দ্বারিকাবাড়ি
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির কোণের বাড়িটি হল দ্বারিকাভবন। ১৬৯ বছর অতিক্রম করল এই পুজো(durga puja)। এই বছরে ১৭০ পড়ল। ১৮৫৫ সালে শ্রীদ্বারিকানাথ দত্ত এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন।
শিব অঙ্কে মা দুর্গা।
দেবীর ডান পাশে ওপরের দিকে ধনদাত্রী লক্ষ্মী ও নিচে সিদ্ধিদাতা গণেশ। বাম পাশে বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী, নিচে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্ত্তিকেয়। অর্থাৎ সপরিবার পূজিতা হন মা। এইখানে মায়ের রূপ শান্ত। এই পরিবারের সদস্য অপূর্ব দত্ত জানালেন, মায়ের রূপও একটু ভিন্ন। মায়ের দুটি হাত। এই ঠাকুর স্বপ্নে পাওয়া। মৃন্ময়ী মূর্তি সাজেন রূপালি সাজে। এই পরিবারে কুলদেবতা শ্রীধর জিউ এবং কুলদেবী লক্ষ্মীমাতাঠাকুরানি। ষষ্ঠীর দিনে পরানো হয় অলংকার। হার, নথ মায়ের পায়ের নূপুর, টিকলি, টায়রা— সমস্ত দিয়ে সাজানো হয়। প্রতিবছর জাগ্রত শিব-দুর্গার প্রতি পরিবারের অনেকেরই মানসিক থাকে। সেই কারণে মায়ের অলংকার বেড়েই চলেছে। ১৬ মন চাল ও ১৩ মন চিনি দিয়ে দেবী মায়ের নৈবেদ্য তৈরি হয়। এই পুজোয় কোনওরকম অন্নভোগ হয় না। বাটা চিনির নৈবেদ্য, লুচি, কচুরি, আলুর ছোকা, পাপড়, খাজা, গজা, লেডিকেনি, সন্দেশ, দরবেশ নিবেদন হয় মায়ের ভোগ হিসাবে। রান্নায় নুন হিসাবে সন্ধৈব নুন ব্যবহার করা হয়। এই পুজো দশদিনের। মহালয়ার পরের দিন থেকেই ঘট-পাতা হয়। একে বলা হয় বোধনঘট। যে ঘরে এই ঘট বসে সেখানে দু’বেলা আরতি হয়।
ষষ্ঠীর দিনে ঘটটি নিয়ে যাওয়া হয় মায়ের সামনে।
সপ্তমীর চক্ষুদানের পর কুলদেবতা ও কুলদেবী লক্ষ্মীনারায়ণকে আনা হয় ঠাকুর দালানে।
অষ্টমী পুজো হয়ে যাওয়ার পর ধুনো পোড়ানো হয়। তবে এখানেও একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে। তাঁরাই ধুনো পোড়াতে পারেন যাঁদের দীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সন্ধিপুজোর দিনে দেবীর চালচিত্রে যে দশ হাতের দেবী দশভুজার ছবি থাকে তাকে উপলক্ষ করে দেবী চামুণ্ডার পুজো হয়।
নবমীতে কুমারী পুজো হয়। নবমীর পুজো শেষ হলে দক্ষিণান্ত রীতি রয়েছে। পুরোহিতকে মোহর এবং গিনি দক্ষিণাস্বরূপ দিয়ে এই পুজোর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বাড়ির মহিলাদেরও এই পুজোর প্রত্যেকটা দিনে বিশেষ সাজের নিয়ম। ষষ্ঠীতে সোনার নথ, গলার হার, পায়ের মলে সেজে ওঠেন অন্দরমহলের মহিলারা। সপ্তমীতে মিনের গয়নার সাজ ও অষ্টমীতেও বিশেষ সাজ থাকে। হীরে ও পান্নার গয়নায় সাজেন দ্বারিকাবাড়ির মহিলারা। নবমীতে মুক্তো ও দশমীতে সোনায় সাজার রীতি।
লাহাবাড়ি
