যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আড্ডা টাইমসে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘ফেলুদা ফেরত সিজন টু’। সত্যজিৎ রায়ের কাহিনি অবলম্বনে ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে’। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। পাহাড়ের বুকে রহস্যের উন্মোচনে নেমেছেন ফেলুদা। সঙ্গে তোপসে আর জটায়ু। এই ত্রয়ীর অভিযান বরাবরের মতোই মন কেড়েছে দর্শকদের। কারণ বাঙালির কাছে ফেলুদা এভারগ্রিন। কখনও পুরনো হয় না।
ফেলুদার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন টোটা রায়চৌধুরী। এর আগেও তিনি এই চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি, তাকানো, বাংলা ও ইংরেজি উচ্চারণ, হাঁটা, ধারালো দৃষ্টি— সব মিলে যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা চরিত্র। স্বভাবে, ম্যানারিজমে, সংলাপে, চেহারায় পুরোপুরি ফেলুদা হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন-কর্মীবৈঠক হল, প্রতিনিধিদল ফেরার পর স্বাভাবিক ছন্দে ত্রিপুরা তৃণমূল
জটায়ু চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। তিনিও ফাটিয়ে দিয়েছেন। তোপসে চরিত্রে কল্পন মিত্র আগের তুলনায় অনেকটাই ভাল। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছেন। সবথেকে বড় কথা, এই গল্পে আছে মগনলাল মেঘরাজ। চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এবারেও কামাল করেছেন। অগ্রজদের অনুকরণ বা অনুসরণে না গিয়ে চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন নিজের মতো করে। ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন দর্শকমনে।
টানটান ছয় এপিসোডের সিরিজ। রীতিমতো জমজমাট। গল্পের প্রেক্ষাপট কাঠমান্ডু। সময়ের দাবি মেনে সামান্য বদল ঘটানো হয়েছে। মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেটের ব্যবহার এসেছে। তবে কোথাও আরোপিত মনে হয়নি। সমস্তকিছু এসেছে যুক্তিপূর্ণভাবে।
২০২০ সালে ‘ফেলুদা ফেরত’ দিয়েই ফেলুদাকে নিয়ে পরিচালনা শুরু করেন সৃজিত। গত ডিসেম্বরেই মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালনায় ‘ভূস্বর্গ ভয়ংকর’। সেইসময় তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, সেই সিরিজই ফেলুদাকে নিয়ে তাঁর পরিচালনায় শেষ সিরিজ। সেখান থেকে ফের ফেলুদাকে নিয়ে তাঁর নতুন সিরিজ আসায় প্রশ্ন উঠলে বলা যায়, সৃজিতের এই ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে’ প্রায় ছয় বছর আগে তৈরি। যার মুক্তি আটকে ছিল দীর্ঘদিন, নানা জটিলতায়।
কাঠমান্ডুর পথেঘাটে রহস্যের সমাধানে নেমেছেন ফেলুদা ও তাঁর টিম। সৃজিতও ঘোষণা করেছেন ফেলুদা নিয়ে আর সিরিজ নয়। তাহলে তিনি কি ফেলুদার গল্প নিয়ে ছবি তৈরির কথা ভাবছেন? সেটা হলে এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না। আশা করা যায়, অনুমতি তিনি ঠিকই পেয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন-মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য
ও মোর দরদিয়া
দর্শকদের কাছে ‘বাহামণি’ নামেই পরিচিত রণিতা দাস। ‘ইষ্টি কুটুম’ সিরিয়াল তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। মাঝপথেই সরতে হয় বাহার চরিত্র থেকে। এরপর দীর্ঘ এক দশক কেটে গিয়েছে। ছোটপর্দায় আর দেখা যায়নি তাঁকে। মাঝে ওয়েব সিরিজ-সিনেমায় কাজ করেছেন। তবে সিরিয়ালে তাঁকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলেন দর্শকেরা। সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দশ বছর পর, ৭ অক্টোবর ছোটপর্দায় কামব্যাক করলেন। স্টার জলসার ‘ও মোর দরদিয়া’ মেগা সিরিয়ালের মাধ্যমে। সম্প্রচারিত হয়েছে কয়েকটি পর্ব।
নিম্নবিত্ত ঘরের গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয় করছেন রণিতা। দেখানো হয়েছে, তিনি গর্ভবতী। পুজোর দিন তাঁদের বাড়িতে তাঁর স্বামীর খোঁজে হানা দেয় কয়েকজন লোক। স্বামীর খোঁজ করতে গিয়ে ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, তাঁর স্বামী সব কিছু গুছিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি আটছেন।
তাঁর স্বামী একজন অসৎ ব্যক্তি। বাড়িতে গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখেই পালিয়ে যান। ঠিক সেই সময় প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রণিতা রাস্তায় এসে পড়েন। চারিদিকে তখন উৎসবের আবহ। আলোর গেট, ঢাকের শব্দ, সকলের ঠোঁটে লেগে আনন্দের হাসি। এত আনন্দ আয়োজনের মধ্যে তাঁর শরীরের অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে। শেষে একটা গাড়ির সামনে হঠাৎ পড়ে যান। জ্ঞান হারান। যখন জ্ঞান ফেরে, তখন তিনি হাসপাতালের বেডে। কোলে সদ্যোজাত। কিন্তু এই পর্যন্ত কেমন করে এসে পৌঁছলেন? জানতে পারেন, এক ব্যক্তি তাঁকে নিয়ে এসেছেন। এই সহৃদয় ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করছেন বিশ্বজিৎ ঘোষ। স্বামীর চরিত্রে ফাহিম মির্জা। তনুকা চট্টোপাধ্যায় এবং সোমাশ্রী ভট্টাচার্য আছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।
সুরিন্দর ফিল্মসের ‘ও মোর দরদিয়া’ পরিচালনা করছেন রাজীব বিশ্বাস। দর্শকেরা খুশি রণিতার কামব্যাকে। এপিসোডগুলো তাঁদের ভাল লেগেছে। সবে তো শুরু। বাহামণির লড়াই দেখেছেন সবাই। এবার দেখতে শুরু করেছেন বাণীর লড়াই। এ যেন এক বাঘিনির লড়াই। হার মানার প্রশ্নই ওঠে না।