন?
নেপালের সরকার-বিরোধী আন্দোলনে মুখ হয়ে উঠেছে ৩৬ বছরের সুদান গুরুং৷ সুদাং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালায়৷ তারপর সমাজসেবায় নামে৷ আর সেই করতে গিয়ে সরকার-বিরোধী আন্দোলনের মুখ৷ নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সুদাং সন্তানকে হারিয়েছিলেন। তারপর থেকেই অহিংস প্রতিরোধ শুরু। স্কুল ছাত্রদের এই আন্দোলনে নামতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। পুরোটাই সমাজ মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সরকার বন্ধ করে দিতেই বিক্ষোভ অগ্নিস্ফূলিঙ্গের আকার নেয়। দেশ জুড়ে স্লোগান কে পি চোর, গদি ছোড়৷ যত সময় যাচ্ছে হিংস্রতা বাড়ছে৷
নেপালের পরবর্তী নেতা কে? শোনা যাচ্ছে বালেন্দ্র শাহর নাম। কাঠমান্ডুর মেয়র। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স। তিনি সুরকার, কবি আবার র্যাপারও। গান গেয়ে অসাম্য দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন। ২০২২-এ নির্দল প্রার্থী হিসেবে কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচনে বিপুল জেতেন। নেপালের এই আন্দোলনে তিনিও যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু ২৮ বছরের ঊর্ধে কাউকেই অনুমতি দেওয়া হয়নি, তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বালেন্দ্র।
উত্তরবঙ্গের সীমান্তের সঙ্গে নেপাল যুক্ত। তাই হিমালয়ের দেশের আঁচ যাতে পশ্চিমবঙ্গে না পড়ে তাই শিলিগুড়-নিকটবর্তী পানিট্যাঙ্কি এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ দার্জিলিংয়ের এসপি ও নর্থবেঙ্গলের আইজির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ডিজির৷