প্রায় ২২৫ বছর আগে মধুমঙ্গল লাহা চুঁচুড়োয় এক চালচিত্রে দুর্গাপুজো করতেন। চুঁচুড়ো থেকে কলকাতায় এসে প্রথমে কলুটোলা স্ট্রিটে ভাড়া বাড়িতে পুজো আরম্ভ করেন। ১৮৫৭ সালে প্রাণকৃষ্ণ, নবকৃষ্ণ ও শ্রীকৃষ্ণ লাহা এক নম্বর বেচু চ্যাটার্জির স্ট্রিটে বাড়ি কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেন এবং ওই জায়গাতেই দুর্গাপুজো শুরু করেন। মতভেদে আবার এও বলা হয়ে থাকে যে, মহানন্দ লাহা দুর্গাপুজো প্রথম প্রবর্তন করেন। সেই হিসেব ধরলে লাহাদের পুজোর বয়সের সময়সীমা হচ্ছে প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো। পরিবারের দুর্গামূর্তির একটি বিশেষত্ব রয়েছে। শিব বৃষের ওপর উপবিষ্ট। মা দুর্গা বসে থাকেন স্বয়ং শিবের কোলে। বাঁদিকে সরস্বতী ও কার্তিক ডানদিকে লক্ষ্মী ও গণেশ, একই চালচিত্রে আসীন। দেবী দুর্গা ছাড়াও লাহাদের অন্যতম আরাধ্যা দেবী হলেন শ্রীশ্রী জয় জয় মাতা। দুর্গাপুজোর সময় মৃন্ময়ী হর-পার্বতীর মূর্তির সামনে কুলদেবীর মূর্তিটি এনে ঠাকুরদালানে স্থাপন করে পুজো করা হয়ে থাকে।
ষষ্ঠীর দিনে অর্থাৎ দেবীর বোধনের দিনে কুলদেবীকে নতুন জরির বেনারসি, সোনার গয়নায় সুসজ্জিত করা হয়।
সপ্তমীর সকালে জলঝরা ছড়িয়ে নবপত্রিকাকে ছাতার নিচে রেখে, বাজনা বাজিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে আবার তাঁকে স্নান করিয়ে, আলতা, সিঁদুর, হলুদ ছুঁয়ে একটি লাল চেলির কাপড় পরানো হয়। তারপর সেটিকে গণেশের ডানদিকে স্থাপন করা হয়। জয় জয় মাতাকে ওই দিন স্নান করিয়ে ঠাকুর ঘর থেকে নিয়ে এসে ঠাকুর দালানে একটি রুপোর সিংহাসনের ওপর রাখা হয়। বিধিমতে, সেদিনেই বেদাগি বোঁটা-সহ একটি ছাঁচি কুমড়ো বলিদান করার রীতি এবং ঠাকুর দালানের প্রাঙ্গণে আঠাশটি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় একশো আটটি প্রদীপ জ্বালানো হয়। এবং লাহাবাড়ির মহিলারা দেবী দুর্গা ও জয় জয় মা-কে সামনে রেখে, মাথায় এবং দু’হাতে মাটির সরা রেখে তাঁদের মানসিক ইচ্ছা ও সংকল্পকে স্মরণ করে ধুনো পোড়ান।
নবমীর দিন একটি হোম-যজ্ঞের আয়োজন করা হয় ও একশো আটটি প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। হোমের পর দেবী পুজোয় ন’টি কোলহাঁড়ির ব্যবস্থা করে দেবীর সঙ্গে রাখা হয়। এরপরে কুমারী পুজো হয়।
লাহাবাড়ির কন্যা সুস্মেলী দত্ত জানালেন, দশমীর বিসর্জনের দিন শুধুমাত্র লাহাবাড়ির পুরুষেরা পুষ্পাঞ্জলি দেন। কনকাঞ্জলি দেন যাঁর পালা পড়েছে সেই পরিবারের গৃহমাতা। বিসর্জনের সময় মৃন্ময়ী মূর্তিটিকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হলে বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দেবী ঘট নিয়ে ফিরে এলে বাড়ির কর্তা বাইরে থেকে প্রশ্ন করেন তিনবার— ‘মা আছেন ঘরে?’
