তৃণমূল ভবনে প্রেস কনফারেন্স করে বাঙালির (Bengali) অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সদা জাগ্রত আছেন, সেই বার্তা দিলেন মঙ্গলবার দলের সাধারণ সম্পাদক। এসআইআর করে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে বকেয়া অর্থ আদায় করতে বদ্ধপরিকর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জুমলা বিজেপি সরকারকে এদিন সমালোচনা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির মর্যাদার জন্য লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সকল বাঙালিকে সচেতন করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন ৫০-এর নিচে নামিয়ে দিতে জনসাধারণের কাছে আন্তরিক আবেদন করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাবিরোধী, ভাষাবিরোধী, জাতিবিরোধী বিজেপির সামনে মাথা নত করবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা জানি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানেন বৈচিত্র্যময় ভারত হল নানা ভাষার ও নানা জাতের মানুষের মিলনক্ষেত্র। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের দেশ হল ভারত। মিশ্র সংস্কৃতি আমাদের অর্জিত বৈভব, তা আমরা কখনওই নষ্ট হতে দেব না। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থক ও নেতৃবৃন্দ— আমার গর্ব; তাঁদের প্রতি আমরা অন্তরের অন্তস্তল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমরা কখনও বাংলাবিরোধী, ভাষাবিরোধী, জাতিবিরোধী বিজেপির সামনে মাথা নত করব না। আমাদের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হবে অগণতান্ত্রিক এবং জনবিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের মহারণ থামবে না, যতক্ষণ না বাংলার মানুষ সুখে জীবনযাপন করছে। আমরা থামব না, যতক্ষণ না বাংলার উপর নির্যাতন, নিপীড়ন সম্পূর্ণ বন্ধ হচ্ছে। আমরা সকল ভাষার সম্মান এবং শ্রদ্ধা করি, কিন্তু বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষার প্রতি অসম্মান এবং বাংলাভাষী মানুষের উপর যে নিপীড়ন চলছে, তা আমরা মেনে নেব না। বাংলা ভাষার সম্মানরক্ষার্থে; ভাষা আন্দোলন শুরু হবে সমগ্র বাংলা জুড়ে। আমরা ওইসব স্বৈরশাসক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করব; যারা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে পবিত্র ধর্মকে বিকৃত করে। বাংলার প্রতি লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অত্যাচার, নিপীড়নের সাক্ষী থেকেছে বাংলার মানুষ, তা এবার গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার সময় এসেছে। শান্তি ও ঐক্যের মেলবন্ধনে আবদ্ধ এই বাংলা যেভাবে আগেও অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করেছে, আমার বিশ্বাস ছাব্বিশের নির্বাচনে বাংলার মানুষ বাংলাবিরোধীদের বিতাড়িত করবে সর্বধর্ম সমন্বয়ের এই বাংলা থেকে। জয় হিন্দ!
