দেশের হাওয়া-বদলে কাঠগড়ায় রাজস্থানে বৃক্ষরোপণ: গাছ লাগানো ভাল, কিন্তু যেখানে-সেখানে নয়

Must read

দেবনীল সাহা
কখনও অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহে জেরবার জনজীবন। কখনও ব্যাপক অতিবৃষ্টিতে পাহাড় থেকে সমতলে বন্যা-ধস-হড়পা বান। আবার কখনও হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় থরহরিকম্প আসমুদ্রহিমাচল। আবহাওয়ার খামখেয়ালে চরমভাবাপন্ন শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত নাগরিক-জীবন। শেষ সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরের শুরুর প্রবল বর্ষণে ভেসেছে বাংলার শহর থেকে শৈলশহর। শুধু বাংলাই নয়, এবছর গোটা বর্ষাকাল জুড়ে সারা দেশেই যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। জলমগ্ন হয়েছে অর্ধেক ভারত। লাগাতার বৃষ্টি-প্লাবনে জেরবার হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, সিকিম। বন্যায় ভেসেছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র। আবার আসন্ন শীতেও ভয়ঙ্কর শৈত্যপ্রবাহের ইঙ্গিত দিয়েছে মৌসম ভবন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতলতম বছর হতে চলেছে ২০২৫ সাল। আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তনের নেপথ্যে উঠে আসছে অতি পরিচিত বিশ্ব উষ্ণায়নের তত্ত্ব। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবছর সারা ভারতে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। এই সাধারণের চেয়ে বেশি বৃষ্টি এখন প্রতিবছরই তার আগের বছরের তুলনায় বাড়বে। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে এর প্রধান কারণ, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার অভাব!
ভারতে বর্ষা মানে সাধারণত বোঝায় মৌসুমি বায়ুর আনাগোনায় বৃষ্টির মরশুম। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতের হাওয়া বদলেছে দ্রুত। এখন মৌসুমি বায়ুর বদলে নিম্নচাপ আর মেঘভাঙা বৃষ্টিতেই জেরবার ভারত। চলতি বছরের বর্ষায় যেমন টানা বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর বন্যা-ধস-হড়পা বানের সাক্ষী থেকেছে প্রায় গোটা দেশ। ভারতের এই জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ম্যানমেড’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশবিদ তথা বিজ্ঞানী সুজীব করের কথায়, ভারতে বর্ষা প্রধানত মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু প্রায় ১২-১৫ বছর ধরে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা কমেছে। এখন বৃষ্টি হয় শুধুই নিম্নচাপে। সাধারণত, উত্তর-পশ্চিম ভারতে রাজস্থানের থর মরুভূমির উপর একটা সক্রিয় নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার কথা। সেটাই বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে জলীয় বাষ্পকে টেনে আনে। একেই আমরা মৌসুমি বায়ু বলে চিনি। কিন্তু এখন সেই নিম্নচাপটা তৈরিই হয় না। তার কারণ, রাজস্থানে বৃক্ষরোপণ (Tree plantation)।
সুজীববাবুর সংযোজন, ১৯৮৩ সালে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যে রাজস্থানে বিপুল বৃক্ষরোপণ (Tree plantation) হয়েছিল। কিন্তু ফল হয়েছে বিপরীত। কারণ, গাছ লাগানো ভাল, কিন্তু সব জায়গায় নয়। তাই তখন থেকেই ভারতের জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি শুরু। আগে একটাই নিম্নচাপ হত, এখন একাধিক নিম্নচাপ হচ্ছে। যা সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্পকে টেনে আনছে। বায়ুমণ্ডলে বাষ্পীয় চাপ বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ, যার গভীরতা ও ঘনত্ব অনেক বেশি। এর জন্যই এখন অতিবৃষ্টির এত বাড়বাড়ন্ত। এটা বছর বছর আরও বাড়বে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুমেরু-কুমেরুর বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। মোট ক্ষেত্রফলও বাড়ছে। স্বাভাবিকের থেকে বেশি জলীয় বাষ্প তৈরি হচ্ছে। জলচক্র আরও দ্রুত হচ্ছে। আরও সক্রিয় হচ্ছে এল-নিনো এবং লা-নিনা। আর এই লা-নিনার অতি-সক্রিয়তার প্রভাবেই এবার ভারতে হাড়কাঁপানো ভয়ঙ্কর ঠাণ্ডা পড়বে।

আরও পড়ুন-রেশম শিল্পের গুণমান বৃদ্ধির উদ্যোগ উৎপাদনে আসছে আধুনিক প্রযুক্তি

Latest article