গৃহকর্তী বাড়ির ভেতর থেকে উত্তর দেন আছি। তবেই সদর খুলে দেওয়া হয় ও বিসর্জনের পর মাটি ধুয়ে ফেলে কাঠামোটিকে সাদরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। কথিত আছে, একবার নাকি বিসর্জনের সময় সদর খুলে দেওয়াতে বাড়ির মধ্যে কেউ একজন প্রত্যক্ষ করে একটি সালাংকারা কন্যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সেই না দেখে তাড়াতাড়ি সদর বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়। সেই থেকে নিয়ম অনুযায়ী এই ব্যবস্থাটি অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে এবং দায়িত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। লাহা পরিবারের দেবী দুর্গা (durga puja) ছাড়া অন্য ঠাকুরের মূর্তি-পুজো নিষিদ্ধ।
ভোজেশ্বর পালচৌধুরীবাড়ি
ওপার বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল ভোজেশ্বর পালচৌধুরী বাড়ির পুজো (durga puja)। এই পুজোর দেশভাগের পর ভৌগোলিক স্থানবদল ঘটলেও রীতিনীতি নিয়মকানুন একই রেখে চলছে। এই পুজো শুরুর পেছনে একটা গল্প রয়েছে। বন্দরের ব্যবসার কাজ সেরে একদিন বাবা ও তিন ছেলে নদীপথে নৌকো করে বাড়ি ফিরছিলেন। সন্ধে নেমে আসছে, ঠিক এই সময়ে লাল পাড়, সাদা শাড়ি পরিহিত অল্পবয়সি এক রমণী এসে তাঁদের অনুরোধ করেন তাঁকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। স্বপ্নে জানতে পারেন ওই রমণী ছিলেন স্বয়ং দুর্গা। সেই স্বপ্নে-পাওয়া পুজোর আদেশ থেকে বংশ-পরম্পরায় চলছে এই বাড়ির পুজো। ৩৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে এই বাড়ির পুজো। স্বপ্নে-পাওয়া দেবী দুর্গার রূপ এখনও চলে আসছে। সাধারণত দেবী দুর্গার ডান দিকে লক্ষ্মীর পাশে থাকেন গণেশ আর বাঁদিকে সরস্বতীর পাশে থাকেন কার্তিক। ভোজেশ্বর পালচৌধুরীর বাড়ির ঠাকুরের ডানদিকে লক্ষ্মীর পাশে থাকেন কার্তিক এবং বাঁদিকে সরস্বতীর পাশে গণেশ। স্বপ্নে এভাবেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেখা দিয়েছিলেন স্বয়ং মা দুর্গা। ওপার বাংলা থেকে চলে আসা সেই রীতি আজও অক্ষুণ্ণ।
৩৫০ বছর পেরিয়েও একইভাবে পুজো পরিচালনা করাও একটা সহজ কাজ নয়। পরিবারের সদস্য সৌম্য পালচৌধুরী জানালেন, পুজো দেখভালের জন্য রয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড। শরিকদের বাড়িতে নিয়ম করে হয় পুজো, কখনও ৪ বছর পর কখনও আবার ১৬ বছর পেরিয়ে।
