মহিষাসুর আসার আগেই কলকাতা দেখল মেঘাসুরের ভয়াবহ আবির্ভাব। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় তিনশো মিলিমিটারের বেশি মেঘ-ভাঙা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল কলকাতা। আর ততটাই তাৎপর্যপূর্ণ ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাস্তায় নেমে পূর্ণাঙ্গ মনিটরিং করে শহরবাসীকে ভয়াবহ দুর্যোগ-মুক্ত করলেন কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম এবং টিম কলকাতা কর্পোরেশন। মা দুর্গার মতোই মহিষাসুররূপী মেঘাসুরকে বধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! তাঁকে সর্বতোভাবে সহায়তা করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কেএমসি। সিপিএমের (shame on bjp-cpm) হার্মাদ জমানায় প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যরা মেয়র থাকাকালীন সারমেয়দের প্রস্রাবে কলকাতা ডুবে যেত বলে বদনাম ছিল। মিলিমিটারে সেঞ্চুরি পেরোলেই বানভাসি হত কলকাতা। জল নামতে সাত-আটদিন লেগে যাওয়া ছিল রীতিমতো দস্তুর। সেই জায়গায় রাতারাতি ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টির মুখে পড়েও যেভাবে মাত্র ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে ঘুরে দাঁড়াল কলকাতা তাকে মমতা-ম্যাজিক ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়!
মোদি-শাহের সাধের স্মার্ট সিটি আহমেদাবাদ, দেবেন্দ্র ফড়েনবিশ-শিন্ডের মুম্বই থেকে রেখা শর্মার দিল্লি ক’দিন আগেই সামান্য বৃষ্টিতে যেভাবে সমুদ্র হয়ে গিয়েছে এবং তার জেরে দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে নাজেহাল হতে হয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা তথা কলকাতা কতটা এগিয়ে।
বাম জমানার অনেক কুকীর্তির কথা এখনও বাংলার মানুষের দুঃস্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে। ধড়ফড় করে ঘুম ভেঙে উঠে পড়ে বাঙালি।
বিশেষ করে পুজোর মুখে কলকারখানায় লালবাতি জ্বলে যাওয়া রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেসময়। মালিকপক্ষের সঙ্গে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু নেতাদের যোগসাজশে ঠিক পুজোর আগে কলকারখানা বন্ধের নোটিশ পড়ে যেত। বোনাস পাওয়ার মুহূর্তে বেতনই বন্ধ হয়ে যেত। অগণিত পরিবার রাস্তায় নেমে আসত। নতুন জামা-কাপড়, ঠাকুর দেখা দুরস্থ্। গ্রাসাচ্ছদনের চিন্তায় পরিবারগুলো ত্রাহি ত্রাহি রব তুলত। এভাবেই একের পর এক কলকারখানা ধ্বংস করে, বাংলার পরিকাঠামো লাটে তুলে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের আফিম গেলাত সিপিএম নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী স্তালিনিস্ত বামফ্রন্ট সরকার।
আরও পড়ুন-উৎসব উপলক্ষ্যে শিয়ালদহ শাখায় ৩১টি স্পেশাল ট্রেন
আরও একটা কথা এখানে না বললেই নয়। লাল জমানার জলযন্ত্রণার কথা। বস্তুত, কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যটাকে নরক বানানোর পাশাপাশি সামান্য বৃষ্টিতে বানভাসি কলকাতা তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। তখন একটা কথার বেশ প্রচলন ছিল, আবহাওয়া অধিকর্তা রাজেন্দ্রনাথ গোলদারের কোনও ভবিষ্যৎ-বাণী মিলত না বলে, গোলদার সাহেবকে ‘গুলদার’ বলে ডাকা শুরু করেছিল বাঙালি। আর অল্প হাঁচি, কাশি, কুকুর-ব্যাঙের প্রস্রাবের মতো সামান্য বৃষ্টিতে জল-থইথই কলকাতা তো সিপিএমের ব্যর্থতার বড় উদাহরণ ছিল৷ আলিমুদ্দিনের তাত্ত্বিক নেতারা মুখে যতই মারিতং জগতং করুন না কেন, তাঁদের আমলে বারংবার কলকাতা ডুবেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম কলকাতা, লাগোয়া শহরতলির অলিগলি ভাসত নোংরা জলে। যে গরিবের গান গেয়ে ভোট কিনত সিপিএম বানভাসি কলকাতায় সেইসব বস্তি অঞ্চল হয়ে উঠত নরকযাপনের বদ্ধ কারাগার। কত মানুষ যে তড়িদাহত হয়ে, গাছ-চাপা পড়ে সেই জমানায় মারা গিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলের কথাই কেন বা বলি, খোদ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র