প্রতিবেদন : শারদোৎসবের সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের শুরুয়াত হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। উৎসব উৎসারিত সূচনা। এবার রেকর্ড ৩ হাজার পুজোর উদ্বোধন হবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। আরও বেশ কয়েক হাজার আবেদন থাকলেও সময়াভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সেগুলির উদ্বোধন সম্ভব হবে না। এই উৎসবের আবহে জারি রইল প্রতিবাদের আঁচও। বিজেপির ভাষাসন্ত্রাস এবং বাঙালি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে নাম না-করে সরব হলেন শারদোৎসবের মঞ্চেও। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আমরা প্রত্যেকেই আমাদের মাতৃভাষাকে ভালবাসি। আমরা অন্যের ভাষাকেও সম্মান করি। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলায় কথা বললে অত্যাচার করবে এটা মানব না। এটা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে প্রত্যেকের একটা নিজস্বতা আছে। বাংলাতেও বাইরে থেকে আসা ১.৫ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক আছে। বাংলার শ্রমিকদের দক্ষতা আছে বলেই এখান থেকে অন্য রাজ্যে তাঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। শারদোৎসবের মঞ্চ থেকে ঐক্য ও সম্প্রতির বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ শিখিয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে নিয়ে চলতে। একসঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে বাঁচতে হবে। আমাদের বাংলাতেও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই পরস্পরের সঙ্গে থাকি। এটাই আমাদের ঐতিহ্য।
শনিবার পরপর তিনটি পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে হাতিবাগান সর্বজনীন। তারপর টালা প্রত্যয় এবং শেষে মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর সূচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মণ্ডপ দেখতে এসেছি। মহালয়া থেকে দেবীর বোধন হবে। বর্তমান আবহাওয়াতে অনেকেরই জ্বর-সর্দি-কাশি হচ্ছে তাই সকলকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। টালা প্রত্যয়ে তিনি বলেন, আমাকেও একটু সাবধানে থাকতে হচ্ছে। কারণ প্রায় তিন হাজার পুজোর উদ্বোধন করতে হবে। জ্বর হলে মুশকিল হবে।
প্রতিবছরই মুখ্যমন্ত্রীর পুজোর গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এবারও তার অন্যথা হবে না। তিনি নিজেই জানালেন, এবার তাঁর ১৭টি গান নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হচ্ছে। যেখানে ইন্দ্রনীল সেন, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাঘব চট্টোপাধ্যায়-সহ বহু নামীদামি শিল্পীরা গেয়েছেন। এছাড়াও ১০-১১ বছরের মতো এবারও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সংঘের পুজোর থিম সং তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গেয়েছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এছাড়াও অজেয় সংহতির জন্য গান তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গেয়েছেন ইন্দ্রনীল সেন। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ও সুরে ‘মাগো তুমি সর্বজনীন’ এবং ‘এই পৃথিবী একটাই দেশ’ এই গান দু’টি সুপার-ডুপার হিট হয়েছে। গোটা বাংলাজুড়ে পুজোমণ্ডপে এই গানগুলি এখন বাজে।
আরও পড়ুন-‘গানের নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে’ মঞ্চ থেকে নচিকেতা ও অদিতির প্রশংসা মুখ্যমন্ত্রীর
এবারও রাঘব চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ও সুরে গেয়েছেন ‘সেই মেধা আসল মেধা, যে মেধা মানুষ তৈরি করে’। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সেই অর্থে প্রথাগত শিল্পী নয়। মাত্র দু’বছর গান শিখেছি। কিন্তু ভালবেসে গান গাই। এবারও আমার কথা ও সুরে বাবুল সুপ্রিয়, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃষা-সহ অনেকেই গেয়েছে। শ্রীভূমির মঞ্চে বিধায়ক ও শিল্পী অদিতি মুন্সি এবং গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তীকে গানের অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’জনেই মাতিয়ে দেন দর্শকদের। নচিকেতা মুখ্যমন্ত্রীর গান মনে রাখার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবার নচিকেতা গেয়েছে ‘যখন তোমার ভাঙবে ঘুম, ওটাই তোমার সকাল’। এছাড়াও শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছেন, ‘শরৎ আকাশের নীল গগনে, মা এসেছেন দুর্গাঙ্গনে’। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আপনাদের এলাকার কাছাকাছি একটি দুর্গাঙ্গন তৈরি করছি। দেখার মতো হবে। দিঘায় জগন্নাথধাম করছি, এবার দুর্গাঙ্গন করছি।
টালা প্রত্যয়ের থিমের নামকরণও মুখ্যমন্ত্রী করেছেন। এ-প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অরূপ চায় না আমি অন্য কোনও পুজোর থিম করি। এটা ওদের আবদার। কিন্তু দিঘার জগন্নাথধাম উদ্বোধনে গিয়েছিলাম, তখন টালা প্রত্যয়ের শুভরা বলেছিল তাদের থিমের নামকরণ করে দিতে। তখন সেটা করে দিই। শিল্পী ভবতোষ সুতার কাজটি করছেন। তিনি প্রার্থনা করেন, যাতে বাংলার এই বৃষ্টি-দুর্যোগ কেটে যায়। তারপর মু্খ্যমন্ত্রীর কথায়, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। বিহারেও বৃষ্টি হচ্ছে। ডিভিসি মারফত সেই জল বাংলায় চলে আসছে। সবটাই সামলাতে হচ্ছে। তবুও তার মধ্যে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবে মায়ের কাছে প্রার্থনা, ‘মাগো সকলকে ভালো রেখো, সুস্থ রেখো’। এদিন হাতিবাগান সর্বজনীনে ছিলেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে ছিলেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার, কৃষ্ণা চক্রবর্তী-সহ অন্যরা।