আতরের ইতিকথা

ইত্র বা আতরের (Atar) ইতিহাস সুপ্রাচীন। সুগন্ধিবিদ্যাচর্চার উল্লেখ রয়েছে বরাহমিহিরের বৃহৎসংহিতায়। আতর তৈরির ঐতিহ্যের কারণে ভারতের কনৌজকে বলা হত ‘সুগন্ধীর রাজধানী’। সেই আতরের গল্প বললেন দেবস্মিতা মণ্ডল

Must read

আতরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আজকের নয়। অথর্ব বেদ থেকে শুরু করে বরাহমিহিরের বৃহৎসঙ্গীতার গন্ধ যুক্তিতে সুগন্ধিবিদ্যার শিল্প ও বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তর চর্চা করা হয়েছে। ভারতে আতরের ইতিহাস ৬০,০০০ বছরের পুরনো। আতর তৈলযুক্ত এক রকমের সুগন্ধি। আতর তৈরি হয় প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান দ্বারা। তাতে নেই কোনও কৃত্রিম উপাদান। তাই বাজারের আর পাঁচটা পারফিউম বা ডিওডোরেন্টের থেকে আতরের দাম অনেকটাই বেশি। আতর যে শুধু সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার হয় তাই নয়, বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় কাজে যথেষ্ট ব্যবহার করা হয়।
আতরের শহর কনৌজ
ভারতের মানচিত্রে এমন কিছু কিছু শহর আছে যাদের অস্তিত্ব শুধু ইট-কাঠ-সিমেন্টের গাঁথনিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য বেষ্টন করে আছে শহরগুলিকে। কনৌজ সেরকমই একটি শহর। প্রাচীনকাল থেকে শহরটি কত নামেই না ভূষিত হয়েছে যেমন কান্যকুব্জ, মহোদয় তেমনি ইংরেজ শাসনকালে ক্যানোজ, কিন্নৌজ আরও কত কী নাম। গঙ্গানদীর তীরে অবস্থিত শহরটির উল্লেখ আছে রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণে। বৈদিক যুগ থেকে বিভিন্ন সাম্রাজ্য রাজত্ব করেছে এই শহরে। মহারাজ ঈশান বর্মন, সম্রাট হর্ষবর্ধন-সহ গুপ্তযুগের শাসন, মৌখড়ি ও গহদবল রাজবংশ, গুরজার প্রতিহার-পাল এবং রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যের যুদ্ধ, হিউয়েন সাং ও ফা-হিয়েনের তীর্থযাত্রা— সবমিলিয়ে কনৌজ জলজ্যান্ত একটা ইতিহাসের গ্রন্থ যার প্রতি পৃষ্ঠায় আছে ইতিহাসের গন্ধ। কনৌজ শুধু আতরের জন্মস্থানই নয়, বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন ও ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ এখানে পাওয়া যায়। গৌড়শংকর মহাদেব মন্দির, রাজা জয়চন্দ্রের দুর্গের মতো আকর্ষণীয় স্থানও এখানে আছে।
কনৌজের আকাশে, বাতাসে, জলে এবং মাটিতে ছড়িয়ে আছে নানান সুগন্ধ। কারণ কনৌজ হল ভারতের পারফিউম রাজধানী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানকার মানুষ নানান সুগন্ধি যেমন চন্দন, কেতকী, জুঁই, ঘৃতকুমারী, গোলাপ আতর বানিয়ে আসছে।

আরও পড়ুন-বয়স-ঘড়ি

কনৌজে এখনও দেগ ভাপকা পদ্ধতিতেই আতর বানানো হয়। একটি পাত্রে জল, বিভিন্ন ধরনের ফুল ও নানা উপকরণ দিয়ে গরম উনুনে বসানো হয়। এই পাত্রকে বলা হয় দেগ। ১০ থেকে ১৬০ কেজি পর্যন্ত ভার বহন করতে পারে এই দেগ। দেগের উপর চাপা দেওয়া থাকে সারপোস নামের একটি পাত্র। ফোটানোর ফলে যে বাষ্প তৈরি হয় তা বাঁশের তৈরি একটি নলের (চোঙ্গা) মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় অন্য একটি পাত্রে যাকে ভাপকা বলা হয়। এই পাত্রে আগে থেকেই তেল উপস্থিত থাকে।
কনৌজ আমাদের শেখায়— ইতিহাস শুধু রাজা-রাজড়ার গল্প নয়, তা মানুষের হৃদয়ের গল্প। আর আতর? তা শুধু গন্ধ নয়, একটি অনুভূতি, যা সময়কে ছুঁয়ে যায়।

