প্রতিবেদন : উত্তরবঙ্গে ঘটে গিয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তারই মধ্যে রেড রোডে পূর্ব নির্ধারিত দুর্গা কার্নিভালের দায়িত্ব। বৃষ্টি-ধসে বিধ্বস্ত পাহাড় ও উত্তরবঙ্গে মন পড়ে থাকলেও, রেড রোডে কার্নিভালের দায়িত্ব পালন করতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে। আর এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়েই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বিরোধীরা। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, কেন কার্নিভাল স্থগিত করা হল না! আসলে কার্নিভাল নিয়ে বিরোধীদের একটা জাত-ক্রোধ আছে। তারা বারবার এই কার্নিভালকে হেয় করতে চায়।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
বিরোধীদের কুৎসা ও মিথ্যা অপপ্রচারের কড়া জবাব দিয়েছে তৃণমূল। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তৃণমূল জানিয়ে দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী শনিবার রাত থেকে উত্তরের পরিস্থিতি নিয়ে নজরদারি চালাচ্ছেন, সমস্ত বিষয় খুঁটিনাটি মনিটরিং করছেন, যা যা করার সব করেছেন। পুলিশ-প্রশাসন কাজ করছে, মুখ্যমন্ত্রী আগামী কালই ঘটনাস্থলে পৌঁছাবেন। তার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে বিরোধীরা। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, গতবারেও ওরা কার্নিভালের ডেটে একটা পাল্টা করার চেষ্টা করেছিল, আজকেও কুৎসায় নেমেছে। এতে কিছু হয় না। জেনে রাখুন, পুজোটা শুধু আনন্দ নয়, পুজোটা একটা সিস্টেম, একটা পর্যটন, পুজোটা একটা ইকোনমি। এদিন যখন বিপর্যয়ের খবর আসছে, তখন কার্নিভালের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। এতগুলো ক্লাব, এতগুলো সংগঠন সবাই প্রস্তুত, বাইরের অতিথিরা এসে গিয়েছেন, সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টাইমিং দিয়ে দেওয়া হয়েছে, লাইভ হবে বাংলার দুর্গাপুজোর কার্নিভালের। তার মধ্যেই কয়েক ঘণ্টার নোটিশে এত বড় অনুষ্ঠান কি স্থগিত করে দেওয়া সম্ভব! যেটুকু না করলে নয়, সেটুকু করেই মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভালের অনুষ্ঠান শেষ করেছেন। একটা পূর্ব নির্ধারিত আয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিরোধীরা মিথ্যা প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। মানুষ নিশ্চয়ই সবটা বুঝবেন।
রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় পুজো শেষে পুজোর কার্নিভালে উৎসব পালন করা হয়। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শহরের রাজপথে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় শতাধিক পুজো কমিটি। বিকেল ৪টে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেড রোডে পৌঁছন। মেগা পুজো কার্নিভাল এবার দশ বছরে পদার্পণ করেছে। উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট অতিথিরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ও সুরে এবারের পুজোর অ্যালবাম ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর গানে নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘দীক্ষা মঞ্জরী’র নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় কার্নিভাল। জমিদার বাড়ির আদলে তৈরি মঞ্চ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, সুজিত বসু, ডাঃ শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, জাভেদ খান, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা, সাংসদ জুন মালিয়া, বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লাভলি মৈত্র-সহ অন্যেরা। হাজির ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কুশ হাজরা, ঐন্দ্রিলা সেন, সোহম চক্রবর্তী, যিশু সেনগুপ্ত, রিয়া সেন, রাইমা সেন, শ্রীতমা ভট্টাচার্য, সৌমীতৃষা কুণ্ডু, ভরত কৌল, রাজা গোস্বামী, রিমঝিম মিত্র, পায়েল দেব, দিব্যজ্যোতি দত্ত-সহ টলিপাড়ায় একঝাঁক তারকা শিল্পী। সকলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের পর কলকাতা ও শহরতলির একের পর এক সেরা পুজো কমিটিগুলি তাদের প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা শুরু করে। বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন পুজো কমিটির শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় মূল কার্নিভাল পর্ব। শ্রীভূমি স্পোর্টিং, ত্রিধারা সম্মিলনী, চেতলা অগ্রণী, বেহালা নতুন দল, হাতিবাগান সর্বজনীন, বাবুবাগান, দমদম পার্ক তরুণ সংঘ, রামমোহন সম্মিলনী, নাকতলা উদয়ন সংঘ, অজেয় সংহতি, দমদম ভারতচক্র, আলিপুর সর্বজনীন, কালীঘাট মিলন সংঘ, যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লি-সহ মোট ১১৩টি পুজো কমিটি এবারের কার্নিভালে অংশগ্রহণ করে। নৃত্য পরিবেশন করেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। আলিপুর বডিগার্ড পুলিশ লাইন্সের পুজোর ট্যাবলোর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও বলিউড অভিনেত্রী মীনাক্ষী শেষাদ্রি।