ফ্ল্যাশব্যাক
কতবার রক্তের ধারায় লাল হয়ে গেছে চম্বলের চত্বর। তবু শান্ত হয়নি। আরও রক্ত চাই। আরও রক্ত। দু’পাশে বিভীষিকার মতো দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার দুর্গম গিরিপথ বেহড়। এই বেহড় হল ডাকাতদের আস্তানা। লুকিয়ে থাকার উপযুক্ত জায়গা। পুলিশের কাছে এই বেহড় দুর্ভেদ্য অজানা বিভীষিকা। ডাকাত দলের নিশানা খুন কা বদলা খুন। এমন এক ডাকাত দলের সর্দার সুলতান সিং। মোরেনার বিখ্যাত বাইজি পুতলিকে লুটে নিয়ে এসেছিল বেহড়ের গভীর আস্তানায় তার রানি করবে বলে। পুতলির জীবনের মোড় সেদিন ঘুরে গিয়েছিল। কোথায় যেন ঘর বাঁধবার আশ্বাস পেয়েছিল সুলতানের কথায়। তাই সুলতান যখন ঘর বাঁধার কথা বলেছিল তখন সে আর একটুও আপত্তি করতে পারেনি। শুরু হল সুলতান আর পুতলির নতুন জীবন। সবাইকে ভাল লাগত পুতলির শুধু লোহারিকে অসহ্য লাগত। দিন কয়েকের মধ্যে এই পরিবেশ অসহ্য হয়ে উঠেছিল। সুলতানকে বারবার বলেছে তাকে ছেড়ে দিতে। সুলতান রাজি হয়নি, পুতলি যখন জানিয়েছে তার কোলে আসতে চলেছে সুলতানের সন্তান, তখন আর আটকায়নি। পুতলির কোলে এসেছে তান্নো। ফিরে এসে পুতলি পড়ল দোটানায়। এদিকে লোহারির প্ররোচনায় সুলতান সন্দেহ করতে শুরু করে পুতলিকেই। খুনের দায়ে বাগি হল সুলতান। চম্বলের অভিশাপ থেকে রেহাই পায়নি সুলতান। রেহাই পায়নি পুতলি। প্রস্তাবনায় যে গল্প দর্শকমাত্রেই জানেন তা ‘অভিশপ্ত চম্বল’ ছবির। এমন দুঃসাহসিক উপন্যাসের চিত্ররূপ দিয়েছিলেন মঞ্জু দে। তিনি পুতলি চরিত্রের শিল্পীও বটে। তরুণকুমার ভাদুড়ীর উপন্যাসে সুলতানকে যেমন ভাবে দেখি ঠিক তেমনি ভাবে দর্শকদের সামনে উঠে এলেন অদ্বিতীয় প্রদীপকুমার। সপ্তাহের পর সপ্তাহ হাউসফুলের বোর্ড ঝুলত প্রদীপকুমার-মঞ্জু দে অভিনীত অভিশপ্ত চম্বল ছবির ভাণ্ডারে।
আরও পড়ুন-মার্কিন সংস্থার ভারতীয় কর্মীদের কী হবে?
শুরুর কথা
১৯২৫ সালে ৪ জানুয়ারি প্রদীপ কুমারের জন্ম ভবানীপুরের সর্দার শঙ্কর রোডের পণ্ডিত বাড়িতে। প্রকৃত নাম শীতল বটব্যাল। ঠাকুরদা বিদ্যালঙ্কার উমেশচন্দ্র বটব্যাল ছিলেন সংস্কৃত কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বাড়িতে অন্যরকম পরিবেশ। সেখানে সিনেমার নায়ক হওয়ার কথা উঠতেই পারে না। প্রদীপকুমার তখন গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলের ছাত্র। ছেলের আগ্রহ থেকে বাবা সত্যেন্দ্রনাথ বলেই ছিলেন ইচ্ছে থাকলে টেকনিশিয়ান হতে পারো কিন্তু অভিনেতা কখনওই নয়। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে তিনি অভিনেতাই হয়ে উঠলেন। সুদক্ষ আলোকচিত্রী নপ্তা বাবু (এস মিত্র) তখন নারকেলডাঙার নর্থ রোডের অরোরা স্টুডিওর ম্যানেজার। তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন প্রদীপকুমার। তিনি চিত্রগ্রাহক ধীরেন দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন। ধীরেন দে-র মাধ্যমে প্রখ্যাত পরিচালক দেবকীকুমার বসুর সান্নিধ্যে এলেন প্রদীপকুমার। ১৯৪৬ সালের শেষ দিক। দেবকীকুমার বসু তখন ইন্দ্রজাল স্টুডিওতে ব্যস্ত। প্রদীপকে তিনি স্টুডিওতে এসে সব সময় খুঁটিনাটি কাজকর্ম ভাল করে লক্ষ করতে বললেন। পেশাদারি রঙ্গমঞ্চ রংমহল থিয়েটারের ‘নতুন প্রভাত’ নাটকে তখন অভিনেতা হিসেবে যুক্ত প্রদীপকুমার। ব্যস্ত মানুষ দেবকীকুমার বসুকে নাটক দেখানোর খুব ইচ্ছে হল তাঁর। দেবকীকুমার বসু রাজি হলেন। দেখলেন নাটক। ভাল লাগল প্রদীপকুমারের