২০০ বছরের পুরনো আতরের ঠিকানা
মধ্য কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এলাকা কলুটোলা। সংরক্ষণ করে রেখেছে অনেক ইতিহাস। সেই কলুটোলার বুকেই রয়েছে দুশো বছর পুরনো আতরের দোকান হাজি খুদা বাক্স নাবি বাক্স পারফিউমারস। কিন্তু দোকানটির সাথে জড়িত আতরের ইতিহাস তারও আগেকার। ভাবুন তো দোকানটি কত কিছুর সাক্ষী। কলকাতায় ইংরেজ শাসন-শোষণের সাক্ষী, বাবু কালচার-সহ কত কিছু দেখেছে এই দোকান। কিন্তু প্রথম থেকেই কি দোকানটি বা তাদের আতরের ব্যবসা কলকাতা কেন্দ্রিক ছিল? উত্তরে দোকানের বর্তমান মালিক নেয়াজউদ্দিন আল্লাহবাক্স বলেন যে লখনউয়েই তাঁদের আতরের ব্যবসা ছিল। সেখান থেকেই বিভিন্ন জায়গায় আতরের রফতানি করা হত। কলকাতা ছিল তাদের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের একদম শেষের দিকে যখন ইংরেজ সরকার এবং নবাবরা তাদের ব্যবসার পথে নানা বাধা সৃষ্টি করতে থাকে তখন শেখ জান মহম্মদ তাঁর পুত্র হাজি খুদা বাক্স এবং তাঁর পুত্র হাজি নবি বাক্স ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় চলে আসেন। ১৮০৫-এ বেলেঘাটাতে তাঁরা কারখানা তৈরি করেছিলেন কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বলছিলাম না ইতিহাস ২০০ বছরের পুরনো। তাহলে এবার আসা যাক দোকানটির কথাতে। দোকানটি তৈরি হয় ১৮২৪ সালে।
তখন ইংরেজ এবং কলকাতার বাবুদের বেশ কিছু পছন্দের আতর ছিল পাচুলি আতর, গোলাপ এবং ল্যাভেন্ডার আতর। কলকাতার কত গল্প দোকানটি জানে। দোকানটির ভেতর ঢুকলেই বোঝা যায় আতরের সুগন্ধ কতটা মনোগ্রাহী।
বর্তমানে তাঁদের আতরের ব্যবসা আসাম, বিহার, ভুটান, ওড়িশাতে ছড়িয়ে আছে। নিয়াজউদ্দিন জানান, কলকাতায় তাঁরা কিছু আতর তৈরি করেন এবং বেশিরভাগ আতর আসে উত্তরপ্রদেশের কনৌজ থেকে। যুব সমাজের পছন্দের কথা মাথায় রেখে ওঁরা বাজারে এনেছেন বাহারে চামান, আতর হায়াদি, আতর হোয়াইট ঔদ-এর মতো আতর। বর্তমানে নেয়াজউদ্দিন এবং তাঁর ভাইপো মুসাইদউদ্দিন আল্লাহবাক্স দোকানটি সামলান।

