আগরতলা : ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত-ত্রিপুরার (tripura-TMC) বিজেপি পুলিশের বাধা— সব পেরিয়ে অবশেষে আগরতলায় দলীয় দফতরে পৌঁছতে পেরেছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নাছোড় মনোভাব-ত্রিপুরা পুলিশের যুক্তির পাল্টা যুক্তি-বিমানবন্দরের সামনেই আচমকা ধরনায় বসে পড়া-হেঁটেই পার্টি অফিসে যেতে শুরু করা— এসব দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে তাদের দলীয় সদর দফতরে যেতে দিতে বাধ্য হয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু বিজেপির পরিকল্পনামাফিক তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে বিমানবন্দরেই আটকে রাখতে চেয়েছিল পুলিশ। প্রতিনিধি দলের তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সামনে বিজেপির সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। আগরতলায় তৃণমূলের সদর দফতরে পৌঁছে সরেজমিনে তাঁরা খতিয়ে দেখেন কীভাবে বিজেপির গুন্ডারা তছনছ করেছে সব। স্থানীয় তৃণমূল (tripura-TMC) নেতৃত্ব সবটা দেখান। অবশ্য এই সফরের ঘোষণার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি দেওয়া শুরু করেছিল বিজেপির গুন্ডারা। কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার আগে সেকথা জানিয়ে যান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এদিন ত্রিপুরা পুলিশের ডিজির সঙ্গেও দেখা করে তাঁকে সব অভিযোগ প্রমাণ-নথি-সহ দিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্য সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, সায়নী ঘোষ, দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ও সাংসদ সুস্মিতা দেব। ত্রিপুরার রাজ্যপালের কাছেও তাঁরা সময় চেয়েছেন দেখা করার। ডিজির সঙ্গে দেখা করার পর প্রতিমা মণ্ডল ও কুণাল ঘোষ জানান, আমরা সবটা জানিয়ে অনুরোধ করেছি দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তাই নয় অতীতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলা-সহ সায়নী ঘোষ, সুদীপ রাহা ও অন্য তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে সেই অভিযোগগুলির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে পার্টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ সুয়োমোটো মামলা করবে নাকি আমরা অভিযোগ করব সেটা স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ডাবল ইঞ্জিন সরকারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এতটা ব্যর্থ মানিক সাহা প্রশাসন, যে সেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দোহাই দিয়েই বিমানবন্দর থেকে শহরে পা রাখতে বাধা পুলিশের। তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিমানবন্দরের সামনেই এর প্রতিবাদে অবস্থানে বসে পড়েন।
আরও পড়ুন- বাংলার মানুষের ভোটাধিকার কাড়ার চক্রান্ত, প্রতিবাদ দেশবাঁচাও গণমঞ্চের
তৃণমূল প্রতিনিধি দলের অভিযোগ, যে গাড়ি তাঁদের নিতে এসেছিল তার চালকদের হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কুণাল ঘোষ বলেন, এর পরে তাঁরা প্রিপেড ট্যাক্সি বুক করতে যান, কিন্তু সেখানেও তাঁদের গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়নি। বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, বিমানবন্দর ছেড়ে বেরতে পারবে না তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। তীব্র কটাক্ষ করে পুলিশকে কুণাল বলেন, আপনারা দুটো অটো ডেকে দিন, আমরা তাতে চড়েই যাব।
দলীয় দফতরে বসেই তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, বিজেপির নেতারা বাংলায় ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেন, ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৬০ দিন বাংলায় ফাইভ স্টার হোটেল ভাড়া করে পড়ে থাকেন— কোনও বাধা পান না। আর বিজেপিশাসিত ত্রিপুরায় তৃণমূল প্রতিনিধিরা এলেই বাধার মুখে পড়েন! এতেই বোঝা যায় ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। বাংলার ট্রিপল ইঞ্জিন সরকার— মা-মাটি-মানুষের সরকারে গণতন্ত্র আছে। কুণাল ঘোষ বলেন, খগেন মুর্মুর সঙ্গে যা হয়েছে সেটা তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দেখে এসেছেন। কিন্তু ত্রিপুরাতে বিজেপির আমলে এলেই গাড়ি ভাঙচুর-মারধর-হেনস্থা করা হয়। বাংলায় তো দিব্যি বিজেপি নেতারা ঘুরে বেড়ান। বিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যান। রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে কুৎসা করেন। কেউ তো কিছু বলে না! তবে এখানে এরকম কেন হবে? এদিন দিনভর ত্রিপুরায় নানা কাণ্ড-কারখানা চলার সময় টানা যোগাযোগ রেখে চলেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।