বাঙালিরা যেখানে, দুর্গাপুজো সেখানে। তা সে বাংলার বাইরেই হোক বা দেশের বাইরে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন বহু বাঙালি। মূলত পড়াশোনা ও কাজের সূত্রে। সারাবছর তুমুল ব্যস্ততা। তার মধ্যেও শরৎকালে মেতে ওঠেন দুর্গাপুজোয়। দেবী আরাধনার পাশাপাশি আয়োজিত হয় জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা। এইভাবেই আজ দুর্গাপুজো হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। ঘরোয়া পরিবেশের পুজোগুলো হয়তো ততটা আড়ম্বরপূর্ণ নয়, তবে তাতে লেগে থাকে আন্তরিকতার ছোঁয়া। বিদেশের দুর্গাপুজো ঠিক কীভাবে হয়, কয়েকজন প্রবাসী বাঙালির সঙ্গে কথা বলে জেনে নিলাম।
লস অ্যাঞ্জেলেসের শারদোৎসব
বহু বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে আছেন কল্লোল চট্টোপাধ্যায়। আগে থাকতেন সানফ্রান্সিসকোয়। কথা হল তাঁর সঙ্গে। এই দুই শহরের দুর্গাপুজো সম্পর্কে তিনি জানালেন, দুই জায়গাতেই সাড়ম্বরে দুর্গাপুজো হয়। এখানকার পুজো কলকাতার পুজো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ভিড়ভাট্টা নেই, থিম নেই। পুরোপুরি ঘরোয়া। সাতের দশকে সানফ্রান্সিসকোয় প্রবাসী-র দুর্গাপুজোয় ১০০-১৫০ লোক হত। এখন অনেকটাই বেড়েছে। বেড়েছে পুজোর সংখ্যাও। ১২টার মতো পুজো হয়। ক্যালিফোর্নিয়াতেও আগের তুলনায় পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিটা পুজোয় গড়ে ৫০০-৬০০ লোকজন হয়।
পুজোর পাশাপাশি আর কিছু হয়? জানালেন, জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আগে স্থানীয় শিল্পীরাই অংশগ্রহণ করতেন। এখন আসেন কিছু কিছু কলকাতার শিল্পী। এসেছেন হৈমন্তী শুক্লা, অপর্ণা সেন-সহ অনেকেই। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সিতেও পুজো হয় জমজমাটভাবে। কল্লোল গ্রুপের পুজোর খুব নাম। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুজোর আয়োজন করা হয়।
কলকাতায় যখন দিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তখন রাত। ফলে সবসময় দিন বা সময় মেনে পুজো করা সম্ভব হয় না। তাহলে কীভাবে হয় পুজো? তিনি জানালেন, পুজো আয়োজিত হয় মূলত উইক-এন্ডে। শুক্রবার শুরু। রবিবার পর্যন্ত। প্রতিটা পুজোই আয়োজিত হয় নিষ্ঠার সঙ্গে।
আমি একটা সময় বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন ক্যালিফোর্নিয়ার সভাপতি ছিলাম। আন্তরিকতার সঙ্গে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছি। পুজোর পাশাপাশি অনুষ্ঠান তো হয়ই, সেইসঙ্গে হয় খাওয়াদাওয়া, আড্ডা। বসে দোকান। পাওয়া যায় রকমারি জিনিস। প্রসাদ দেওয়া হয় সবাইকেই।
কোথা থেকে ঠাকুর আসে? জানালেন, ঠাকুর আসে কলকাতার কুমোরটুলি অথবা কালীঘাট পোটোপাড়া থেকে। একটা প্রতিমা বেশ কয়েক বছর রেখে দেওয়া হয়। আগে প্রতিমা হত ছোট। এখন তুলনায় বড় হয়েছে। পুজোর আয়োজন করেন মূলত প্রবাসী বাঙালিরা। তবে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতের অন্য প্রদেশের লোকেরাও আসেন। আসেন আমেরিকার বহু মানুষ। শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে মহামিলন ঘটে। কেউ কেউ অন্যান্য পুজোও দেখতে যান। আমরাও যাই। পুজোর সময় এখানে হালকা শীত পড়ে। সবমিলিয়ে দারুণ লাগে।
আরও পড়ুন-দিদির জন্যই সম্মানিত বাংলার মেয়েরা, খড়্গপুরে ভিড়ে ঠাসা কর্মিসভায় চন্দ্রিমা
