ঘটনা ১ : বিয়ের ঠিক একদিন আগে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হল কনে শিবানী সরকারের। কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল। বিয়ে আগের ওটা করতে গিয়ে ফেরার পথে হঠাৎ শরীর খারাপ করতে শুরু করে এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
ঘটনা ২ : সদ্য বেঙ্গালুরুতে আকস্মিক হৃদরোগে মারা গেলেন শঙ্কর। প্রবল পিঠে ব্যথার জন্য অসুস্থ বোধ করায় অফিস না যেতে পারার কথা জানিয়ে বসকে মেসেজ করার ১০ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর।
ঘটনা ৩ : পুলকেশ বিশ্বাস, ৩০ বছর বয়স। প্রতিষ্ঠিত আইটি কর্মী। প্রচণ্ড চাপ। আমেরিকায় একটা ডাটা প্রসেসিং রাত বারোটার মধ্যে শেষ করে পাঠাতে হবে। কাজটা করার সময় হঠাৎ মনে হল শরীরটা কেমন করছে, কাজে মন দিতে পারছেন না। কিছুক্ষণের মধ্যে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, সারা শরীরে দরদর করে ঘাম, তারপর চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। অফিস থেকে হাসপাতাল যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। ক্রমাগত বেড়েই চলেছে অল্পবয়সে হার্ট অ্যাটাক এবং সেই কারণে হঠাৎ মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু কেন?
ঘটনা ৪ : হরিয়ানায় একজন ২৩ বছর বয়সি যুবক পাহাড়ে ট্রেকিং করার সময়ে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর পর তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তারপর কিছুক্ষণ পরেই পড়ে যান। ট্রেকিং দলের লোকেরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই সেই যুবক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন-দেশের ম্যাপটাই জানে না বিজেপি, বাংলায় এসআইআর-ষড়যন্ত্র স্পষ্ট
আমাদের দেশে অল্প বয়সে হার্টের অসুখ, হার্ট অ্যাটাক এবং হঠাৎ মৃত্যুর পরিসংখ্যান কী রকম তার একটা চিত্র দেখে নেওয়া যাক—
গত তিন বছরে ভারতে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, শুধুমাত্র ২০২২ সালেই ১২.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্ডিয়ান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে জানা যায় যে ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের অর্ধেক ৫০ বছরের কম বয়সি এবং এক-চতুর্থাংশ ৪০ বছরের কম বয়সি হয়। ২০২০ সালে, হার্ট অ্যাটাকে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সি ১৯,২৩৮ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং ২০২১ সালে, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সিদের মধ্যে ২,৫৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালে, ভারতের গুজরাত রাজ্যে হার্ট অ্যাটাকের জরুরি অবস্থার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতবর্ষে এমারজেন্সি অসুখের তথ্য সম্পর্কিত গবেষণা ইনস্টিটিউট (EMRI) থেকে জানা গেছে যে, আগের বছরের তুলনায় হার্ট-সম্পর্কিত এমারজেন্সি কলের সংখ্যা ৫৫% শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কেন? ৪০ বছর বা তারও অনেক নিচে হার্ট অ্যাটাকের কারণ একাধিক। পরিবারে যদি অল্প বয়সে হার্টের অসুখের ইতিহাস থাকে। হার্টের অসুখ ছাড়াও পরিবারে ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, ব্রেন স্ট্রোক বা যে কোনও ধরনের ব্লাড ভেসেলের অসুখ থেকে থাকে। রক্তে কোলেস্টেরল বিশেষ করে LDL ১৫০ থেকে ১৭০-এর বেশি থাকলে, অল্প বয়সে ডায়াবেটিস হলে,ওবেসিটি থাকলে, অনিয়ন্ত্রিত লাইফ স্টাইল, মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান, নিয়মিত ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড খেলে, হাঁটাচলা,ব্যায়াম না করলে। অতিরিক্ত পরিমাণে শারীরিক বা মানসিক স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি থাকলে।
