মমতা-অভিষেকের নেতৃত্বে আশ্বস্ত বঙ্গবাসী

আগে সিপিএম জমানায় মানুষ দেখেছিল প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে ত্রাণ-রাজনীতি। একই রকম নোংরামো দেখল পশ্চিমবঙ্গ গেরুয়া পার্টির সৌজন্যে, এবার। কিন্তু এই প্রতারণার প্রহরে ব্যতিক্রমী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখছেন অধ্যাপক শ্যামলকুমার দরিপা

Must read

এই রাজ্যে, দেশে তথা পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বিপর্যয় নতুন নয়। তবু সে-ই বিপর্যয়ে প্রশাসনের ভূমিকা কেমন, সেটা দেখেই অনেকক্ষেত্রে অনুমান করা যায়, রাষ্ট্রের শাসন কতটা স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রয়েছে। এ রাজ্যে অতীতে বাম জমানায় বহুবার বহু বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে এবং প্রতিবারই বাম সরকারের অপদার্থতার কারণে নিরীহ মানুষ ঘরবাড়ি এবং সর্বোপরি প্রাণ হারিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় সে অবস্থা বদলেছে। একটা কথা না বললেই নয়, এই ধরনের বিপর্যয়, মানুষের বিপন্নতা নিয়ে নোংরা রাজনীতির নজিরও সিপিএম জমানায় কম ছিল না। ঠিক একই কায়দায় মানুষের ভয়াবহ বিপদের দিনে, ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়েও রাজনীতি করতে আসরে নেমে পড়েছে মোদির অনুগামীরা। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। রাম-বামের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা তো আসলে মানুষের বিপদে লুটেপুটে খাওয়া। তাই আরও একবার ভোটবাক্সের রাজনীতি করতে করতে নিকৃষ্টতম মানসিকতার পরিচয় দিল দিল্লির জমিদার আর তাদের অনুগামীরা।

আরও পড়ুন-বিদেশিহীন ডেম্পোয় আটকাল ইস্টবেঙ্গল

প্রসঙ্গ অবশ্যই ক’দিন আগে উত্তরবঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা। এতদিনে আমরা এ-ও জানতে পেরে গেছি যে এ-ই বন্যা কতখানি ‘মনুষ্যসৃষ্ট’। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভুটানের অস্বাভাবিক বেশি মাত্রায় জল ছাড়ার কারণেই এই বন্যা। মোটামুটিভাবে তাঁর কথাতেই সিলমোহর দিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের পরিবেশবিজ্ঞানীরা। এই অবস্থায় যেকথা না বললেই নয়, তা হল ভুটানের এই বেপরোয়াভাবে জল ছাড়া প্রকৃতপক্ষে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশ মন্ত্রকেরই ব্যর্থতার প্রতিফলন। একদিকে আমাদের ভ্রমণপিয়াসী প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগেই ভুটানে গিয়ে রাজা-রানির সঙ্গে সৌজন্যবিনিময় করে এলেন। আর অন্যদিকে ভুটানের এই আচমকা জল ছাড়ার ব্যাপারে আমাদের দেশের বিদেশমন্ত্রকের কাছে না কি আদৌ কোনও খবর ছিল না! বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, বিষয়টি তিনি ‘খতিয়ে দেখবেন’। কিন্তু আর কবে? মাঝে মাঝে মনে হয় কবীর সুমন বোধহয় এই অপদার্থ এবং স্বাধীন ভারতের নিকৃষ্টতম কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশেই লিখেছিলেন : ‘‘কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে,/ বড্ড বেশী মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে।” ভারত-ভুটানের “বন্ধুত্ব” কি তবে ঘুচে গেল? ভুটানও কি তাহলে আমেরিকার মতো “প্রাইম মিনিস্টার মোডি”-কে শেষমেশ বুড়ো আঙুল দেখাল! দেশবাসী কি মনে করে বলতে পারবে শেষ কবে ভারতে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার এতটা অযোগ্য, অপরিণামদর্শী ছিল?
উল্টো দিকে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ডব্লিউবিএসএমডিএ)-এর তহবিলে অনুদানের জন্য সময়োচিতভাবে যথোপযুক্ত আবেদন জানানো হয়েছিল। ভরসার কথা একটাই, আমাদের জন্য, আমাদের সঙ্গে রয়েছেন আমাদের জননেত্রী, বাংলার জননী, বাংলার মা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রয়েছেন আগামীর কান্ডারি জননেতা সাংসদ, বাংলার যোদ্ধা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা এবং অভিষেক নিজেরা যথাক্রমে পাঁচ লক্ষ এবং এক লক্ষ টাকা ত্রাণ তহবিলে দান তো করেছেনই, সঙ্গে তৃণমূল সরকারের সমস্ত মন্ত্রীকে এক লক্ষ টাকা করে ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের অসহায়তা নিয়ে রাম-বামের নোংরা, নির্লজ্জ রাজনীতির প্রদর্শনের দিনে এমন মানবিক দুজন পথপ্রদর্শক এবং অভিভাবক যে বাংলার রয়েছে, সেটা ভেবেই আশ্বস্ত লাগে।