সাদার্ন অ্যাভিনিউ, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, আশুতোষ মুখার্জি রোড-সহ ভবানীপুর, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের বিস্তীর্ণ এলাকা, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, আমহার্স্ট স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, গিরিশ পার্ক, ধর্মতলা, উল্টোডাঙা, দমদম ইত্যাদি অঞ্চলগুলি অতি-সামান্য মিলিমিটার বৃষ্টিতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত৷ বেহাল বেহালা নামকরণ তো সেই ঘোর বাম জমানায়, যখন বন্দুকের জোরে আর ক্যাডার বাহিনীর ছাপ্পা ভোটে জোর করে কলকাতা পুরসভার দখল নিত সিপিএম। বেহালায় তাদের এই কুকীর্তির অগ্রভাগে সেইসময়ের দাপুটে নেতা নির্মল মুখোপাধ্যায়। কসবা-যাদবপুর-বেহালাকে অ্যাডেড এরিয়ার বকলমে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন পুরসভা জোর করে কুক্ষিগত করেছে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী। মুচিপাড়া থেকে মেছুয়াবাজার বা মেটিয়াবুরুজ সর্বত্র পরিষেবা উঠেছে ডকে। জলযন্ত্রণার সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রথম লাগাম ধরেন কলকাতার তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী সুষ্ঠু পরিকল্পনায় বাস্তবায়িত হয় জল নিকাশির হরেক ব্যবস্থা। মজে যাওয়া খাল-বিল সংস্কারের মাধ্যমে কলকাতার খোলনলচে পুরো পাল্টে ফেলা হয়। তারপর থেকে কলকাতার জল-বিভীষিকা অনেকটাই কমেছে। যদিও কেন্দ্রের দানবিক বিজেপি সরকারের চূড়ান্ত অসহযোগিতায় গঙ্গায় ড্রেজিং ব্যবস্থার অপ্রতুলতায় এখনও শহর তথা রাজ্যের নানা জায়গায় জল জমার কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে। নামে নমামি গঙ্গে আর কাজে নর্দমার নরক, এই হল মোদি-শাহের নেতৃত্বে চলা বিজেপির দ্বিচারিতা।
তবে বাম আমলে সামান্য মিলিমিটার বৃষ্টিতে যেখানে সাত-আটদিন জল দাঁড়িয়ে থাকত সেইসব জায়গায় আজ মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জল নেমে যাচ্ছে। এটাই হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মতৎপরতা।
বাম (shame on bjp-cpm) জমানার এক ‘চাকরিখেকো’ মেয়র নিকাশি থেকে শহরের পরিকাঠামো এবং উন্নয়ন নিয়ে মিটিংয়ে ঘুমে ঢুলতেন। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতার মেয়র জমা জলে নেমে নিজের হাতে জল নিকাশির কাজে হাত লাগান। ক্যাপ্টেন যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেখানে টিম কলকাতা কর্পোরেশন-এর আকাশ-ভাঙা মেঘ থেকে উদ্ভূত ৩০০ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টির জলের কালাপাহাড় নামাতে পারা কী চাট্টিখানি কথা নাকি? সেই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন।
বাম জমানায় যার দুর্নাম ছিল ‘চোরপোরেশন’ বলে সেই কেএমসি আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্ব এবং ফিরহাদ হাকিমের মতো দক্ষ মহানাগরিকের জাদুকাঠির স্পর্শে আজ কর্ম-পোরেশন-য়ে রূপান্তরিত হয়েছে! এরকম নাগরিক পরিষেবা কোনওদিন কলকাতার মানুষ কল্পনা পর্যন্ত করতে পারেনি! যে গোদি মিডিয়া (মোদি মিডিয়া বলাই শ্রেয়) রাতদিন পান থেকে চুন খসলে কলকাতার পুর-পরিষেবা নিয়ে গেল-গেল রব তোলে তারা কিন্তু একটা লাইনও লেখে না বা দেখায় না মারণরোগ ডেঙ্গি-মোকাবিলায় কলকাতা এবং রাজ্যের প্রায় একশো শতাংশ সাফল্যের কথা। জঞ্জাল নিষ্কাশনে পুরসভার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তার সঠিক ব্যবহারে কলকাতা শহরের মানোন্নয়ন নিয়ে এই বাঙালি-বিরোধী গণমাধ্যমগুলোর কোনও ভূমিকা থাকে না। তারা খালি কলকাতা মহানগরির ন্যূনতম খুঁত বের করে বাংলার মান-সম্মান বেআব্রু করতে ব্যস্ত। মুম্বই, আহমদাবাদ, সুরাটের সামান্য বৃষ্টিতে দিনের পর দিন জলে ডুবে থাকা তাদের নজর এড়িয়ে যায়। বাঙালি নির্যাতন, পরিযায়ী বাঙালি খুন তাদের কাছে ধর্তব্যের মধ্যে আসে না। হাউজ পলিসির নামে এতটাই বাংলা বিদ্বেষী তারা!