অতিমারি আর কোভিড ভ্যাকসিন
অনেকেই মনে করছেন কোভিড-১৯ এর পর এই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বেড়েছে। কথাটা ভুল নয় কারণ গবেষণায় দেখা গেছে যে COVID-19 হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ (মায়োকার্ডাইটিস) সৃষ্টি করতে পারে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে। সেখান থেকে করোনারি থ্রম্বোসিস, হার্ট অ্যাটাক, এমনকী কার্ডিওমায়োপ্যাথি পর্যন্ত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, কোভিড থেকে সেরে ওঠা তরুণদের হঠাৎ হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে এটাও ঠিক যে কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে হার্ট অ্যাটাক বা হঠাৎ মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ার কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের অসুখ কোভিড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়। এটা অনুমানমাত্র।
সামাজিক বা পরিবেশজনিত কারণ
রাতের শিফট এবং অনিয়মিত ঘুম : শরীরের স্বাভাবিক ঘড়ির বিপরীতে কাজ করলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যায়।
শহুরে জীবনধারা : মেট্রো শহরে জাঙ্ক ফুড, বাতাসে দূষণ, অনেক রাত জেগে কাজকর্ম এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি হৃদরোগের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। আধুনিক সমাজে ফাস্ট লাইফ, ফাস্ট ফুড আর সারাদিন মোবাইল নিয়ে, ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকা অল্প বয়সে হার্টের অসুখের বিশেষ কারণ। এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত। এছাড়া রয়েছে
প্রতিরোধমূলক পরীক্ষার অভাব : এখনকার তরুণ-তরুণীরা প্রায়শই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এড়িয়ে চলে, তাই উচ্চ কোলেস্টেরল বা উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি, এমনকী ডায়াবেটিসের মতো অবস্থাগুলি একদম না জানা থেকে যায়। এই সমস্ত রিস্ক থেকে একদিন হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে এদেরকে আক্রমণ করে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
আরও পড়ুন-উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমেস্টারের ফল প্রকাশিত, প্রথম দশে ৬৯ জন, প্রথম স্থানে দক্ষিণ ২৪ পরগণা
কতটা রোখা সম্ভব
শতকরা ৯০% থেকে ৯৫% শতাংশ ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আটকানো সম্ভব। আটকানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই অসুখ সম্বন্ধে সামাজিক সচেতনতা। বিশেষত আধুনিক তরুণ- তরুণী ও যুব সমাজকে জানতে হবে যে সমস্ত পৃথিবীতে হার্টের অসুখ অল্প বয়সি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেড়ে চলেছে এবং ভারতবর্ষ তার ব্যতিক্রম নয়। আজকাল অল্পবয়সি মেয়েদের মধ্যে ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ বেড়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনযাত্রাও যে খুব শৃঙ্খলার মধ্যে তা সব সময় ঠিক নয়।
তাই হার্টের অসুখ থেকে বাঁচতে হলে যে যে কারণে হার্টের অসুখ হয় সেই সব রিস্ক ফ্যাক্টর থেকে সাবধানে থাকলে নিশ্চয়ই হার্ট অ্যাটাক, সেখান থেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট রোখা সম্ভব।
করোনারি হার্ট ডিজিজ ছাড়া যে কারণে হঠাৎ মৃত্যু