দুর্গোৎসবে মাতে আটলান্টিক সিটি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দুর্গাপুজোয় ভারতীয় বাঙালিদের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বাঙালিরাও। বহুবছর নিউজার্সিতে আছেন সুব্রত চৌধুরী। কীভাবে এই শহরে দুর্গাপুজো আয়োজিত হয়? জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, শারদোৎসবের বার্তা নিউজার্সি রাজ্যের আটলান্টিক সিটির প্রবাসী বাঙালি হিন্দুরা মেতে ওঠেন হরেক আয়োজনে। এই শহরে প্রবাসী হিন্দুদের উদ্যোুগে শ্রীশ্রী গীতা সংঘ মন্দিরে এই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। চলবে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। তিথিমতে পুজোর যাবতীয় শাস্ত্রীয় কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা হবে। মণ্ডপে শোভা পাবে ফাইবারের দুর্গাপ্রতিমা। প্রতি বছর একই প্রতিমা দিয়ে পুজো করা হয়।
শহরে পুজোর সূচনা হয়েছিল কোন বছর? জানালেন, আটলান্টিক সিটিতে ২০০৮ সালে সর্বপ্রথম সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। তবে আটলান্টিক কাউন্টির প্রবাসী বাঙালি হিন্দুদের উদ্যোগে এগ হারবার শহরের ৫৭১, দক্ষিণ পোমনাতে অবস্থিত বৈকুণ্ঠ হিন্দু জৈন মন্দিরে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী সার্বজনীন দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সাল থেকে আটলান্টিক সিটির ১০৯, উত্তর ফ্লোরিডা অ্যাভিনিউস্থ শ্রীশ্রী গীতা সংঘ মন্দির প্রাঙ্গণে তিথি অনুযায়ী পাঁচদিনের দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়াও জাগরণী কালচারাল সোসাইটি ইনক-এর উদ্যোগে বৈকুণ্ঠ হিন্দু জৈন মন্দিরে দুদিন দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজনের মধ্যে কী কী থাকে? জানালেন, আয়োজনের মধ্যে থাকে পূজার্চনা, আরতি, প্রবাস প্রজন্মের সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা, সদস্য-সদস্যাদের পরিবেশনায় সংগীত অনুষ্ঠান, পুঁথি পাঠ, কীর্তন, সিঁদুর খেলা ও মহাপ্রসাদ বিতরণ। এবারেও তাই হবে। দুর্গোৎসবের শেষ দিন সিঁদুর খেলায় মেতে উঠবেন নারীরা। আশা করা যাচ্ছে বিগত বছরের মতো এবছরও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ আমাদের দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণ করবেন।
মেলবোর্নের দশভুজার আরাধনা
১৯৬১ সালে ছাত্র হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোুর্নের মাটিতে পা রেখেছেন প্রতীশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর বহু বছর ধরেই আছেন। দেখছেন এখাকার দুর্গাপুজো। কথা হল তাঁর সঙ্গে। তিনি জানালেন, ১৯৭৫-এর পর থেকে মেলবোের্নে বাঙালিরা বেশি আসতে শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে এই শহরে বাঙালি-স্ফীতি বেড়ে ওঠে। এখন মেলবোোর্নে বাঙালির সংখা প্রায় ২০ হাজার। ১৯৮৪ সালে মেলবোর্ন শহরে, বাঙালি অ্যাসোসিয়েসন অফ ভিক্টোরিয়া বা বিএভি নামে নতুন পরিচয়ে গড়ে ওঠে একটি নব-নির্মিত সংস্থা। তার দুই বছর পর, ১৯৮৬ সালে মেলবোর্নে প্রথম বারোয়ারি সরস্বতী পুজো হয়। দশভুজার আরাধনা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। ওই সময়ে পুজো করতেন ড. চিন্তামণি দাতার। তিনিই একদিন আমাকে ডেকে বলেন, তোমার গলায় পৈতে আছে তো? তারপর আমার গলার পৈতে দেখে, প্রীত হয়ে তিনিই আমার হাতে বিএভি-র দুর্গা পুজোর ভার সঁপে দেন। তাঁর কাছে আমার পুজোর হাতেখড়ি এবং প্রথম দুর্গাপুজো থেকে এখনও পর্যন্ত এই ৩৫ বছর, মাঝে দুই বছর ছাড়া, আমিই মেলবোধর্নের পুজো করেছি। সঙ্গে আরও আটজন উচ্চশিক্ষিতকেও পৌরোহিত্য-কর্মে যোগদানে অনুপ্রাণিত করেছি। বিএভি-র দুর্গা পুজোই মেলবোর্নের প্রথম পুজো।