আরও পড়ুন-জিয়ান একটি কবিতার বই

আতরের ইতিহাস : বৈদিক যুগ থেকে বর্তমান যুগ
সুগন্ধি দ্রব্যের সাথে ভারতের সম্পৃক্ততা আজকের নয়। বৈদিক যুগের গন্ধশাস্ত্র থেকে প্রাচীন সিন্ধু উপত্যকা— সমস্ত জায়গাতেই প্রত্নতাত্ত্বিকরা পেয়েছেন সুগন্ধি তৈরির নিদর্শন। চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতার মতো গ্রন্থেও পাতনের মাধ্যমে কীভাবে সুগন্ধি তৈরি হত তার বর্ণনা পাওয়া গেছে।
তাহলে একেবারে শুরু থেকে শুরু করা যাক। আমাদের চলে যেতে হবে ৬০০ খ্রিস্টাব্দে। তখন রাজত্ব করছে চালুক্য রাজবংশ। সেখানকার রাজা সোমেশ্বর তার মানসোল্লাসা (Manasollasa) বা অভি লাসিতার্থ চিন্তামণি গ্রন্থে সুগন্ধের সৌন্দর্য ও মনোমুগ্ধকর আবেশ নিয়ে বিস্তরভাবে বর্ণনা করেছিলেন (১১২৯ খ্রিস্টাব্দ)। পরে গঙ্গাধর তাঁর গন্ধসার গ্রন্থে সুগন্ধির ব্যবহারকে আরও বিস্তারিত করে তুলে ধরেন। ১৩ শতাব্দীর শেষের আতর হয়ে উঠল আভিজাত্যের প্রতীক। অনেক সময় নির্দিষ্ট সুগন্ধি নির্দিষ্ট কোনও শাসকের পরিচিতি হিসেবে সুনাম অর্জন করতে থাকে। সাইয়াদ হোসেন মামুদ তাঁর বই নাজাতুল কুলুব (Nuzhatu’l Qulub) এ শুধু আতরের রকমই নয়, বিভিন্ন গন্ধের আতর কীভাবে বানানো যায় তাও বর্ণনা করেছিলেন। এরপর নাসিরউদ্দিন শাহ পনেরো শতকের শুরুতে নিমাতনামাহ-ই-নাসিরসহি বইতে আতর বানানোর জন্য পাতন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন রকম উপকরণ যেমন গোলাপ, ঘৃতকুমারী, চন্দন কাঠ দিয়ে কত রকমের সুগন্ধি বানানো যায় তা বর্ণনা করেছেন। এই সমস্ত বইগুলি প্রাচীনকাল থেকে সুগন্ধি বানানোর বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং ইতিহাস বহন করে রেখেছে। গুপ্ত সাম্রাজ্যকালে যেমন শিল্প এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটেছিল তেমনি আতর শিল্পেরও স্বর্ণযুগ ছিল এই সময়কাল। রাজা হর্ষবর্ধনের সময়কালে উত্তরপ্রদেশের কোন ঝড়ে উঠেছিল আতর শিল্পের রাজধানী এই শহর আজও তার আভিজাত্য এবং আতর শিল্পের কৌশল ধরে রেখেছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে আতরের নজরকাড়া উন্নতি ঘটেছিল মুঘল রাজত্বকালে। ১৬ শতাব্দীর এই সময়কালে আতরের জনপ্রিয়তা মহাকাশ ছুঁয়েছিল। মুঘলদের যুদ্ধ বীরত্ব মাঝে মাঝে প্রজাদের উপর অত্যাচার বিভিন্ন কৌশলে হিন্দু রাজ্য কবজা করা এবং একাধিক বিবাহ যেমন আমরা অনেকেই শুনেছি কিন্তু তাঁদের শিল্পচর্যা সম্বন্ধে কি আমরা সেরকম জানি? কথা যখন হচ্ছে সুগন্ধি নিয়ে তাহলে আজ জানা যাক তাঁরা সুগন্ধি শিল্পকে কতটা যত্নে গড়ে তুলেছিল। সম্রাট আকবরের উজির আবুল ফাজল আইনি আকবরীতে একটা গোটা অধ্যায় উৎসর্গ করেছিলেন সুগন্ধি বা আতর তৈরির শিল্প নিয়ে। আতর বানানোর প্রক্রিয়া সবই উল্লেখ করেছিলেন। কিছু সূত্র থেকে জানা যায় যে সম্রাট আকবরের আলাদা একটা বিভাগই ছিল যেখানে সুগন্ধি তৈরি হত। তুর্ক-ই-জাহাঙ্গিরী-তে তার উল্লেখ পাওয়া যায়। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের স্ত্রী নুরজাহানের হাত ধরেই গোলাপ আতর ভারতে এসেছিল।
মুঘলদের পর আতর শিল্পকে যত্ন সহকারে লালন পালন করেছিলেন লখনউয়ের নবাবরা। নবাবদের কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক রাজকীয় দৃশ্য— ওঁরা হেলান দিয়ে বসে আছেন, হাতে হুঁকো, আর চারপাশে এক ধীর, মুগ্ধ করা পরিবেশ। সিনেমার দৌলতে আমরা সেই নবাবি আভিজাত্যকে কল্পনা করতে পারি— সেই আবহাওয়ার সুবাসে মিশে থাকে ইতিহাস, প্রেম, আর খানিকটা অহঙ্কারও। লখনউয়ের আতর তখন ছিল একেবারে শাহি ব্যাপার। নবাবরা আতরকে শুধু সুগন্ধি হিসেবে দেখতেন না— এটা ছিল আভিজাত্যের ছাপ। নবাবরা তাঁদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আতরকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। শোনা যায় নবাব গাজিউদ্দিন হাইজার শাহ আতরের ঝরনা বানিয়েছিলেন। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের সময়কালেই হেনা আতর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