এই বছর এই বাড়ির পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিউ টাউনে। চৌধুরী পরিবারের সদস্য সৌম্য পালচৌধুরীর মুখে জানলাম, রথযাত্রার দিন ঠাকুর বায়নার নিয়ম। মা বাড়িতে আসেন তৃতীয়া বা চতুর্থীর দিন। দেবী প্রতিমা এখানে সাজেন বিশেষ নথে। দেবীর অস্ত্রশস্ত্র সব রুপোর। রয়েছে ভোগেরও নানা আয়োজন। বাড়ির মহিলারা বানান নাড়ু, মোয়া। নিয়ম ও রীতি আছে— পুজোর ভোগ হবে শুকনো। অন্ন ভোগের প্রথা নেই। মন্ডা, মিঠাই, ক্ষীর-নাড়ু ছাড়াও নানারকম সন্দেশ, নারকেলের, খইয়ের উপরা-সহ হরেকরকমের ফল রোজ মাকে নিবেদন করা হয়। নেই পুজোয় কোনও বলিদান প্রথা। নবমীর দিন পাতে পড়ে ইলিশ। তবে নিয়ম মেনে দশমীর পর আর বাড়িতে ইলিশ ঢোকে না। দশমীতে খাওয়া হয় পুঁটিমাছ। ভোজেশ্বর পালচৌধুরী পরিবারের পুজোর অন্যতম এক আচার হল টাকা যাত্রা। আগেকার দিনে ব্যবসা করতে যাওয়াকে টাকা যাত্রা বলা হত। তখন মানুষজন ব্যবসার কাজে দু-তিন মাসের জন্য বাইরে যেতেন। বাড়িতে থাকা স্বর্ণমুদ্রা মা দুর্গার পায়ে ছুঁইয়ে বাড়িতে রাখা হত। সেই মুদ্রায় প্রণাম করে ব্যবসার কাজে যেতেন তাঁরা। পালচৌধুরী পরিবারে এখনও চলে আসছে সেই টাকা যাত্রার রীতি। দেবী মায়ের পায়ে ছোঁয়ানো হয় সোনার বা অন্য ধাতুর মুদ্রা। দশমীর দিন দর্পণ বিসর্জনের পর হয় এই টাকা যাত্রা।
হুগলির আঁইয়া গ্রামের গাঙ্গুলিবাড়ির পুজো
মশাট, সিঙ্গুর পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় হুগলি জেলার আঁইয়া গ্রাম। সেই গ্রামের বিখ্যাত কে ডি গাঙ্গুলির বাড়ির পুজো। কৃষ্ণধন গাঙ্গুলি এই দুর্গাপুজোর (durga puja) প্রতিষ্ঠাতা। আঁইয়া গ্রামে চাটুজ্জে বাড়িতে তিনি একসময় পৌরোহিত্য করতেন। পৌরোহিত্য করার সময় তাঁর মনে আকাঙ্ক্ষা জাগে মায়ের পুজো নিজের মতো করে নিজ ভদ্রাসনে করার। পরবর্তী সময়ে জীবিকার সন্ধানে কলকাতায় আসেন। কলকাতার বড়বাজারে লোহার ব্যবসা শুরু করেন এবং সে ব্যবসা অল্প সময়ের মধ্যেই ফুলেফেঁপে ওঠে। একটা সময়ে কে ডি গাঙ্গুলি অ্যান্ড সন্স নামের সেই দোকান ব্রিটিশদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা চলত। আজও রয়েছে সেই দোকানের একাংশ। এরপর আঁইয়া গ্রামে কৃষ্ণধন গাঙ্গুলির ছোট জমিদারিও শুরু হয়। পাশাপাশি তাঁর সেই দুর্গাপুজোর স্বপ্ন সফল হয়।
বাড়িতেই শুরু করেন দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজোর পাশাপাশি ওঁর আরেকটি লক্ষ্য ছিল লোকজন খাওয়ানো। সে-সময় চার-পাঁচটা গ্রামে পুজোর চার-পাঁচদিন ধরে উনুন জ্বলত না। গ্রামের লোকরাই নয়, ইংরেজরাও সেই সময় আসতেন কৃষ্ণধন গাঙ্গুলির দুর্গাপুজো দেখতে।
তবে নিয়মের কড়াকড়ি ছিল। যেহেতু ওঁরা ম্লেচ্ছ তাই ঠাকুরদালানে ওঠার অনুমতি ছিল না। এঁদের ঠাকুর দেখার জন্য আলাদা সিঁড়ি ছিল। গাঙ্গুলি বাড়ির কুলদেবতা রাধাগোবিন্দ। নিত্যপুজো এবং ভোগ হয়।