এইবছর মেলবোির্নে কতগুলো দুর্গাপুজো হবে? তিনি জানালেন, ১১টি বারোয়ারি এবং ১০টির ওপর পারিবারিক পুজো হবে। ১১টি পুজোর মধ্যে বাংলাদেশের পুজো ৩টি। বারোয়ারি পুজোগুলো উইকএন্ডে হয়। পারিবারিক পুজোগুলো হয় পুজোর দিনেই। এখানে হলের অভাবের দরুন ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ অক্টোবার পর্যন্ত প্রতি উইক-এন্ডে পুজো হবে।
ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখার প্রচলন আছে? জানালেন, গত বছরের মত এই বছরও বিএভি-র কয়েকজন সদস্য বাসের বন্দোবস্ত করেছেন। এক দিন গাড়ি চালনা-বিমুখ মানুষদের বাসে করে স্থানীয় কয়েকটি পুজো প্রাঙ্গণ দর্শন করানো হবে।
নিয়ম মেনে পুজো হয়? কোথা থেকে আসে ঠাকুর? তিনি জানালেন, সব আচার ও নিয়ম মেনেই পুজো সম্পন্ন করা হয়, কিন্তু দেশ কাল পাত্র হিসেবে একটু বদল করতে হয়। যথা নবপত্রিকার ৯ রকম ডাল না পেলেও আমাদের একটি ছোনট কলা গাছ শাড়ি পরে গণেশের পাসে বসেন। পুজো দেবীপূরাণ মতেই করা হয়। শোলা ও ফাইবারগ্লাসের প্রতিমা কলকাতা থেকেই আসে। এখানে প্রতিমাকে জলে বির্সজন করা যায় না। আমরা দর্পণে বির্সজন করি। তাতে প্রতিমাটিকে বাড়তি কয়েক বছর ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়া যায়। পুজোর শনিবার ও রবিবার দুপুরে ভোগে খিচুড়ি, লাবড়া, চাটনি, মিষ্টি ও শনিবার রাত্রে ভোজ খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কয়েক দিন নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শাড়ি গয়নার দোকান, খাবার দোকান ইত্যাদি সবাইকে খুব ব্যস্ত রাখে। আনন্দের জোয়ার যেন ভাসতে থাকে।
পুজো মণ্ডপে বাঙালি ছাড়াও বহু অবাঙালি ও অস্ট্রেলিয়ানরাও আসেন। দারুণ কাটে দিনগুলো।
শেফিল্ডের দুর্গাপুজো
সাড়ম্বরে দুর্গাপুজো আয়োজিত হয় ইংলন্ডে। চিকিৎসক-সাহিত্যিক নবকুমার বসু কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে আছেন। কথা হল তাঁর সঙ্গে। এই দেশের দুর্গাপুজো সম্পর্কে তিনি জানালেন, প্রবাস তথা ইংল্যাগন্ডের দুর্গোৎসবের কথা উঠলে একসময় লন্ডনের নাম উল্লিখিত হত। তবে বহুধাবিভক্ত হয়ে এখন লন্ডনের সেই গরিমা আর নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে বিলেতে দুর্গাপুজো হিসেবে এদেশের উত্তরপূর্বে শেফিল্ড অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট দুর্গোৎসব অ্যান্ড কালচারাল কমিটির নামই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাড়ে তিন দশকের বেশি এই দুর্গাপুজো এখন সর্ব অর্থেই সর্বজনীন।
বাঙালিদের পাশাপাশি ব্রিটিশরাও পুজোয় অংশগ্রহণ করেন? তিনি জানালেন, উদ্যোক্তা বঙ্গসন্তানরা হলেও অন্যান্য প্রবাসী ভারতীয় এবং দেশীয় ব্রিটিশ বন্ধুরাও শেফিল্ড-এর পুজোয় নির্দ্বিধায় সম্পৃক্ত হন। যথারীতি নতুন প্রজন্ম এখন পুরনোদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে এবং বলতে দ্বিধা নেই, তাতে আমাদের এই পুজোর শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। নতুন উদ্যম, টেকনোলজির ব্যবহার এবং উদার মানসিকতায় নিজেদের আইডেন্টিটি খুঁজে নিতে বর্তমান কমিটি নিশ্চয়ই বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে।
