এসএসসি’র প্রথম দফা নির্বিঘ্নে, শান্তি নেই চিল-শকুনের

প্রথম দফার পরীক্ষা নির্বিঘ্নে, দ্বিতীয় দফা কাল। প্রতিকূলতার আবহে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধ চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতি এবং সার্বিকভাবে বাংলার স্কুলশিক্ষার প্রতি। অপপ্রচারের বেলুন চুপসিয়ে দিয়েছে ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি। এর পরেও বাজারি মিডিয়ার কুৎসা অব্যাহত। বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস কাগজে ও টিভির পর্দায়। সেসবে চোখ-কান না-দিয়ে দ্বিতীয় দফার পরীক্ষাও একইভাবে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার আবেদন জানিয়ে সামগ্রিক ছবিটা তুলে ধরছেন পার্থসারথি গুহ

Must read

রাজ্যে প্রতিবার নির্বাচনের আগে এ রাজ্যের হাঁসজারু জোট রাম-বামের অনেক রাম-পাম-পাম শোনা যায়। রাজ্যে নাকি গণতন্ত্র নেই। একদা সায়েন্টিফিক রিগিংয়ের জনক সিপিএম আর ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ভোট-চোরের অ্যাওয়ার্ড পেতে চলা মো-শা’র বিজেপির মুখে এ-কথা শুনে প্রয়াত জ্যোতিবাবুও হয়তো গোমড়া মুখ ছেড়ে খিল খিল করে হেসে উঠতেন। যারা সামান্য বুথে এজেন্ট বসাতে পারে না, তারা কিনা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এই হাতে-গরম অজুহাত খাড়া করে। তাদের আব্দার মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভোটকেন্দ্রগুলি মুড়ে দেওয়ার পরেও দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা ড্যাং ড্যাং করে জিতে চলেছেন৷ গত লোকসভা ভোটের আগে-পরে যে এগারোটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে তাতেও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। এতকিছুর পরেও ‘নাচ না জানলে উঠোন বাঁকা’র মতো বিরোধীদের মিথ্যে আস্ফালন লেগেই থাকে।

আরও পড়ুন-৫০০ বছরের ইতিহাস আঁকড়ে দুর্গা আরধনায় মাতে রাধিকাপুর

অতি-সম্প্রতি রাজ্যে এসএসসির পরীক্ষা নিয়েও কার্যত এমন গেল গেল রব তুলেছিল তারা। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে নির্বিঘ্ন-নিশ্চিন্তির আচ্ছাদনে রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা সম্পাদিত হল। রাজ্যের ৬৩৬টি কেন্দ্রে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকতার পরীক্ষায় বসলেন প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। পরীক্ষা হল নির্বিঘ্নে উৎসবের মেজাজে।
যাদের মধ্যে লক্ষণীয় ৩১ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী এসেছিলেন বিজেপির ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্য থেকে। যার আবার অধিকাংশ একদা মিডিয়ার কল্যাণে প্রায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাওয়া উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য থেকে। বাদবাকিরাও গোবলয়ের ডবল ইঞ্জিন ‘ধমাকা’র রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, বিহার থেকে। সবার মুখেই এক কথা যে তাদের রাজ্যে কোনও পরীক্ষাই সুষ্ঠুভাবে হয় না, নিয়মিত হয় না। পরীক্ষাকেন্দ্রে চিটিং, প্রশ্নপত্র ফাঁস, নেতা-পুলিশের জুলুম লেগেই থাকে৷ সেজন্যই গঙ্গা পেরিয়ে তারা চলে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসিত শান্তির রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে স্কুল শিক্ষকের চাকরি পেতে।
বলাবাহুল্য, পশ্চিমবঙ্গ ব্যতীত সারা দেশে পরীক্ষা একেবারে হইহই করে হয় এই সংক্রান্ত মিথ্যের বেলুন নিশ্চিতভাবে চুপসে গেল এইসব মন্তব্যে। যে বিজেপি দেশের সবথেকে বড় শিক্ষা-দুর্নীতি মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত তাদের মুখে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে অভিযোগ তোলা শুধু ধৃষ্টতাই নয়, হাস্যকরও বটে। বস্তুত, ব্যাপম কেলেঙ্কারি শুধু কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি নয়, নিমেষে জলজ্যান্ত বহু মানুষকে রীতিমতো খরচের খাতায় পাঠিয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদী মুখগুলো যে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছে তার নাম-ও-নিশান পর্যন্ত মেলেনি।