অভিনয়। তিনি তখন প্রদীপকুমারকে প্রস্তাব দিলেন ছবিতে অভিনয়ের। বাড়িতে প্রচণ্ড আপত্তি। জামাইবাবু অবশ্য উৎসাহ দিলেন। আর উৎসাহ দিলেন পিসেমশাই। বাড়ির কারও কথা শুনলেন না প্রদীপকুমার। সরোজ মুখার্জি প্রযোজিত ‘অলকানন্দা’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন। লেখক মন্মথ রায়। সংলাপ রচয়িতা ঋত্বিক ঘটক। রূপায়ণে দেবকীকুমার বসু। তিনিই শীতল নাম বদলে নতুন নাম দিলেন প্রদীপকুমার। মুক্তি পেল ১৯৪৭ সালে। তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হল। শুরু হল নতুন জীবন।
গোড়ায় বাংলা ছবিতে পরিক্রমা
হেমেন গুপ্তের পরিচালনায় পরপর দুটি ছবিতে প্রদীপকুমারের অভিনয় সকলের মনে দাগ কাটল। দুটি ছবি হল ‘ভুলি নাই’ এবং ‘৪২’। স্বদেশপ্রেমের ছবি দুটি তাঁকে স্মরণীয় করে তুলল। এছাড়া এই সময় তিনি কাজ করলেন অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘সন্দীপন পাঠশালা’ ছবিতে। কাহিনিকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। পরপর তিনি কাজ করলেন দেবী চৌধুরানী, স্বামী, বিষ্ণুপ্রিয়া-য়। বম্বে পাড়ি দেওয়ার আগে বাংলায় আরও অভিনয় করে গেলেন সন্ধ্যাবেলার রূপকথা, অপবাদ, পলাতক, স্পর্শমণি প্রভৃতি ছবিতে।
আরও পড়ুন-সিজার অ্যাটাকের পরে হাসপাতালে দু’ঘণ্টা! জুবিনের মৃত্যুতে সিআইডি তদন্ত
বম্বেতে পাড়ি
হেমেন গুপ্ত বম্বেতে যখন হিন্দি ছবির জগতে প্রতিষ্ঠার মুখ দেখছেন তখন তিনি প্রদীপকুমারকেও ডেকে নিলেন বম্বেতে। সেখানে প্রখ্যাত প্রযোজক শশধর মুখার্জির ফিল্মিস্তান চিত্র সংস্থার সঙ্গে পাকাপাকিভাবে চুক্তিবদ্ধ হলেন প্রদীপকুমার পাঁচ বছরের জন্য। প্রদীপকুমার হলেন কলকাতার প্রথম শিল্পী যিনি বম্বে চিত্রজগতে নায়ক হিসেবে দারুণ স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কাজ করলেন একে একে ঝাঁনসিকি রানি, আনন্দমঠ, আনারকলি, নাগিন প্রভৃতি সাড়া জাগানো ছবিগুলিতে। সব ছবি সুপারহিট।
হিন্দি ছবিতে তাঁর বিপরীতের নায়িকারা
হিন্দি ছবিতে তাঁর সময়ের সব বিখ্যাত নায়িকাদের বিপরীতে তিনি নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মীনাকুমারীর কথা প্রথমে ধরা যাক। ‘চিত্রলেখা’ ছবিতে তিনি মীনাকুমারীর বিপরীতে। পরে একে একে তিনি কাজ করলেন ‘নুরজাহান’ ছবিতে। সেখানে মীনাকুমারী নুরজাহান, জাহাঙ্গিরের চরিত্রে প্রদীপকুমার। ‘বহু বেগম’ ছবিতে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। প্রদীপকুমার, মীনাকুমারী, অশোককুমার। ‘আরতি’ ছবিতেও সেই একই ফ্রেম। ত্রিকোণ প্রেম। মীনাকুমারী-প্রদীপ কুমারের অন্তরঙ্গ দৃশ্যে ভরপুর ছবি ‘ভিগি রাত’। বীণা রায়ের বিপরীতে ‘আনারকলি’ ছবিতে অসাধারণ জুটি বাঁধলেন তাঁরা। নাম ভূমিকায় বীণা এবং সেলিমের চরিত্রে প্রদীপকুমার। আনারকলিতে সেলিমের চরিত্র তাঁর অবিস্মরণীয় অভিনয় হওয়া সত্ত্বেও গুজব রটে ছিল সেলিমের কণ্ঠস্বর নাকি ডাবিং করা হয়েছে। পরে অবশ্য এই ব্যাপারটি মিটে যায়। বীণা রায়-প্রদীপকুমার জুটির ‘তাজমহল’ বিশাল ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করেছিল। এই জুটির গান ‘জো ওয়াদা কি আহো নিভানা পারেগা’ (মহম্মদ রফি ও লতা মঙ্গেশকর নেপথ্য কণ্ঠে)। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের হিন্দি চিত্ররূপে নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন প্রদীপকুমার ও বীণা রায়।
