প্রতিবেদন : উৎসবের আবহে আনন্দে আত্মহারা বাঙালি। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে নেমেছে উদ্বেলিত জনতার ঢল। সাগরে জোড়া নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দিন-রাতের হিসেব ভুলে জনস্রোতে ভাসছে শহরের অলি-গলি, রাজপথ। রবিবার, মহাষষ্ঠীর সকাল। তিথি মেনে সম্পন্ন হয়েছে দেবীর বোধন। তারপরই মণ্ডপে-মণ্ডপে আছড়ে পড়েছে উৎসবপ্রেমী বাঙালির বাঁধভাঙা ভিড়। উত্তরের টালা প্রত্যয় থেকে হাতিবাগান, আহিরিটোলা হয়ে দক্ষিণে সুরুচি, চেতলা, ত্রিধারা; মুঠোফোনে তৈরি করে রাখা লিস্ট মিলিয়ে চলছে একের পর এক ঠাকুর দেখা। সঙ্গে টুকটাক পেটপুজো আর সেলফি তোলার হিড়িক। প্যান্ডেল হোক কিংবা ফুটপাথের খাবারের দোকান, কোথাও তিলধারণের জায়গা নেই। জনস্রোত নিয়ন্ত্রণে শহরের রাস্তায় ২৪ ঘণ্টার জন্য মোতায়েন হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ। রয়েছে পর্যাপ্ত সিভিক ভলান্টিয়ারও। সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি কোথাও যেন কোনওরকম বিশৃঙ্খলা না তৈরি হয়, সেদিকে থাকছে কড়া নজরদারি। উৎসবের মাঝে রাস্তাঘাটে যান চলাচল যতটা সচল রাখা যায়, সেই চেষ্টাও চলছে সমানভাবে।
আরও পড়ুন-ঝলমলে সপ্তমী-অষ্টমী, নবমী থেকে ভারী বৃষ্টি
রবিবার হালকা-মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও সকাল থেকে রোদ-ঝলমলে আকাশ কলকাতায়। মাঝেমধ্যে ইতিউতি দু-এক পশলা বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরমে ঘাম ছুটছে শেষ সেপ্টেম্বরে। যদিও সকালে মায়ের বোধনের পরই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন উৎসবপ্রেমী আট থেকে আশি। শেষ পর্বের কেনাকাটা মিটেছিল আগেই। ষষ্ঠীর সকাল থেকে নতুন কেনা রংবেরঙের পোশাক পরে উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন পুজো পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন মানুষ। কোথাও স্কুল-কলেজের বন্ধুবান্ধবদের ভিড়,
কোথাও সদ্য প্রেমে পড়া যুগলের প্রথম পুজোর স্বাদ আস্বাদন, কোথাও আবার জীবনের বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসা বৃদ্ধ দম্পতির নিজেদের ক্যামেরাবন্দি করে রাখার চেষ্টা। ষষ্ঠীর সকাল থেকে এভাবেই উত্তর থেকে দক্ষিণের পুজো মণ্ডপগুলিতে জনসমুদ্র। ভিড় দেখা যায় কলকাতার পুরনো বনেদি জমিদারবাড়ির পুজোগুলিতেও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় বাড়ছে শহরের রাস্তায়। রাত যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়ও। সন্ধ্যা হতেই আবার এক অন্য রূপ শহরের। আলোর রোশনাইয়ে কলকাতার এমন ভুবনমোহিনী লাস্যময়ী রূপ থেকে যেন চোখ ফেরানো মুশকিল। আলোকিত এই নগরের কোণায় কোণায় এখন শুধুই মহোৎসবের আবহ।