আরও পড়ুন-আত্মরক্ষায় আজকের দুর্গারা

বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরি দেওয়ার বিজেপি সরকারের জুমলাবাজি প্রতিশ্রুতি কার্যত ১৫ লক্ষ টাকা তামাম দেশবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকার মতো মিথ্যের ঢিবিতে পরিণত হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক মনীষা মুখোপাধ্যায়ের অন্তর্ধান ঘোর লাল জমানার শিক্ষা দুর্নীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক থেকে ইংরেজি তুলে দিয়ে প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়ামের রমরমা বাড়ানোর সঙ্গেও সিপিএম নেতাদের দুর্নীতির যোগ স্পষ্ট হয়েছিল অতীতে। ত্রিপুরাতেও বাম আমলের শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে চাকরি হারাতে হয়েছে ১০,৩২৩ জন ছাত্রছাত্রীকে। এহেন শিক্ষা-চোররা কিনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিল রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের এই পরীক্ষা।
মঞ্চ প্রস্তুত করে কুশীলবরা বেশ ঢাক গুড় গুড় করছিল। পুজোর বেশ কদিন আগেই ওদের অতৃপ্ত আত্মারা ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ এর টিউনিংয়ে মেতে উঠেছিল। এটাই তো ওদের প্রকৃতি। অবয়বে মানুষ হলেও অমানুষ বা অতৃপ্ত প্রেতাত্মার মতো বিষাদ আর নেতিবাচকতায় ভরপুর। টিভি চ্যানেলের ‘জনপ্রিয়’ খাপ পঞ্চায়েতে হঠাৎ যাত্রার বিয়োগান্তক সুর ভেসে আসছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে প্রতিপন্ন কজন সাজানো ভাঁড় তো রীতিমতো কুম্ভীরাশ্রু করছিল। মোটের ওপর এতদিনের সাজানো চিত্রনাট্য অনুযায়ী বাঘের সামনে ছাগল ঝুলিয়ে গাছের ওপর মাচা করে পজিশনটজিশন নেওয়াও কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের সত্তা ছেড়ে একেকজন যেন বীর শিকারি জিম করবেট।
এমতাবস্থায়, মানে প্রতিকূল পিচে এত নির্বিঘ্নে ম্যাচ মানে পরীক্ষা সম্পন্ন হল যে তাদের মাথায় পড়ল বাজ! মগডালের সাজানো মাচা থেকে সব হলদে-সবুজ ওরাংউটাংরা হল চিৎপটাং।

আরও পড়ুন-যাদবপুরে বারবার পড়ুয়ার মৃত্যু, উদাসীন কর্তৃপক্ষ, প্রতিবাদে টিএমসিপি

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন কোন পরীক্ষার কথা বলছি। এসএসসির যে পরীক্ষা নিয়ে দুনিয়ার প্রোপাগান্ডাকারীরা রে-রে করে নেমে পড়েছিল কাক-চিল-সহ যাবতীয় পক্ষীকূল তাদের সেই চাঁদপানা মুখে জোর পটি করে দিয়েছে। এতটা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা হয়েছে যে অহেতুক হেডলাইন বানানোর তাগিদ থাকা গদি মিডিয়া গো-হারান হেরেছে। অন্যদিকে, টিভি খুললে যে চ্যানেলের চিল-চিৎকারে কোনও বাড়িতে কাকপক্ষী বসতে পারে না, সেখানেও শ্মশানের নিস্তব্ধতা। প্রিয়জন বিয়োগের এ যে বড় ব্যথা। যে রাজ্যে থাকি, যার সব পরিষেবা চেটেপুটে খাই তার গুণ গাওয়া যে স্বভাববিরুদ্ধ। ওই দিল্লির দানবরা রেগে যাবে যে! অগত্যা ছলের যেমন খলের অভাব হয় না, তেমনই নতুন করে প্যাঁচপয়জারে নেমে পড়া। এই তো জীবন কালীদা। যে ডালে (পড়ুন রাজ্যে) বসে সেই ডালটাই কাটি কালিদাসের মতো আহাম্মকের অহংকারে। ঘরশত্রু বিভীষণ হতে হবে তো। কিংবা মিরজাফর। গৈরিক গোয়েবলসরা তো নিদান দিয়েই রেখেছে ‘সুনার বঙ্গাল’ দখল করতে হবে। সেজন্য আপাত কমেডিয়ানকে হিরো সাজালেও চাপ নেই। প্রতিবেশী দেশের হিরো আলমের মতো কেস আর কী! কেস না বলে জন্ডিস বলাই ভাল। তা বলাবাহুল্য, এত আয়োজন হইল পণ্ড। পন্ড বা পুকুরে ফের নাকানিচোবানি খেতে হল বেইমান বাঙালি বিদ্বেষীদের। ঘরের শত্রুদের তো আরও নাজেহাল অবস্থা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নযজ্ঞ তো রাজ্য-দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চ তথা রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পেয়েছে বারংবার। প্রশাসনের প্রধান হিসেবে কতটা দক্ষতার সঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা তাঁর রাজ্যে সম্পাদিত হয় তাও ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন বিজেপি-আরএসএসের ঢক্কানিনাদ করা গোমূর্খদের। বস্তুত, সারা দেশের নিরিখে এভাবে এসএসএসির পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়াও বিশাল ব্যাপার।

Latest article