পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সুদূর ভেনিস— খুব মৃসণ ছিল না সেই পথ। সেই পথ পেরিয়ে ৮২তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিলেন বঙ্গতনয়া অনুপর্ণা রায় (Anuparna Roy)। ইতিহাস গড়লেন তিনি। অনুপর্ণা তাঁর পরিচালিত ছবি ‘দ্য সঙস অফ ফরগটেন ট্রিজ’-এর জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের নারায়ণপুর গ্রামের মেয়ে অনুপর্ণার হাত ধরে বিদেশের মাটিতে বাংলা তথা বাঙালির জয়জয়কার। গত ২৭ অগাস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইতালিতে অনুষ্ঠিত হয় ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব। সেখানে গোটা বিশ্বের মোট ৪ হাজার ৫৮০টি ছবি জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ২১টি ছবিকে মূল প্রতিযোগিতার জন্য বেছে নেওয়া হয়। সেখানকার ‘অরিজোন্তি’ (Orrizonti) বিভাগে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন অনুপর্ণা। অনুপর্ণাই প্রথম যিনি এই বিভাগে সেরা ভারতীয় পরিচালক হিসেবে পুরস্কারটি পেলেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ ইংরেজির স্নাতক অনুপর্ণা (Anuparna Roy) প্রথম জীবনে ছিলেন একজন কর্পোরেট কর্মী। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার সরবড়ি গ্রামের কাছে নারায়ণপুরে জন্ম তাঁর। নিতুড়িয়ার রানিপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন অনুপর্ণা। বাবা ব্রহ্মানন্দ রায় কয়লাখনিতে চাকরি করতেন। সেই সূত্র ধরেই মাধ্যমিকের পরে পড়াশোনার জন্য দুর্গাপুরে চলে যান তিনি। কুলটি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন। এর পরে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য পাড়ি দেন দিল্লি। পরবর্তীতে দিল্লিও মুম্বইয়ে কর্পোরেট সেক্টরে চাকরি করেন। যদিও চলচ্চিত্র জগতের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ ছিল তাঁর। সেই আকর্ষণেই অনুপম খের-এর অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। মুম্বইয়ে থাকাকালীন বিভিন্ন অভিনয় ওয়র্কশপে অংশও নিতেন অনুপর্ণা। ২০২৩ সালে ‘রান টু দ্য রিভার’ নামক শর্ট ফিল্মের সহকারী পরিচালক হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু হয়। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘সঙস অফ ফরগটেন ট্রিজ’। এই ছবি মুম্বইয়ে বসবাসকারী দুই অভিবাসী নারীর থুয়া এবং শ্বেতার জীবনসংগ্রামের গল্প শোনায়। তাঁদের শহুরে জীবন, বন্ধুত্ব এবং জীবনযুদ্ধ, নীরব প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাবার কাহিনি যেন অনুপর্ণার নিজের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতির প্রতিফলন। এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজ শেখ, সুমি বাঘেল প্রমুখ। এই যাত্রাপথে তিনি প্রতিমুহূর্তে পাশে পেয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপকে। পুরস্কার গ্রহণের দিন সাদা শাড়িতে বাঙালিয়ানা সাজে মঞ্চে ওঠেন অনুপর্ণা। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন ফরাসি পরিচালক জুলিয়া ডুকর্নাউ।