বম্বের সাড়া জাগানো নায়িকা নার্গিসের বিপরীতে বেশ কয়েকটি ছবিতে প্রদীপকুমার নায়ক হয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছে ‘মিস ইন্ডিয়া’, ‘আদালত’ এবং ‘রাত ঔর দিন’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ‘রাত ঔর দিন’ ছবিতে নার্গিস শেষ অভিনয় করেছিলেন। পরিচালক সত্যেন বোস। আর তাঁর সময়ের সুন্দরী নায়িকা মধুবালার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিতে প্রদীপকুমার নায়ক। ‘গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া’ ছবিতে এই জুটি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
‘পাসপোর্ট’ ছবিতেও এই জুটি দর্শক আকর্ষণ করেছিল। ‘রাজহাত’ ছবিতেও এই জুটি জমজমাট। ‘সিরিন ফরহাদ’ এই প্রেম কাহিনিতে এই জুটি দর্শকদের নজর কেড়েছিল। ডাকসাইটে সুন্দরী নায়িকা বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে ‘নাগিন’ ছবিতে এসেই দর্শকদের মন লুঠ করে নেন তাঁরা। সেই ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরের গানগুলি মায়াজাল তৈরি করতে পেরেছিল শ্রোতাদের। প্রদীপকুমার নিজে ‘দো দিল কা দাস্তান’ ছবি প্রযোজনা করেছিলেন। সেই ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা বৈজয়ন্তীমালা। বাংলার বাসবী নন্দী ছিলেন সেই ছবিতে।। মালা সিনহার সঙ্গে একাধিক ছবিতে তিনি নায়ক। ‘বাদশাহ’ ছবি দিয়ে শুরু। পরে ‘দুনিয়া না মানে’ ছবিতেও রয়েছেন এই জুটি। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ ছবির হিন্দি ভার্সানে জীবানন্দ প্রদীপকুমার আর শান্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন গীতা বালি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে এই ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘বন্দে মাতরম্ সুজলাং সুফলাং’ গানটি আজও শ্রোতাদের আপ্লুত করে রেখেছে। গীতা বালির সঙ্গে রোম্যান্টিক ছবি ‘যব সে তুমহে দেখা’ একসময় সাড়া জাগিয়েছিল। অনিতা গুহ বম্বে গিয়ে প্রদীপকুমারের বিপরীতে নায়িকা হয়েছেন ‘সংযোগ’ ছবিতে। ‘প্যার কি রাহি’ ছবিতেও তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন। আশা পারেখ দুটি স্মরণীয় ছবিতে প্রদীপকুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। ছবি দুটি হল ‘ঘুঙ্ঘট’ এবং ‘মেরি সুরাত তেরি আঁখে’ দুটি ছবি বাম্পার হিট। ওয়াদিয়া রহমানের বিপরীতে তিনি নায়ক হয়েছিলেন ‘রাখি’ ছবিতে। বহু অর্থব্যয়ে নির্মিত বিশাল মাপের ছবি ‘মহাভারত’। সেখানে প্রদীপকুমার অর্জুনের ভূমিকায়। দ্রৌপদীর চরিত্রে ছিলেন পদ্মিনী। ভীম সেজেছিলেন দারা সিং। সৈদা খানের বিপরীতে নায়ক হয়েছেন ‘মর্ডান গার্ল’ ছবিতে। শাকিলার বিপরীতে নায়ক হয়েছেন ‘মুলজিম’ এবং ‘ওস্তাদও কি ওস্তাদ’ ছবিতে। কল্পনার বিপরীতে নায়ক হয়েছেন ‘সহেলি’ ছবিতে।
আরও পড়ুন-পুজোর আড্ডায় ‘দেবী চৌধুরানী’র টিম
বাংলা ছবিতে তাঁর নায়িকারা
প্রথমে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কথাই ধরা যাক। উত্তমকুমার প্রযোজিত ‘গৃহদাহ’ ছবিতে উত্তমকুমার মহিমের চরিত্রে। সুচিত্রা সেন হয়েছেন অচলা আর প্রদীপকুমার অভিনয় করেছেন সুরেশের চরিত্রে। প্রথমে সুরেশ করবার কথা ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। কোন অজানা কারণে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সরে যাওয়াতে সেই চরিত্রে এলেন প্রদীপকুমার। অথচ এই প্রদীপকুমার তাঁর শিল্পীজীবনে