নয়াদিল্লি: দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসলে ধর্ষণই করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রীকে। পুরো বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও হস্টেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্যাতিতার বয়ানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পুরো বিষয়টা। বেরিয়ে পড়েছে আসল ঘটনা। চাপে পড়ে শেষপর্যন্ত গণধর্ষণের মামলা দায়ের করতে বাধ্য হল পুলিশ।
তফাতটা এখানেই। দুর্গাপুরে ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণের ঘটনায় অত্যন্ত দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। তবুও এই ঘটনা নিয়ে একের পর এক মিথ্যাচার করে চলেছে বিজেপি, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে নির্লজ্জভাবে। অথচ ঠিক তখনই তাদের নিজেদের শাসিত দিল্লিতে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের এখনও চিহ্নিতই করতে পারল না পুলিশ— গ্রেফতার তো দূরের কথা! অমিত শাহর গেরুয়া পুলিশের এই চূড়ান্ত অপদার্থতায় ক্ষোভে ফুঁসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। প্রশ্ন উঠেছে, অপরাধীদের কি আড়াল করার চেষ্টা করছে বিজেপির প্রশাসন? তুমুল জনরোষের মুখে পুলিশ শুধুমাত্র জানিয়েছে, ১৮ বছর বয়সি নির্যাতিতা ওই বিটেক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ৪ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্রমাগত ব্ল্যাকমেল, বিকৃত ছবি, হুমকি এবং জোর করে গর্ভপাতের পিল খাওয়ানোরও অভিযোগের ভিত্তিতেও দায়ের করা হয়েছে মামলা।
আরও পড়ুন-নয়া ঘূর্ণাবর্ত, এখনই শীতের অনুভূতি নয়
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল, রবিবার সন্ধ্যায় এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অদ্ভুত উদাসীনতা এবং নির্যাতিতার ছাত্রীর সঙ্গে অসহযোগিতা। এখানেই শেষ নয়, ঘটনার কথা বলতে গেলে উল্টে দায়ী করে নির্যাতিতা ছাত্রীকেই এবং নির্বিকারভাবে বলে স্নান করে পোশাক পাল্টে নিতে। রহস্যজনক কারণে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বারণ করা হয় তাঁকে। এফআইআরে ওই ছাত্রী যে অভিযোগ এনেছেন তা সত্যিই গভীর উদ্বেগের। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যৌননির্যাতন এবং গণধর্ষণের অপচেষ্টার ঘটনার ২-৩ দিন আগে অজানা অ্যাড্রেস থেকে তাঁর কাছে হুমকি মেল এসেছিল। ময়দানগড়ি ক্যাম্পাসের মধ্যে গেস্ট হাউসের কাছে শনিবার রাত ১১টা ২৭ মিনিটে ছাত্রীটিকে দেখা করতে বলা হয়েছিল। ছাত্রীটি অবশ্য সেখানে যাননি। পরের দিনই নির্যাতিতার কাছে আসে আরও একটি মেল। অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় তাঁকে হস্টেল ব্লকের বাইরে বেরিয়ে আসতে বলে। এখানেই শেষ নয়, রবিবার হোয়াটস অ্যাপ এবং টেলিগ্রামে পাঠানো হয় তাঁর বিকৃত ছবি। হুমকি দেওয়া হয় ৩ নম্বর গেটের কাছে না এলে ছড়িয়ে দেওয়া হবে ছবিগুলো।
ঠিক কী ঘটেছিল রবিবার সন্ধ্যায়? নির্মাণকাজের জায়গায় বসেছিল অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষী। সে প্রথমে ডেকে আনে এক মধ্যবয়স্ক মানুষকে। তারপরে আসে তুলনামূলক কমবয়সের আরও দু-জন। তারপর ৪ জন মিলে তাঁকে জোর করে নিয়ে যায় কনভোকেশন সেন্টারের কাছে একটি ফাঁকা ঘরে। শ্লীলতাহানি, যৌননির্যাতনের পরে তাঁকে গণধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। মুখে জোর করে পিল গুঁজে দিয়ে কানে কানে বলা হয়, তোমার সন্তানকে হত্যা করব আমি!