কহাবত রয়েছে বিশেষ ধর্মাবলম্বী একটি জাতিসত্তাকে ‘অ্যানিহিলেট’ করার জন্য একদা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে গণহত্যার আয়োজন করেছিলেন সে বাবদে তৎকালীন সিভিলিয়ান হর্ষ মান্দার ইংরেজি ভাষায় একটি লোমহর্ষক ‘কেতাব’, লিখেছিলেন, সেটির নাম ‘Partition of the Heart. Unmaking the Idea of India’. সেই থেকে হৃদয়কে ভাঙচুর করেই চলেছে।
সাদিয়োঁ কাল থেকে ‘হিন্দুস্তান’-এ বহমান ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ আর ঐক্যবদ্ধকে তছনছ করে ধর্মীয় উন্মাদনার এক লজ্জাজনক অধ্যায় তৈরি হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে দেশ এক অদ্ভুত আঁধারের সামনে এসে পড়েছে। ২০২১-এর নির্বাচনে এমনভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে সমাজজীবনে জারিত করেছে যে, ঘৃণার এক অদৃষ্টপূর্ব আর ভয়ানক লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছিল।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে এক জাতি, এক ভাষা আর সনাতন ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িকতাবাদে আচ্ছন্ন ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে উদ্যত। এমন এক ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থা স্থাপনের প্রচেষ্টা করছে, যাতে হিন্দি বলয়ের ব্রাহ্মণ্যবাদীরা তাদের আধিপত্যবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়।
বহুতর অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ উন্নততর শিক্ষা-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। সেই ‘কৃষ্টি’কে লুপ্ত করতে উদ্যত কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি (Bengali) হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠীকে যুযুধান দু’পক্ষে রূপান্তরিত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত। এই অপপ্রয়াস রুখতে বাঙালির মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সকল বাঙালিকে জেগে উঠতে হবে।
আরও পড়ুন-পাঁচ বছর পর গৌড়বঙ্গে স্থায়ী উপাচার্য আশিস
পশ্চিমবাংলার অখণ্ড হিন্দু-মুসলিম বাঙালি জাতিসত্তার এমন দুর্যোগের দিনে অভিনব চিন্তা-চর্চা সমন্বিত আলোচনাগুলো বাঙালি মননকে অতুল্য এক ঝাঁকুনি দিয়ে যাবে।
ইতিহাস বলে, বিজেপি’র মূল চালিকাশক্তি আরএসএস ও তার তৎকালীন দোসর হিন্দু মহাসভা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। বরং ইংরেজদের পক্ষেই ছিল তারা। শুধু তাই নয়, দেশভাগের মূলে প্রকৃতপক্ষে ওই দুই সংগঠনের নেতাদের ভূমিকাই ছিল আসল। অথচ, সেই আরএসএস-জাত বিজেপি’র অধুনা নেতারা দেশভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে কী না করছেন! বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র শাসনে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, তীব্র বেকারত্ব ও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ধাক্কায় দেশবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারছেন না মোদি ও তাঁর দোসররা।
এই ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে ধর্মকে হাতিয়ার করছেন গেরুয়া নেতারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবাসীকে বিভক্ত করে নিজেদের আসন নির্বিঘ্ন রাখতে মরিয়া তাঁরা। সেই পরিকল্পনার আরও একটি অংশ হল বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেওয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের স্বপ্নে বিভোর তাঁরা। ওই স্বপ্ন সফল করতে এখন হাত বাড়িয়েছেন গোটা দেশের দিকে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দখল নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন।
গেরুয়া শিবিরের ওই অন্যায় আগ্রাসনকে রুখে দিতে বাংলার বহু সচেতন ব্যক্তিত্ব জোরদার লড়াই করছেন। লড়ছেন বহু সাধারণ মানুষও। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে তাঁদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাই আমরা। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ভারতের শুভবুদ্ধির মানুষেরা এগিয়ে আসছেন। আমরা যেন কখনওই ভুলে না যাই, মিশ্র সংস্কৃতিই আমাদের অর্জিত বৈভব, তা আমরা রক্ষা করবই।
মানবিক চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আমজনতার সচেতন অংশটি গেরুয়া শাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের একটি অংশ, যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত, তাদের বোধোদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। ভারতের ঐতিহ্যের, পরম্পরার এবং সংহতির ঘোর বিরোধী গেরুয়া শাসনের অবসান ঘটাতে এগিয়ে আসছেন সচেতন দেশবাসী। সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাড়ে-গর্দানে এক-হয়ে-যাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের রাজাবাবুরা এতদিন যে সংখ্যালঘিষ্ঠ ও দলিত সম্প্রদায়ের উপস্থিতিকেই স্বীকার করত না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে যাচ্ছেন প্রান্তিকের কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতে। বাঙালি জবাব দিতে তৈরি হয়েছেন ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট বলেছেন প্রেস কনফারেন্সে। বাঙালির মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে তিনি সদা জাগ্রত আছেন।




