চালু দুধিয়ার হিউম পাইপ সেতু, পাহাড়-সমতলে স্বাভাবিক যান চলাচল

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রতিশ্রুতি মতোই সোমবার থেকেই সেই সেতুর উপর দিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হয়েছে।

Must read

কথা দিয়েছিলেন দিন পনেরোর মধ্যেই ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংস হওয়া দুধিয়া সেতুর বিকল্প হিউম পাইপ সেতুর নির্মাণ হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রতিশ্রুতি মতোই সোমবার থেকেই সেই সেতুর উপর দিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে ফের সচল হয়েছে শিলিগুড়ি ও মিরিকের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন-মধ্যপ্রদেশে বিজেপির নেতা গাড়ি চাপা দিয়ে মারল কৃষককে!

৫ অক্টোবর বালাসন নদীর উপর অবস্থিত ১৯৬৫ সালে নির্মিত দুধিয়া সেতুটি প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে পড়ে। ফলে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মিরিক-শিলিগুড়ি যোগাযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। শিলিগুড়ি থেকে মিরিক যেতে যেখানে আগে সময় লাগত দেড় ঘণ্টা, সেখানে বিকল্প পথে ঘুরে যেতে হচ্ছিল তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত- তাও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে। উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে দ্রুত এই দুর্ভোগ কমাতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্দেশ দেন, “দুধিয়ায় অবিলম্বে অস্থায়ী সেতু তৈরি করতে হবে, যাতে মানুষের যাতায়াত স্বাভাবিক হয়।”

সেই নির্দেশ মতো রাজ্য পূর্ত ও জলসম্পদ দফতরের যৌথ তত্ত্বাবধানে শুরু হয় বিকল্প সেতুর কাজ। মাত্র ১৬ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে ৪৬৮ মিটার দীর্ঘ এই হিউম পাইপ সেতু। এতে ব্যবহার হয়েছে ১২০০ মিলিমিটার ব্যাসের ১৩২টি হিউম পাইপ, যার উপর গড়ে তোলা হয়েছে ৭২ মিটার দীর্ঘ কজওয়ে। সেতুর প্রস্থ ৮ মিটার, যাতে ছোট ও মাঝারি যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে।

আরও পড়ুন-অভিনব কায়দায় সতীশ শাহকে শ্রদ্ধা জানাল আমূল

রবিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “দুধিয়ায় বিকল্প হিউম পাইপ সেতু নির্মাণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা মিরিককে শিলিগুড়ির সঙ্গে সংযুক্ত করবে। সোমবার থেকেই এই সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে।” তিনি পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়র, শ্রমিক ও স্থানীয় প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, “মাত্র ১৬ দিনে এই কাজ শেষ হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি প্রমাণ করে, আমরা সংকটে মানুষের পাশে থাকি — কথায় নয়, কাজে।”

সোমবার সকাল ১১ টা থেকে মিরিক শিলিগুড়ি যান চলাচল স্বাভাবিক হয় । খুশি পর্যটক-সহ গাড়ি চালকেরা। এদিন কার্শিয়ঙের বিডিও কৌশিক চক্রবর্তী জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই সুখবর রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন। এত দ্রুততার সঙ্গে কাজ করাটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল, এদিকে খরস্রোতা নদীর জল অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সব মিলিয়ে রাজ্য সরকার ও পূর্ত দফতরের সহযোগিতায় কাজ শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে ১০ টনের বেশি যান চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন কার্শিয়ঙের বিডিও। একইসঙ্গে তিনি জানান মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, পুরনো সেতুর স্থানে ৫৪ কোটি টাকায় একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রকল্প ইতিমধ্যেই হাতে নেওয়া হয়েছে।

পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের মতে, নতুন সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে এবং আগামী বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অস্থায়ী সেতু চালু হওয়ার খবরে দুধিয়া, মিরিক, সুখিয়াপোখরি ও আশপাশের এলাকার মানুষ প্রবল স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় দোকানদার দীপঙ্কর রাই বলেন, “সেতু ভেঙে যাওয়ার পর আমাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজ নতুন সেতু চালু হওয়ায় মনে হচ্ছে, ফের জীবন ফিরে এসেছে।” পর্যটন ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী, দুধিয়া সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ায় পর্যটনের গতি ফের চাঙ্গা হবে। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, “সেতুটি অস্থায়ী হলেও যথেষ্ট শক্তপোক্তভাবে তৈরি করা হয়েছে। বর্ষাকালে ক্ষয়রোধে অতিরিক্ত কংক্রিট লেয়ারিং ও প্রটেকশন ওয়াল তৈরি করা হবে।“ এই নতুন সেতু পাহাড় ও সমতলের জীবনের সেতুবন্ধন।

Latest article