দেখেছেন দেশের পুজো। এখন দেখছেন বিদেশের পুজো। কী তফাত চোখে পড়ে? তিনি বললেন, কয়েক বছর আগে দেশে পুজোর সময় গিয়ে জনারণ্যে হারিয়ে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের প্রবাসীদের শারদোৎসব সেই তুলনায় অনেক বেশি আন্তরিক, প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য। পুজো কমিটি প্রকাশিত শারদীয় পত্রিকা ‘কাশফুল’-এ বাংলা ইংরিজি উভয় ভাষাতেই অংশগ্রহণ করে সব বয়সের স্থানীয় বঙ্গসন্তানরা। মনে হতে পারে প্রবাসের পুজো বলেই হয়তো এখানে কিঞ্চিৎ জোড়াতালি দিয়ে কাজ সারা হয়। সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং এ-কথাই সত্যি যে, দেশের আড়ম্বরপূর্ণ জাঁকজমকের নিচেই আসল দুর্গাপুজো যেখানে হারিয়ে যেতে বসেছে, আমাদের এই প্রবাসের পুজো সেখানে অনেক বেশি শান্ত, স্নিগ্ধ, মাতৃপুজোর উদাহরণ হয়ে উঠেছে। আর সেই সনাতন পুজোর আবহ রচনার সমস্ত কৃতিত্বই দিতে হবে বর্তমান পুজো কমিটির দক্ষ সদস্যদের। পুরোহিত দিব্যেন্দু শুধু সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণ তাই না, প্রকৃতই একজন পরিশ্রমী নিষ্ঠাবান সেবক। তার সঙ্গেই এই পাঁচদিনের বিশাল কর্মকাণ্ড সামলানোর যে আত্মবিশ্বাসী পরিশ্রমী কমিটি, তাদের মধ্যে আছে প্রবাল, কৌস্তভ, সুবীর, সমুজ্জ্বল, অভিজিৎ, সুগত, সন্দীপ, ভিক্টর এবং প্রমীলাবাহিনীর মধ্যে বর্ণালী, সঙ্গীতা, ইন্দ্রিলা, মিষ্টি, সুদীপ্তা, রিমি, সুস্মিতা, অনিন্দিতা প্রমুখ। মনে রাখা দরকার শেফিল্ড তথা বার্নসলের এই দুর্গোৎসবে ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিদিন আনুষাঙ্গিক অন্যন্যব নিয়মনীতি অর্চনা অঞ্জলি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও দুবেলা পেটপুজোর আয়োজনও থাকে। থাকে সামাজিকতা, মেলামেশা, ধুনুচিনাচ, আরতি, নিবিড় সন্ধি পুজো ঢাকবাদ্যিঙ এবং অবশ্যই পুজোর সাজ, প্রবল আড্ডা এবং পুজোসংখ্যান নিয়ে নাড়াচাড়াও। সত্যি বলতে কি নস্টালজিয়া ব্যতিত, বিলেতের দুর্গাপুজোকেই ইদানীং মনে হয় স্বর্গের দেবী দুর্গা মর্ত্যের মেয়ে উমা হয়ে এখন আমাদের কাছে অনেক আপনরূপেণ সংস্থিতা। আর তার সমস্ত কৃতিত্বই কয়েকজন উদ্যয়মী পরিশ্রমী কৃতী এবং আন্তরিক যুবক-যুবতীর।
আরও পড়ুন-২৬৮ বছরে পড়ল কর্মকার বাড়ির পুজো
হেলসিংবর্গের দেবীবন্দনা
সুইডেনের বাঙালিরাও দেবীবন্দনায় মেতে ওঠেন। কর্মসূত্রে বেশ কয়েক বছর এই দেশে আছেন শীর্ষেন্দু সেন। কথা হল তাঁর সঙ্গে। তিনি জানালেন, সুইডেনের হেলসিংবর্গ শহরে আমাদের ‘সম্বন্ধ’ ক্লাবের উদ্যোগে দুর্গাপুজো আয়োজিত হয়। আমরা বাঙালিরা চূড়ান্ত উৎসবমুখী। সময় বলছে, কুমোরটুলির দিকে লরির চাকা গড়াবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। মাটি থেকেই জন্ম মায়ের। আমাদের পুজোর বিষয়ও তাই মাটি।
পুজোর আয়োজন সম্পর্কে তিনি জানালেন, তিন দিনের পুজো। প্রতিবছরেই একটা অক্লান্ত পরিশ্রম থাকে প্রস্তুতির। এই বছরেও সেটা চলছে। আমাদের পুজোয় চণ্ডীপাঠের একটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পূষণদা যখন উদাত্ত কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ করেন, তখন মনে হয় যেন কলকাতার কোনও প্যান্ডেলে বসে আছি। কুমারী পুজোও হয়। সুইডেনে লিঙ্গবৈষম্য সবচেয়ে কম। আমাদের এই কন্যা-আরাধনার নিগূঢ় তত্ত্ব আমরা সুইডিশদেরও বুঝিয়েছি। ওঁরা স্বাভাবিকভাবেই খুব উৎসাহিত। এইসব নিয়েই গত বছরের মতো এবারের পুজোও জমজমাট।