আরও পড়ুন-আওয়ামি লিগকে বাদ দেওয়ার পর ভোটের আগে কী অবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতিতে?

সামাজিক মাধ্যমে কিছুকাল আগে থেকেই, সম্ভবত আমফানের সময় থেকে, একটা ছবি খুব ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে মানবিক, জনদরদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝড়ের রাতে একা প্রচণ্ড বিদ্যুচ্চমকের মধ্যেও বুকে করে আগলে ধরে রেখেছে এই বাংলার, এই পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রকে। এটাই হল বাংলার প্রকৃত ছবি। কিন্তু তার সঙ্গে আরেকটি যে ছবি আপামর বাংলার মানুষ মনে মনে এঁকে নিয়েছে, সেটি হল বাংলার ওপর আছড়ে পড়া সমস্ত ঝড়-ঝঞ্ঝা আর একা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সামলাতে হয় না। এখন এবং এখন থেকে অন্তত আগামী এক শতাব্দী তার সঙ্গে বাংলার প্রহরী হয়ে থাকবেন একবিংশ শতকের বাংলার বাঘ, বাংলার যুবসম্প্রদায়ের ভরসাস্থল, তাদের অনুপ্রেরণা, দুঃসময়ে তাদের ‘নিহিত পাতালছায়া’ জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমরা শুনতে পাচ্ছি, আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বলছেন : “তরীখানা বাইতে গেলে মাঝে মাঝে তুফান মেলে,/ তাই ব’লে হাল ছেড়ে দিয়ে…কান্নাকাটি ধরব না।” এমন নির্ভীক সেনাপতি যখন আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, তখন আমাদের নিরাশ হওয়ার কিছুই নেই। দিল্লির জমিদারেরা বারবার বাংলাকে ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যয়ের অব্যবহিত পরেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার কোনো উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন নেই আর কেউ চাইলেও করতে পারবে না। এ বাংলা অখণ্ড বাংলা, এ বাংলা মা-মাটি-মানুষের বাংলা, এ বাংলা মমতা আর অভিষেকের বাংলা। তবে একটা ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। দিল্লির দাঙ্গাবাজ, জুমলাবাজ, মিথ্যাবাদী, বাংলাবিরোধী, পচা শামুক দলটি বাংলাকে ধ্বংস করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আর পচা শামুকেই কিন্তু কোনও কোনও সময় পা কেটে যায়। বাংলার পা যাতে সেই পচা শামুকে না কাটে, তার জন্য আমাদের পা মেলাতে হবে বাংলার জননী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলার আগামীর কান্ডারি জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথে। তবেই বাংলা এবং বাঙালি অখণ্ড এবং নিরাপদ থাকবে। তাই আমরা আসন্ন ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে শুধু বিপুল ভোটে জয়যুক্তই করব না, বরং শপথ নেব যেন একটি ভোটও বাংলাবিদ্বেষী দাঙ্গাবাজ বিজেপির পক্ষে না যায়। আর মনে রাখব, আমাদের অভিভাবক, ভরসা দু’জন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের হাত ধরেই আমরা ‘মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে।’

Latest article