প্রতিষ্ঠার মুখ দেখার পর যখন ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবি করছেন তখন একদিন ফ্লোরে উত্তমকুমার প্রদীপকুমারকে ‘শীতলদা শীতলদা’ বলে ডেকেছিলেন। পূর্বপরিচিত থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠিত নায়ক প্রদীপকুমার সেদিন উঠতি নায়ক উত্তমকুমারকে চিনতে পারেননি! মন তাঁর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য তিনি পরে আর মনে রাখেননি বলে প্রদীপকুমারকে বম্বে থেকে নিয়ে এলেন বাংলায় এই ছবি করাতে। বাংলায় সুমিত্রা দেবীর বিপরীতে তিনি অনেকগুলো ছবিতেই নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিতে প্রদীপকুমার ব্রজেশ্বরের চরিত্রে আর নাম ভূমিকায় ছিলেন সুমিত্রা দেবী। শরৎচন্দ্রের ‘স্বামী’র চিত্ররূপে নরেনের ভূমিকায় ছিলেন প্রদীপকুমার আর সৌদামিনীর ভূমিকায় অভিনয় করলেন সুমিত্রা দেবী। শশধর দত্তের লেখা সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘দস্যুমোহন’-এর চিত্ররূপে নায়কের ভূমিকায় প্রদীপকুমার। নায়িকা হয়েছিলেন সুমিত্রা দেবী। রাজ কাপুরের প্রযোজনায় অমিত মৈত্র এবং শম্ভু মিত্রের যুগ্ম পরিচালনায় নির্মিত হয়েছিল ‘একদিন রাত্রে’ ছবিটি। সেখানে নায়ক-নায়িকা প্রদীপকুমার-সুমিত্রা দেবী। এর হিন্দি ভার্সন ‘জাগতে রহো’তেও প্রদীপকুমার এবং সুমিত্রা দেবী নায়ক-নায়িকা হয়েছিলেন। প্রদীপকুমার বাংলায় প্রযোজনা করেছিলেন ‘রায়বাহাদুর’ ছবিটি। সেখানে তাঁর বিপরীতে দুই নায়িকা মালা সিনহা এবং সবিতা বসু। সবিতা বসুর বিপরীতে ‘তমসা’ ছবিতে তিনি নায়ক। ‘৪২’ ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল অজিত। তাঁর বিপরীতে মঞ্জু দে। এটি মঞ্জু দে অভিনীত প্রথম ছবি। বাংলায় যখন তিনি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় শুরু করলেন, তখন এক স্মরণীয় ছবি হয়েছিল ‘বধূবরণ’। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা হয়েছিলেন বিখ্যাত গায়িকা গীতা দত্ত। এই একটি মাত্র ছবিতে গীতা দত্ত অভিনয় এবং গান দুটি একসঙ্গেই করেছিলেন। ‘প্রথম প্রেম’ ছবিতে তিনি বিশ্বজিতের বাবা হয়েছিলেন। এ ছাড়াও পরবর্তীকালে তিনি অভিনয় করেছেন সংসার, স্বর্ণমহল, ত্রয়ী, স্বর্ণতৃষ্ণা প্রভৃতি ছবিগুলিতে।
পার্শ্বচরিত্রে হিন্দি ছবিতে
নায়কের ভূমিকা ছেড়ে যখন তিনি পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা হয়ে উঠলেন তখন অনেকগুলি হিন্দি ছবিতে তিনি পরপর কাজ করেছিলেন। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল মনোজকুমার পরিচালিত ‘ক্রান্তি’। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করলেন ‘দো আনজানে’ ছবিতে এ ছাড়াও তাঁর অভিনীত হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে রুকসাৎ, খাট্টা মিঠা, নিশানা, মেরা ধরম, ধরমবীর, দুনিয়া প্রভৃতি ছবিগুলি।
পুরস্কার প্রাপ্তি
‘ভুলি নাই’ ছবির জন্য তিনি বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে সেরা নায়কের পুরস্কারটি লাভ করেছিলেন। দিল্লি সিনে ফোরাম অ্যাসোসিয়েশনের পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশ সাংবাদিক সংঘের পুরস্কারের প্রাপক। কলাভূষণ খেতাবও তাঁর জুটেছিল।
২০০১ সালের ২৭ অক্টোবর প্রদীপকুমার পরলোক গমন করেন। ৫০, ৬০-এর দশকে তাঁর সাড়া জাগানো ছবিগুলি আজও দর্শকদের আপ্লুত করে চলেছে। শিল্পীর উদ্দেশে রইল ভক্তিপূর্ণ প্রণাম।