চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: সিনিয়র ও রিজার্ভ দল মিলিয়ে চলতি মরশুমে প্রথম দুটি ডার্বি জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। ডুরান্ড কাপে হারের জবাব দিয়ে যুবভারতীতে আরও একটি বড় ম্যাচ জিতল মোহনবাগান। সেই সঙ্গে ২২ বছর পর আইএফএ শিল্ড ঘরে তুলল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বিশাল কাইথের বিশ্বস্ত হাতে ফাইনালে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে মরশুমের প্রথম খেতাব জিতল জোসে ফ্রান্সিসকো মোলিনার দল। হামিদ ও অপুইয়ার গোলে ১২০ মিনিটের লড়াই ছিল ১-১। অনেক দিন পর ডার্বিতে এতটা কর্তৃত্ব নিয়ে খেলল ইস্টবেঙ্গল। মহম্মদ রশিদ, সাউল ক্রেসপো, মিগুয়েল ফেরেরা ও নাওরেম মহেশরা অসাধারণ ফুটবল খেললেন। গতি, ফিটনেসে অনিরুদ্ধ থাপা, লিস্টন কোলাসো, জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিন্সদের টেক্কা দিলেন তাঁরা। জেমি, কামিন্স চূড়ান্ত ব্যর্থ। অনেক খামতির মধ্যেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ও ঘরে-বাইরে প্রবল চাপ কাটানোর মরিয়া তাগিদ দেখিয়েই শিল্ড ফাইনালে বাজিমাত করল মোলিনা ব্রিগেড। চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানকে শিল্ড তুলে দিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের তুঘলকি ফরমান, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে
টাইব্রেকারে ইস্টবেঙ্গলের জয় গুপ্তার শট বিশাল বাঁচিয়ে দেওয়ার পর মোহনবাগান গ্যালারি প্রতিবাদের নীরবতা ভেঙে ফেলে। চতুর্থ শটে দিমিত্রি পেত্রাতোস ও শেষ শটে মেহতাব সিং বল জালে জড়াতেই মোহনবাগান গ্যালারিতে অকাল দীপাবলি। সমর্থকদের গর্জন, আতশবাজির বিস্ফোরণে মুখরিত যুবভারতীর আকাশ। অভিমান ভেঙে সমর্থকদের দিকে ছুটে গিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়ে উল্লাস বিশাল, অলড্রেডদের। শুরু থেকে ছিল অচেনা ডার্বির মেজাজ। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টু-এ ইরানে ম্যাচ খেলতে না-যাওয়া নীরব প্রতিবাদ চলল শিল্ড ফাইনালেও। খেলা শুরুর পর গ্যালারি থেকে সবুজ-মেরুন পতাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। মোহনবাগানের আক্রমণের সময়ও নীরব থাকার চেষ্টা করলেন সমর্থকেরা। তবে মাঠের বাইরের গুমোট পরিবেশের চাপ যে বাগান ফুটবলারদের উপর জাঁকিয়ে বসেছিল, তাঁদের খেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। যে চাপের কারণেই পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করে মোহনবাগান। জেসন কামিন্স বল উড়িয়ে দেন ক্রসবারের উপর দিয়ে। মোলিনার ছেলেরা কী করতে চাইছিলেন, বোঝা যাচ্ছিল না। তুলনামূলকভাবে ইস্টবেঙ্গলকে অনেক ফিট, চনমনে লাগছিল। মাঝমাঠে রশিদ, ক্রেসপো ও মহেশের ত্রিফলা বারবার ঝাঁকুনি দিল মোহনবাগান রক্ষণকে।
মোহনবাগান প্রথম ২৫ মিনিটে দুটো সহজ সুযোগ পেয়েছিল। ম্যাকলারেন ও সাহাল তা হেলায় হারান। ৩০ মিনিটে ম্যাকলারেনকে বক্সে আনোয়ার আলি ফেলে দেওয়ার পর পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। কামিন্স বল বাইরে মারেন। এরপর মিনিট দশেকের একটি স্পেলে অস্কারের ছেলেদের দাপট। এই সময়ের মধ্যে হ্যাটট্রিক করে ফেলতে পারতেন হামিদ। ৩৭ মিনিটে নাওরেম মহেশের অসাধারণ পাস থেকে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন মরোক্কান স্ট্রাইকার। কয়েক মিনিট পর হামিদের শট বিশাল কাইথকে পরাস্ত করে পোস্টে প্রতিহত হওয়ায় ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করে। ৪৪ মিনিটে ফের মহেশ-হামিদ যুগলবন্দি। এবার হামিদের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। তবে প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে অপুইয়ার গোলে সমতা ফেরায় মোহনবাগান।
আরও পড়ুন-যন্ত্রণা থেকে সৌন্দর্যের উত্থান
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যর্থ কামিন্সকে তুলে রবসন রোবিনহোকে নামান মোলিনা। কিছু পর সাউল, হামিদ ও লালচুংনুঙ্গাকে তুলে মিগুয়েল, হিরোশি ও জয় গুপ্তাকে নামান অস্কার। মিগুয়েলের নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয়ার্ধে অধিকাংশ সময়েই ফাইনাল থার্ডে দাপট দেখিয়েছে। ম্যাচের সংযুক্ত সময়ের শেষ মিনিটে রবসনের কর্নার থেকে মেহতাবের হেড ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার গিল দুর্দান্তভাবে না বাঁচালে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ম্যাচ জিততে পারত মোহনবাগান। অতিরিক্ত সময়ে জেমিকে তুলে দিমিত্রিকে নামিয়ে ম্যাচ ঘোরাতে চেয়েছিলেন মোলিনা। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে বিশালের হাতে বাজিমাত। অস্কার টাইব্রেকারের জন্য দেবজিৎকে নামিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর রণনীতি খাটেনি। মোহনবাগানের হয়ে পাঁচটি গোল করেন রবসন, মনবীর, লিস্টন, দিমিত্রি ও মেহতাব।