আরও পড়ুন-বিদেশিহীন ডেম্পোয় আটকাল ইস্টবেঙ্গল

আতরের নেই কোনও ধর্ম
আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা আছে যে আতর ব্যবহার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা কিন্তু ভুল ধারণা। আতর কখনওই ধর্মের বেড়াজালে সীমিত থাকেনি। কলকাতার সবচেয়ে পুরনো আতর দোকানের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে মনের দ্বিধা দূর করার জন্য জিজ্ঞাসা করি, ‘‘মুসলিম ধর্মে কি আতরের আলাদা কোনও মাহাত্ম্য আছে?’’ উত্তরে নিয়াজউদ্দিন জানিয়েছিলেন যে তাঁদের আল্লাহ খুশবু খুব ভালবাসেন। আতরের ব্যবহার মন এবং মাথার পবিত্রতা বজায় রাখে। তাই তিনি আতর ব্যবহার করতে বলেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা হিন্দুদের থেকে আতর বেশি ব্যবহার করে কারণ তাদের ধর্মে আতর ব্যবহার করা হালাল (মুসলিম ধর্মে যা কিছু করা উচিত) এর মধ্যে পড়ে। ওঁরা প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আতরের ব্যবহার করেন।
হিন্দু ধর্মেও বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে আদর ব্যবহার করা হয়। পুজোর সময় ঈশ্বরের সাথে একাগ্র হওয়ার জন্য সুগন্ধির ব্যবহার বিশেষ প্রচলিত।
এরপর যখন ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আতর রফতানি হতে থাকে তখন সেখানকার সংস্কৃতি ও ধর্মের সঙ্গে তা যুক্ত হয়ে যায়।

ব্রিটিশ আমল থেকে ই-কমার্স যুগ : আতরের লড়াই অব্যাহত
ভারতের বাজারে সুগন্ধির চাহিদা লক্ষ্য করে ব্রিটিশরা অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম ইউরোপ থেকে এখানে আনতে থাকে। ভারতীয় আতরের থেকে তা অনেক সস্তা। এর ফলে ভারতের সুগন্ধি শিল্পের সাথে জড়িত মানুষজন আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। নিজেদের পারফিউম ব্যবসা শক্তিশালী করার জন্য কাঁচামালের ওপর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। আতরের উপাদান পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। ১৯৯০ সালে সরকার মহীশূর চন্দন কাঠের বিক্রি সীমিত করে দিলে আতরের দাম অনেক গুণ বেড়ে যায়। শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য চন্দন কাঠের তেলের পরিবর্তে শুরু হয় তরল প্যারাফিনের ব্যবহার। ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতির পর ভারতীয় বাজারের মোহনায় পারফিউম এবং ডিওডোরেন্টের জোয়ার আসতে থাকে। ১৯৯০ দশকে কনৌজ-এর আতর কেন্দ্রে ৭০০’র মতো ডিসটিলারি ছিল তা ২০০০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় ১৫০ থেকে ২০০ তে নেমে আসে। কলকাতার কলুটোলা চত্বরে যেখানে আতরের বাজার ছিল সেখানে রয়ে গেছে হাতেগোনা কয়েকটি দোকান। একটি দোকানের মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায় ২০১৭ থেকে ১৮ এই সময় বাজারগত সমস্যার কারণে অনেক আতর বিক্রেতাই তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
তবু, আতর হারায়নি। আজও ভারতের ফ্লেভার ও ফ্র্যাগরেন্স শিল্পে ১০,০০০ কোটির বাজারে আতর ও এসেনশিয়াল অয়েল ৪০% শেয়ার ধরে রেখেছে। প্রাকৃতিক ও অর্গানিক পণ্যের চাহিদা, মিলেনিয়াল ও Gen Z-এর ব্যক্তিগত ঘ্রাণের প্রতি আগ্রহ, এবং ই-কমার্সের প্রসার আতরকে নতুন করে জনপ্রিয় করে তুলছে। কান্নৌজে FFDC (Fragrance & Flavour Development Centre)-এর মতো সরকারি উদ্যোগ এই শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত করছে।
বিশ্ববাজারেও ভারতীয় আতরের কদর বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রাকৃতিক, তেলভিত্তিক আতরের চাহিদা বাড়ছে। ২০২৩ সালে ভারতের আতর ও সুগন্ধি রফতানি ছিল প্রায় $৪০০ মিলিয়ন।
তবু সমস্যা রয়ে গেছে। সিন্থেটিক পারফিউমের প্রতিযোগিতা এবং আধুনিকীকরণের অভাব আতর শিল্পকে দুর্বল করে তুলছে। অনেক ছোট উৎপাদক এখনও ব্র্যান্ডিং, মান নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন থেকে বঞ্চিত।
অনেক সমস্যা থাকলেও এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। কারণ এটি শুধু একটি শিল্পকে রক্ষা করা নয় বরং ভারতের ইতিহাস কে সংরক্ষণ করা।

Latest article