উদ্ধারে তৎপর রাজ্য প্রশাসন

প্রবল বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড়। তরাই-ডুয়ার্স ও সমতলও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পাহাড়ে একের পর এক এলাকায় ধস নেমেছে।

Must read

প্রতিবেদন : প্রবল বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড়। তরাই-ডুয়ার্স ও সমতলও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পাহাড়ে একের পর এক এলাকায় ধস নেমেছে। অতি-বৃষ্টি ও ভুটানের ছাড়া-জলে সমতলে বন্যা-পরিস্থিতি ভয়াবহ। রবিবার ধসে চাপা পড়ে, জলে তলিয়ে মৃত্যু হয় একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার। মৃতের সংখ্যায় ইতিমধ্যেই ২১ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মিরিকে। প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোনাদা ১, সৌরনি ৬, মানেভঞ্জনে ৩, সিওক ২, মিরিক বস্তিতে ২, সিংবাড়ি ১, মিরিক পুরসভায় ৬ নিয়ে মোট ২১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

আরও পড়ুন-মন পড়ে উত্তরবঙ্গে, তার মাঝেই কার্নিভালের দায়িত্ব পালন

এক রাতের বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি ভয়াবহ। মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে পড়ে। নাগরাকাটার অবস্থাও খুবই ভয়াবহ। সেখানে বন্যা-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যা-দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আবহাওয়া উপেক্ষা করে চলছে উদ্ধারকাজ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে ত্রাণও। প্রবল বর্ষণে ভয়ানক আকার ধারণ করেছে তিস্তা-তোর্সা। প্লাবনে ভেসে গিয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের গন্ডার-সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা-সহ প্রায় সমস্ত নদী। যার ফলে দার্জিলিংয়ের দুধিয়া ব্রিজের পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝুলছে একাংশ। তোর্সার জলে ভেসে গিয়েছে কোচবিহারের রাজপথ। ধসের ফলে শিলিগুড়ির সঙ্গে ঋষিখোলা, পেডংয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, একই অবস্থা মিরিকেরও। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রোহিণী রোডে ধস নামায় সেটিও আপাতত বন্ধ রয়েছে। ধসে উত্তর সিকিমের লাচুংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে ফলে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। খবর মিলেছে, পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে নিখোঁজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার ও কলকাতার যাদবপুরের দুই যুবক।
এদিকে, ভুটানের জলে ভাসতে পারে ডুয়ার্স, জলের চাপে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার-সহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলায়। শনিবার রাতে বৃষ্টির পরিমাণ মারাত্মক আকার নেয় পাহাড়ি এলাকাগুলিতে। টানা বর্ষণের ফলে মাটি আলগা হয়ে যাওয়ায় শনিবার রাত থেকে ধস নামতে শুরু করে। বন্ধ হয়ে যায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিক লেক এলাকা, ধরগাঁও, সারসালি ও জসবিরগাঁওয়ে। ধরগাঁওয়ে কাদা ধসে বহু বাড়ি ভেঙে যায় এবং সেখান থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এনডিআরএফ, পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণকার্য চলছে, তবে অবিরাম বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকার্যে বিপুল বাধা তৈরি হচ্ছে। পাহাড়ি রাস্তাগুলি পিচ্ছিল হয়ে পড়ায় আর্থমুভার ও অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছাতে পারছে না। মিরিক-সুখিয়াপোখরি রোড-সহ একাধিক এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। একে অতিরিক্ত বৃষ্টি তারপর ভুটান ও সিকিম থেকে নদীতে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর ৬ অক্টোবর পর্যন্ত রেড অ্যালার্ট জারি করেছে এবং নতুন ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

Latest article