কিয়েভ: উচ্চশিক্ষার জন্য রাশিয়া গিয়েছিলেন গুজরাতের ছাত্র সাহিল। পরিস্থিতির চাপে তিনি বাধ্য হন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে পুতিন-সেনার হয়ে লড়তে। যুদ্ধক্ষেত্রেই এবার ইউক্রেন সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন মোদিরাজ্যের ২২ বছরের ছাত্রটি। ওই ভারতীয় তরুণকে যুদ্ধবন্দি করেছে জেলেনস্কির দেশ। ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন খতিয়ে দেখছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক।
এর আগে বিভিন্ন সময় ইউক্রেন দাবি করেছে, উত্তর কোরিয়া থেকে ভারত, বিভিন্ন দেশের কমবয়সী তরুণদের ভাড়াটে সেনা হিসাবে নামিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গত জানুয়ারি মাসে ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছিল, রাশিয়ায় কাজ ও থাকার জন্য গিয়ে চাপে পড়ে রণাঙ্গনে যাওয়া ১২৬ জনের মধ্যে ১২ জন ভারতীয় নাগরিক ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। ১৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। পণবন্দি হওয়ার পর গুজরাতের পড়ুয়া সাহিলের ভিডিওবার্তা প্রচার করেছে কিয়েভ। তাতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের সক্রিয় ভূমিকার দাবি উঠেছে।
আরও পড়ুন-এআই ভিডিওতে বিদ্রুপ দেশের প্রধান বিচারপতিকে, তবু নীরব মোদি সরকার!
প্রসঙ্গত, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে শুরু থেকেই নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে দু’দেশের মধ্যে আলোচনার কথা বলেছে নয়াদিল্লি। আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের লাগাতার চাপ সত্ত্বেও মস্কোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয়নি ভারত। সেইসঙ্গে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনা সম্পর্কে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার হয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন ২২ বছর বয়সি সাহিল মহম্মদ হোসেন। তিনি ভারতীয় এবং গুজরাতের মোরবির বাসিন্দা। পুতিনের দেশের হয়ে ভাড়াটে সেনা হিসাবে তিনি জেলেনস্কির দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেন। ‘দ্য কিভ ইন্ডিপেনডেন্ট’-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারত থেকে রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে যান ২২ বছরের ওই তরুণ। রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। রুশ প্রশাসনের চাপেই তিনি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভাড়াটে সেনা হিসাবে নামতে বাধ্য হন।
ইউক্রেনের তরফে পণবন্দি সাহিলের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তার সত্যতা যাচাই করা না গেলেও সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, রাশিয়ায় মাদক সংক্রান্ত একটি মামলায় তাঁর সাত বছরের জেল হয়েছিল। কারাবাসের সময় তাঁকে একটি বিকল্প সুযোগ দেয় রুশ সেনা। বলা হয়, কারাবাসের শাস্তি এড়াতে চাইলে তাঁকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়তে হবে। এজন্য চুক্তিপত্রে সই করানো হয়েছিল। রাশিয়ায় কারাবাস এড়াতে ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেন বলে জানান সাহিল। তাঁকে বলতে শোনা যায়, আমি জেলে থাকতে চাইনি। তাই স্পেশ্যাল মিলিটারি অপারেশন-এর চুক্তিপত্রে সই করেছিলাম। কিন্তু এখান থেকে এখন মুক্তি চাই আমি।
জানা গিয়েছে, ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে সাহিল জানিয়েছেন, রুশসেনা তাঁকে ১৬ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়। গত ১ অক্টোবর তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছিল। লড়াইয়ের শুরুতেই ইউক্রেন সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। রাশিয়ায় আর ফিরতে চান না বলে জানিয়েছেন ওই ভারতীয় তরুণ। গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রক এখন কী পদক্ষেপ করে সেটাই দেখার।