প্যাংগং হ্রদের কাছে নতুন বিমানঘাঁটি বানাচ্ছে চিন

তিব্বতের পূর্বদিকের প্যাংগং হ্রদের ধারে, ২০২০ সালের সীমান্ত-সংঘর্ষের জায়গা থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে চিন দ্রুতগতিতে একটি নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে।

Must read

নয়াদিল্লি : তিব্বতের পূর্বদিকের প্যাংগং হ্রদের ধারে, ২০২০ সালের সীমান্ত-সংঘর্ষের জায়গা থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে চিন দ্রুতগতিতে একটি নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেখানে একটি নতুন চিনা বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের ঘর, সেনাদের থাকার জায়গা (ব্যারাক), গাড়ি রাখার শেড, অস্ত্রশস্ত্র রাখার গুদাম এবং রাডার বসানোর স্থান। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘাঁটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হল ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার জন্য তৈরি কিছু ঢাকা জায়গা। ধারণা করা হচ্ছে, এই জায়গাগুলিতে এমন বিশেষ ধরনের গাড়ি (যাকে ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার বা টিইএল বলে) রাখার ব্যবস্থা আছে, যার ছাদ দরকারের সময় খুলে যায়।

আরও পড়ুন-বক্সার এখন দুই আকর্ষণ প্রকৃতি আর মিলেট মোমো

এই গাড়িগুলি মূলত ক্ষেপণাস্ত্র বহন করা, সেগুলি ওপরে তুলে ধরার জন্য প্রস্তুত করা এবং তারপর ছোঁড়ার কাজে ব্যবহার হয়। গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই মজবুত আশ্রয়কেন্দ্রগুলি চিনের দূরপাল্লার এইচকিউ-৯ নামের আকাশ থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ব্যবস্থা (সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল) লুকিয়ে রাখতে এবং সুরক্ষা দিতে পারবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-গোয়েন্দা সংস্থা অলসোর্স এনালাইসিস-এর গবেষকরা প্রথম এই নকশাটি খুঁজে পান। তারা আরও জানিয়েছেন যে, ঠিক এই রকম দেখতে আরেকটি ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে, যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে এবং ভারতের সদ্য তৈরি উন্নত ন্যোমা বিমানক্ষেত্রের ঠিক উল্টোদিকে অবস্থিত। মার্কিন মহাকাশ গোয়েন্দা সংস্থা ভ্যান্টর থেকে যে আলাদা স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতেও ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার সন্দেহজনক জায়গাগুলির উপর স্লাইডিং বা সরাবার মতো ছাদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিটি জায়গা দুটি করে গাড়ি রাখার মতো বড়। ২৯ সেপ্টেম্বরের ভ্যান্টর স্যাটেলাইট ছবিতে গার কাউন্টির অন্তত এমন একটি উৎক্ষেপণ স্থানের ছাদ খোলা দেখা গেছে, যার নিচে সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার যন্ত্রগুলি রয়েছে। অলসোর্স অ্যানালাইসিস তাদের নোটে বলেছে, ঢাকা দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ জায়গাগুলির ছাদে ঢাকনা (হ্যাচ) রয়েছে, যা লঞ্চারগুলিকে লুকিয়ে রাখে এবং সুরক্ষিত রাখে। আর যখন ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার দরকার হয়, তখন ঢাকনা খুলে সেগুলোর মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা যায়।

আরও পড়ুন-হাইকোর্টের রায় বিপাকে অর্জুন

এই পদ্ধতির ফলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার গাড়ির উপস্থিতি বা সঠিক অবস্থান খুঁজে বের করার সুযোগ কমে যায় এবং সম্ভাব্য হামলা থেকে সেগুলোকে রক্ষা করা যায়।
যদিও ভারত-তিব্বত সীমান্তে এই ধরনের সুরক্ষিত উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা নতুন, তবে এর আগেও দক্ষিণ চিন সাগরের বিরোধপূর্ণ দ্বীপগুলিতে চিনা সামরিকঘাঁটিতে একই ধরনের সুবিধা দেখা গেছে। প্যাংগং হ্রদের কাছে দ্বিতীয় ঘাঁটির নির্মাণ কাজ গত জুলাই মাসের শেষের দিকে প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন ভূ-স্থানিক গবেষক ড্যামিয়েন সাইমন, তবে সে-সময় ঢাকা দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ স্থানগুলির প্রকৃতি জানা ছিল না। অলসোর্স অ্যানালাইসিস বিশ্লেষকরা আরও জানিয়েছেন, এইচকিউ-৯ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশকে নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে, সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্র যে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়াবে, তাতে সন্দেহ নেই।

Latest article