নিয়ম ভেঙে দেদার বাজি, দীপাবলি শেষ হতেই দূষণের বিষে শ্বাসরুদ্ধ দিল্লি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বিজেপি সরকার

দীপাবলির পরের দিন সকালে দূষণের বিষে শ্বাসরুদ্ধ রাজধানী দিল্লি! রবিবার থেকেই দিল্লিতে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। সোমবার রাতে নাগাড়ে পোড়ানো হয় আতশবাজি

Must read

নয়াদিল্লি : দীপাবলির পরের দিন সকালে দূষণের বিষে শ্বাসরুদ্ধ রাজধানী দিল্লি! রবিবার থেকেই দিল্লিতে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। সোমবার রাতে নাগাড়ে পোড়ানো হয় আতশবাজি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, বেঁধে দেওয়া সময়, হুঁশিয়ারির পরেও আটকানো গেল না দিল্লির দূষণের মাত্রা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিল্লি ঢাকল ধোঁয়াশার চাদরে। দেদার বেআইনি শব্দবাজি দিল্লি, এনসিআর এলাকায়, রুখতে ব্যর্থ দিল্লির বিজেপি সরকার ও অমিত শাহের পুলিশ।

আরও পড়ুন-বোল্লা কালীপুজোয় আইন মেনেই বলি

দীপাবলিতে ভয়াবহ দূষণের বিষে দেশে সবথেকে বেশি দূষণ হয়েছে রাজধানীতে। দিল্লির একিউআই বেড়ে ১ হাজার ১২১। ৫ বছরে এবার দূষণ সবথেকে বেশি। শহরের ৩৮টি দূষণ মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ৩৬টিই রেড জোনে। দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদের হিসেবে ৪টি মনিটরিং স্টেশন ‘সিভিয়ার’ বা অতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিত সময়সীমা অগ্রাহ্য করে যথেচ্ছভাবে বাজি ফাটানোর কারণে দীপাবলির পরের দিন মঙ্গলবার দিল্লি বিষাক্ত ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে যায়। এর ফলে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ‘বিপজ্জনক’ শ্রেণিতে নেমে এসেছে। তথ্য অনুযায়ী, উৎসবের মরশুমে দূষণের মাত্রা আরও খারাপ হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ৭টায় গড় এ কিউ আই দাঁড়িয়েছিল ৪৫১, যা জাতীয় গড়ের প্রায় ১.৮ গুণ বেশি। দীপাবলির রাতেই বাতাসের গুণগত মান ‘খুব খারাপ’ শ্রেণিতে প্রবেশ করেছিল। দিল্লির পার্শ্ববর্তী শহর নয়ডা এবং গুরুগ্রামের পরিস্থিতিও এর থেকে ভাল ছিল না। মঙ্গলবার সকালে নয়ডাতে একিউআই ছিল ৪০৭ এবং গুরুগ্রামে ৪০২, দুটিই ‘বিপজ্জনক’ শ্রেণিতে পড়েছে। গত বছর দীপাবলির পর দিল্লির সামগ্রিক বাতাসের মান ‘খুব খারাপ’ শ্রেণিতে রেকর্ড করা হয়েছিল, যেখানে একিউআই ছিল ৩৫৯। এই বছর ওয়াজিরপুর (৪৩৫), দ্বারকা (৪২২), অশোক বিহার (৪৪৫) এবং আনন্দ বিহার (৪৪০)-এর মতো বেশ কয়েকটি মনিটরিং স্টেশন ‘বিপজ্জনক’ স্তরের একিউআই রেকর্ড করেছে। উল্লেখ্য, ০ থেকে ৫০ পর্যন্ত একিউআই-কে ‘ভাল’, ১০১ থেকে ২০০-কে ‘মাঝারি’, ৩০০ থেকে ৪০০-কে ‘খুব খারাপ’ এবং ৪০১ থেকে ৫০০-কে ‘বিপজ্জনক’ বলে গণ্য করা হয়। ২০২০ সাল থেকে প্রতি শীতে দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা এই জাতীয় রাজধানীতে দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। যদিও এই বছর সুপ্রিম কোর্ট ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে ‘গ্রিন ক্র্যাকার্স’ বা পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানোর অনুমতি দিয়েছিল, তবে তা কেবল দুটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য— সকাল ৬টা থেকে ৭টা এবং রাত ৮টা থেকে ১০টা। কিন্তু সেই নির্দেশ কেউ মানেনি, কারণ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে ও পরেও বাজি ফাটানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে মিশে গেলে গ্রিন ক্র্যাকার্সও কম বিষাক্ত হয় না। পিটিআই-এর খবর অনুসারে, দীপাবলির রাতে দিল্লি ফায়ার সার্ভিস ২৬৯টি জরুরি কল পেয়েছিল, তবে কোনও বড় ধরনের দুর্ঘটনা, প্রাণহানি বা বড় আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইতিমধ্যে, বাতাসের গুণগত মান খারাপ হতে শুরু করায় গত সপ্তাহেই কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান-এর স্টেজ ২ কার্যকর করেছে, যার মধ্যে ধুলো নিয়ন্ত্রণের তীব্রতা বৃদ্ধি, গণপরিবহণ পরিষেবা সম্প্রসারণ এবং ডিজেল জেনারেটর সেটের উপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দিল্লি-এনসিআর-এর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে রাস্তায় যান্ত্রিক সুইপিং এবং জল ছিটানোর কাজ শুরু করেছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, শক্তিশালী বাতাসের অভাবে ধোঁয়াশা বা স্মগ পরিস্থিতি সম্ভবত বজায় থাকবে। মঙ্গলবার সকালে কয়েকটি এলাকায় আংশিক মেঘলা আকাশ দেখা যায়।

Latest article