প্রতিবেদন : বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভূলুণ্ঠিত করে যারা, যারা বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রতিনিয়ত অপমান করে, তাদের কোনও ঠাঁই এই বাংলায় নেই। শুক্রবার পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে, বিজেপিকে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তথ্য ও পরিসংখ্যানে বিদ্যাসাগরের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধার নিদর্শন তুলে ধরেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসে তাঁকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। বাংলার সৌভাগ্য যে, এমন একজন মানুষকে আমরা পেয়েছিলাম। তাঁর কাছে আমরা বাংলা ভাষার বর্ণপরিচয়ের প্রথম পাঠ নিয়েছি। আবার তাঁর কাছেই শিখেছি কীভাবে সবরকম অবিচার-অনাচার-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে মাথা উঁচু করে লড়াই করে যেতে হয়। তিনি বাল্যবিবাহ রোধ ও বিধবাবিবাহ প্রচলন করেছিলেন।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
মুখ্যমন্ত্রীর আরও সংযোজন, তাঁর ভাবনা এবং অদম্য সাহসই আজকের এই আধুনিক বাংলার ভিত্তি। এই বাংলায় বিদ্যাসাগরের ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার আদর্শে যারা বিশ্বাস করে না, তাঁর দ্বিশতবর্ষে কলকাতার বুকে তাঁরই মূর্তি যারা ভূলুণ্ঠিত করে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে যারা প্রতিনিয়ত অপমান করে, তাদের কোনও স্থান নেই। বিদ্যাসাগরের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আমরা অনেক কিছু করেছি। যে মূর্তি বিজেপি ভেঙেছিল, কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে আমরা তা পুনঃস্থাপন করেছি। সারা বাংলা জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা এই মহামনীষীর দ্বিশতবার্ষিকী পালন করেছি। বিদ্যাসাগরের জন্য কী কী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাও এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাস্তার সিংহডাঙা মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটা নতুন তোরণ, আমি যার নাম রেখেছি ‘বর্ণপরিচয়’। এটার নকশা আমার করে দেওয়া। কাজটা করেছে পিডব্লুডি। তোরণটিকে আলো দিয়ে যথাযথভাবে সাজানোও হয়েছে। আমি কিছুদিন আগে ওখানে গিয়ে তোরণটি দেখেও এসেছি। এরই সঙ্গে সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্যায়ন থেকে শুরু করে হাই-মাস্ট আলো লাগানো— সবই করা হয়েছে। এই হাই-মাস্ট আলো লাগানোর কথাও আমি বলে এসেছিলাম। কাজগুলো সব হয়ে গিয়েছে। মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। তাঁর জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামেও করা হয়েছে বীরসিংহ প্রবেশদ্বার। সেটিকেও আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া, বীরসিংহ গ্রামে ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যাসাগর শিশু উদ্যান, ঈশ্বরচন্দ্র স্মৃতি মন্দিরের সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে, যার জন্য খরচ হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। এই কাজগুলো করেছে বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদ। বীরসিংহের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরাই এটা গঠন করেছিলাম। এর আগেও বীরসিংহ গ্রামে তাঁর বসতবাটী সংস্কার-সহ নানান কাজ আমরা করেছি। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কলকাতার বাদুড়বাগানের বাড়ির মিউজিয়ামটিকেও নতুনভাবে করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যাসাগর কলেজকে হেরিটেজ হিসেবে গড়ে তোলা থেকে শুরু করে, বিদ্যাসাগর কলেজেই তাঁর নামে একটি আর্কাইভ তৈরি করা, তাঁর স্মৃতিধন্য কলকাতার মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনকে অনুদান দেওয়া-সহ অনেক কিছুই আমরা করেছি, করছি, করব। এই উন্নয়ন নিয়ে একটি ভিডিও শেয়ার করেন মুখ্যমন্ত্রী।