দেবব্রত বাগ, ঝাড়গ্রাম: রাজ্যের সর্বত্র যখন দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে মেতে উঠেছে বনেদি বাড়ি, ক্লাব ও বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলি, ঠিক তখনই ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের প্রান্তিক গ্রাম পাথরকাটিতে দুর্গোৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে এক ভিন্নমাত্রার ধর্মীয় নিষ্ঠা ও সামাজিক ঐক্যের মাধ্যমে। এখানকার জয়চণ্ডী মন্দিরের দুর্গাপুজো জাঁকজমক নয়, বরং বহু প্রাচীন সংস্কার ও আত্মনির্ভর লোধা জনজাতির গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন। নিত্যপুজো এবং সারা বছরের ধারাবাহিকতায় দুর্গোৎসবের সময়ে এখানেও বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম যে এই মন্দিরে কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিত নেই।
আরও পড়ুন-দিল্লির বাজার দখলে মুর্শিদাবাদের পাট-শিল্প
গ্রামের লোধা সম্প্রদায়ের পুরুষরাই পুজোর সব দায়িত্ব পালন করেন। এক সময়ে দুর্গাপুজোর জন্য বাইরের পুরোহিতকে আনা হলেও কিছু অনিয়ম ও আপত্তির কারণে সে প্রথা বন্ধ করে স্থানীয়রাই নিয়েছেন সমস্ত দায়িত্ব। মন্দিরটির পিছনে আছে এক অলৌকিক ঘটনা। বহু বছর আগে গ্রামবাসী রাম লোধা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান যে, যদি তিনি জংলি ধুনো, চিটাগুড়ের লাড্ডু ও ফলমূল নিবেদন করেন তবে দেবী সন্তুষ্ট হবেন। সেই নির্দেশ পালনের পর থেকেই গ্রামে ফিরে আসে সাফল্য ও সমৃদ্ধি। সেই থেকেই নিয়মিত জয়চণ্ডী দেবীর পুজো হয়ে আসছে। দুর্গাপুজোর সময় এই মন্দির প্রাঙ্গণে বসে বড় মেলা। ঝাড়খণ্ড-সহ আশপাশের এলাকা থেকে বহু ভক্ত আসেন দেবীর আশীর্বাদ নিতে। শুধু মন্দির নয়, জয়চণ্ডী মন্দির আজ লোধা সমাজের আত্মমর্যাদা, ঐক্য এবং নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। এ বছরও নিয়ম-নীতি মেনে শুরু হতে চলেছে দুর্গোৎসব। গ্রামের মানুষ নিজের হাতে মন্দির পরিষ্কার থেকে সজ্জা ও পুজোর সব প্রস্তুতি করছেন। ভক্তি, ঐতিহ্য ও একতার নিদর্শন নিয়ে পাথরকাটি পরিণত এক অনন্য তীর্থক্ষেত্রে।