যে পটুয়ারা প্রথম থেকে তৈরি করছেন এই দেবীমূর্তি সেই পটুয়ারাই বংশানুক্রমে আজও করে চলেছেন ঠাকুর তৈরির কাজ। গাঙ্গুলিবাড়ির চতুর্থ প্রজন্মের সদস্যা মহুয়া গাঙ্গুলি জানালেন— মাকে বেনারসি, সোনার গয়না ও অন্যান্য অলংকারে সাজানো হয়। প্রতিদিন ভোগ হয়। ভোগেও বিশেষত্ব রয়েছে। জলখাবারে প্রত্যেকদিন থাকে খিচুড়ি ও পাঁচ ভাজা। এরপর দুপুরে থাকে ভাত, পোলাও, শুক্তো, ডালভাজা, মাছ, মাংস, চাটনি, পায়েস, দই-মিষ্টি। তিন-চার রকমের মিষ্টি নিয়ম করে মাকে নিবেদন করা হয়। আঁইয়া গ্রামের গাঙ্গুলি বাড়ির পুজোয় ভোগ কিন্তু আমিষ হয়। রোজ মাছ-মাংস তো থাকেই, তবে তা পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া। এই গাঙ্গুলিবাড়িতে রয়েছে প্রতিষ্ঠিত একটি সুবিস্তৃত দিঘি এবং একটি ছোট পুকুর। একটা সময় পর্যন্ত এই নিয়ম ছিল যে দিঘির জলে স্নান করলে তবেই ভোগ রান্নার অনুমতি এবং যে-কোনও পুজোর কাজের অনুমতি মিলত। আগে মহিষ বলি হত এখন তিনদিন ধরেই পাঁঠাবলি হয়। অনেকেরই মানসিক থাকে। দেবী মায়ের ভোগ তৈরি হয় মাটির বাসনে এবং উনুনে।
নৈহাটির সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো
১৭০০ উত্তর চব্বিশ পরগনার নীলকণ্ঠ দে সরকার নৈহাটির গঙ্গা-তীরবর্তী অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেন। এবং বাড়ির ঠাকুর দালানে তিনি দুর্গাপুজো (durga puja) এবং কালীপুজো শুরু করেন। ইংরেজদের সঙ্গে সে-সময় তিনি জাহাজের ব্যবসা করতেন। নিত্যপ্রয়োজন ও নারায়ণের নিত্যসেবার জন্য সেই সময় দিনে তিনি গঙ্গার ঘাট নির্মাণ করেন। যুগ থেকে যুগেও ওই একই ঘাট থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন করার রীতি আজও চলে আসছে।
মহালয়ার দিন প্রতিমাকে ঠাকুর দালানের বেদিতে আনা হয়। নারায়ণ মন্দিরে ঘটস্থাপন করে প্রতি পদের দিন থেকেই পুজো শুরু হয়।
স্বপ্নাদেশের পুজো (durga puja)। রামানন্দ দে সরকার পুজো শুরু করেন। ডাকের সাজের প্রতিমা। অসুর সবসময় সবুজ রঙের এবং মোষের মাথা কাটা থাকে।
দেবীর বোধন হয় পুজোর দালানের বিপরীত দিকে। ঢাকের বোলেও আছে বিশেষত্ব। ঢাকিরা বংশপরম্পরা থেকে চলে আসছেন। ঠাকুর দালানের ঢাক বাজলে ঢাকের আওয়াজ শুনতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। এই পরিবারে বলিপ্রথা নেই। এই পরিবারেরই সদস্য অনীক সরকার জানালেন ভোগের নিয়মের এক অদ্ভুত স্বাতন্ত্র্যের কথা। খিচুড়ি রান্নার সমস্ত উপকরণ সবজি, চাল, ডাল, নুন তেল, মশলাপাতি সমস্ত কিছু মায়ের সামনে কাঁচা সাজিয়ে দিতে হয়। রান্না করার নিয়ম নেই।
পুজো হয়ে যাওয়ার পর ব্রাহ্মণকে সেই জিনিসগুলো মায়ের ভোগ হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয়। সন্দেশ দেওয়ার নিয়ম নেই। অষ্টমীর দিনে লুচি-পায়েস এবং নারকলনাড়ু হয়। যা এই বাড়ির পুজোর ভোগের এক বিশেষ উপকরণ। এই সমস্ত প্রসাদও সমস্ত দর্শনার্থী আত্মীয়-পরিজন সবার মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়।