আগামীকালের জোয়ার নিয়ে সতর্কবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলে তোপ

সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছে ভূটান ও সিকিম থেকে আসা জলের জন্য

Must read

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছে ভূটান ও সিকিম থেকে আসা জলের জন্য। মাত্র ১২ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার প্রবল বৃষ্টি এর সাথে যোগ হয়েছে। এরপরেই তিনি একে ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ”আগামী ৭ ও ৮ তারিখ হাই টাইড আছে। সাবধানে থাকবেন। এমনিতেই ডিভিসি পাঞ্চেত এর জল ছাড়ার জন্য মেদিনীপুর ঘাটাল অনেক জায়গায় জল জমেছে। ওগুলো লো-ল্যান্ড। অনেকবার বলেও যখন কেন্দ্র ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান করল না সেটা আমরাই করছি। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান হলেও ডিভিসি যতদিন এভাবে জল ছাড়বে ততদিন আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা তো চাই ড্যামের দরকার নেই। কি লাভ হল? ভুটান সরকার আমাদের চিঠি দিয়েছে দুঃখপ্রকাশ করে। আমরা ওদের একটু আস্তে জল ছাড়তে বলেছিলাম। একটা জল যখন ছাড়ে আসতে দু’তিন দিন সময় লাগে। এমনিতেই যা ছেড়েছিল তাতে নাগরাকাটা পুরো ডুবে গিয়েছে। ধূপগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, মাটিগাড়া, মিরিক, দার্জিলিং খুব খারাপ অবস্থা। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরিক আর নাগরাকাটা। ওদিকে কালিম্পঙ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। মনে রাখবেন আমরা পর্যটকদের উদ্ধার করেছি। ডায়মন্ড হারবারের একজন নিরুদ্দেশ। বাকিদের আজই নিচে নিয়ে আসছি।”

আরও পড়ুন-সুন্দরবনের কোজাগরী উৎসবের সূচনায় কীর্তি আজাদ

এরপরেই সিকিমের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ”সিকিমে তিস্তা ব্রিজের ওপর ১৪টা হাইডেল পাওয়ার করেছে। জলধারণ করবে কোথায়? সবটাই শিলিগুড়ি, কালিম্পঙ মাটিগাড়াতে এসে পড়ছে। সমস্যা তো আমাদের হচ্ছে। নিজেরা শুধু টাকা পাচ্ছে। সিকিমের মানুষের টাকা নিয়ে শিলিগুড়িতে ব্যবসা করছে। সব খবর আমরা রাখি। দুর্ভাগ্যজনক! ওরা তো ৯০ শতাংশ সাবসিডি পায়। জেনে রাখবেন যখন বাজপেয়ীজি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আমরা সরকারে যাইনি, বেঙ্গল প্যাকেজ করেছিলাম। তখন আমরাই সিকিমকে ঢুকিয়েছিলাম বাংলার পার্শ্ববর্তী বলে। কিন্তু ওরা মানুষের থেকে টাকা পেয়ে মানুষের কাজে না লাগিয়ে শিলিগুড়িতে এসে ব্যবসার কাজে লাগিয়েছে আর দার্জিলিংকে উস্কানি দেয়। আমি যেমন পাহাড়কেও ভালোবাসি আমি সমতলকেও ভালোবাসি। কিছুদিন আগেই আমি উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরেছি আবার এখন যেতে হচ্ছে। কারণ উৎসবের মাঝেও সবথেকে বড় হচ্ছে মানবিকতা।”

আরও পড়ুন-কটকে বিসর্জন ঘিরে ধুন্ধুমার, জখম পুলিশ সহ ২৫, কাঠগড়ায় বিজেপি

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, ”পাহাড়ে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই ৪৫টি ভলভো বাস এবং উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ দফতরের আরও কিছু বাস পাঠানো হয়েছে। প্রায় ২৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে শিলিগুড়িতে। যারা বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন, তাদের যাতে হোটেলগুলো অতিরিক্ত টাকা না নেয়, সেই নির্দেশও পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। অনেকের টাকা-পয়সা, নথিপত্র জলে ভেসে গেছে। আমাদের মানবিক হতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। মিরিক ও নাগরাকাটায় ইতিমধ্যেই কমিউনিটি কিচেন চালু করে দেওয়া হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাবারের সমস্যা না হয়।”

আরও পড়ুন-উত্তরের বিপর্যয়ে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

প্রসঙ্গত, রবিবার নবান্নে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে অরূপ বিশ্বাসকে ধূপগুড়িতে পাঠানো হয়েছে। আছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রথমে যাবেন হাসিমারা, তারপর নাগরকাটা। এদিন তাঁর সঙ্গে থাকছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। মঙ্গলবার মিরিকে যাবেন তিনি ও সেখানকার দুর্গতদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন।

Latest article