প্রাচীন রীতি মেনে ৩৫০ বছর ধরে চলে আসছে পটের দুর্গার পুজো

কয়েকশো বছর আগের কথা। পিংলার পটশিল্পীদের হাতে তৈরি হত পটের দুর্গা। পটদুর্গার ছবি এঁকে পুজো হত পঁচেটগড় রাজবাড়িতে।

Must read

তুহিনশুভ্র আগুয়ান, পটাশপুর: কয়েকশো বছর আগের কথা। পিংলার পটশিল্পীদের হাতে তৈরি হত পটের দুর্গা। পটদুর্গার ছবি এঁকে পুজো হত পঁচেটগড় রাজবাড়িতে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পটশিল্পীদের সংখ্যাও কমে এসেছে। তবুও প্রাচীন সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের পঁচেটগড় রাজবাড়ির সদস্যরা। মাটির প্রতিমার বদলে প্রাচীন পটচিত্রে আজও দেবী আরাধনা হয়ে চলেছে জেলার প্রাচীন এই রাজবাড়িতে। এই পুজোর বয়স হয়ে গেল প্রায় ৩৫০ বছর। এক সময় জাঁকজমক করে রাজবাড়ির দুর্গাপুজো হত। প্রবীণদের মতে পঁচেটগড় রাজবাড়ির সদস্যরা বৈষ্ণব মতে দীক্ষিত হওয়ার পর বেশ কিছু বছর দুর্গাপুজো বন্ধ ছিল। কিন্তু পরে ফের রাজ পরিবারের হাত ধরে দেবী পটদুর্গার আরাধনা শুরু হয়। বিলুপ্ত সেই ধারাকে আজও বয়ে নিয়ে আসছেন বর্তমান রাজ পরিবারের সদস্যরা। আজও ক্যানভাসের ওপর দুর্গার পটচিত্র এঁকেই পুজো হয়। তবে সেই সময় পটশিল্পীদের শিল্পকলার উঠে আসত প্রাচীন লোককথা এবং পুরাণের গল্প। পটশিল্প বিলুপ্ত হলেও পটের ওপর দেবীর রূপ আজও অমলিন।

আরও পড়ুন-বেহারাদের কাঁধে চেপেই কৈলাসে পাড়ি দেন উমা

ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যায়, এই রাজ পরিবারের সদস্য মুরারীমোহন দাস মহাপাত্র এক সময় মুঘল সম্রাট আকবরের কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে চৌধুরি উপাধি লাভ। আগে পুজোর সময় বসত গানবাজনার আসর। পুজোর শোভাযাত্রায় অংশ নিত পাইক-পেয়াদারা। তবলা, সারেঙ্গীর অপরূপ শব্দ-এ মোহিত হতেন আশপাশের লোকজন। জলসাঘরে অংশ নিতেন ওস্তাদ তসুদ্দক হোসেন, বামাচরণ ভট্টাচার্য, সংগীতগুরু যদুভট্টের মতো প্রখ্যাত শিল্পীরা। এই রাজবাড়ি ২০১৮ সালে হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজত্ব গেলেও পুজোর আভিজাত্য আজও বর্তমান। পুজোর নিয়মরীতির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। এখনও ষষ্ঠীর দিন শোভাযাত্রা সহকারে রাজবাড়ির ঘট উত্তোলন করা হয়। সেখানে রাজ পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও অংশ নেন। পুজোর কয়েকদিন রাজ পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়রা মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে। পর্যটকদের ভিড়েও ভোরে ওঠে রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ। পটচিত্রের সামনে ঘট স্থাপন করে দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। রাজ পরিবারের সদস্য ফাল্গুনী দাস মহাপাত্র বলেন, এই পুজো পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধ। এটি আমাদের কাছে শুধু ধর্মীয় আচার নয়। সব মিলিয়ে আধুনিকতার মাঝেও আজও প্রাচীন এই রাজবাড়ির পুজো এলাকাবাসীর মন জুড়ে রয়েছে।

Latest article