এই সমস্যা উচ্চরক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল ছাড়া জন্মগত ভাবে অস্বাভাবিক করোনারি ধমনী এবং হৃদপিণ্ডের পেশি দুর্বলতা বা কার্ডিওমায়োপ্যাথির মতো হার্টের দুরারোগ্য ব্যাধির থেকে হতে পারে।
হাইপারট্রোফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি যেখানে হার্টের মাংসপেশি জন্মগত কারণে অস্বাভাবিকরকম মোটা, ডায়ালেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি যেখানে হার্টের মাংসপেশি খুব দুর্বল, আর আছে কিছু জন্মগত হার্টের অসুখ আর হার্টের ইলেকট্রিক সার্কিটের অতি-সক্রিয়তার কারণে হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন ও হঠাৎ মৃত্যু। তবে এইসব অসুখের রিস্ক ফ্যাক্টর আলাদা এবং অনেক সময়ে এই ধরনের অসুখ খুব অল্প বয়সে যেমন শিশুদের বা কিশোর বয়সেও হতে পারে। এর চিকিৎসা আলাদা। প্রতিরোধ ব্যবস্থাও অন্যরকম।
কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন পরিবারকে
সব সময়ে যে সম্ভব হয় তা নয়। তবে যাদের পরিবারে অল্প বয়সে হার্টের অসুখের ইতিহাস আছে সেই পরিবারের ছেলেমেয়েদের অল্প বয়সে হার্টের পরীক্ষা করানো দরকার। কিছু রক্তের পরীক্ষা যেমন সুগার, হিমোগ্লোবিন, কোলেস্টেরল, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম ইত্যাদি করলে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলে আর ডাক্তারের কথা ঠিকমতো অনুসরণ করলে খানিকটা প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়া ছোট বয়স থেকে বেশিমাত্রায় খাইয়ে, বাচ্চাকে মোটাসোটা করলে হার্টের অসুখের সম্ভাবনা অল্প বয়সেই বেড়ে যায়। তাই অল্প বয়স থেকেই খাবারে একটা ভারসাম্যতা বজায় রাখতে হবে। ফাস্ট ফুড, ফ্যাটি ফুড নিয়মিত দেওয়া একদম উচিত নয়, এতে উচ্চরক্তচাপ বাড়ে, ডায়াবেটিস বাড়ে, হার্টের অসুখ নিঃসন্দেহে বেড়ে যায়। মায়ের খেয়াল রাখতে হবে ছেলেমেয়েরা যেন নিয়মিত হাঁটাচলা, ব্যায়াম, শরীরচর্চা খেলাধুলা করে, সবসময় যেন মোবাইল, টিভির মধ্যে যেন বসে না থাকে। আর সবচেয়ে বড়কথা হল ছেলেমেয়েদের অল্প বয়সে হার্টের অসুখ থেকে দূরে রাখতে হলে মা-বাবাদের নিজেদের জীবনকেও সুশৃঙ্খল রাখতে হবে।
তাহলে কি মানুষ আনন্দ ছেড়ে দেবে
না, তা কেন? আনন্দ করবে। বাইরে যাবে, মাঝে মাঝে এক আধদিন রেস্তোরাঁতেও যাবে, তবে নিয়মিত নয়। এসবই করা যায়। তবে পরিমাপ মতো, ভারসাম্য রেখে। শরীরের ওজনের খেয়াল রাখতে হবে। যদি সুগার থাকে, কোলেস্টেরল থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। অবহেলা করলে ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। স্মোকিং সর্বতোভাবে বন্ধ করতেই হবে। অল্প বয়সে অ্যালকোহল নেওয়া উচিত নয়। গাঁজা-কোকেন— এই সমস্ত নেশা সাংঘাতিকভাবে হার্টের ক্ষতি করে। তাই নেশা জাতীয় ড্রাগ, কোকেন, গাঁজা একদম বর্জনীয়।
প্রতিরোধ-ব্যবস্থা কী
হৃদরোগ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য নয়, তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সচেতনতার মাধ্যমে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে। প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম— প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট দ্রুত হাঁটা, জগিং, যোগব্যায়াম, অথবা জিমে ওয়ার্কআউটের মতো কার্যকলাপ হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী রাখে। সুষম খাদ্যাভ্যাস-খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন রাখতে হবে। ভাজা, প্রক্রিয়াজাত এবং চিনিযুক্ত খাবার কম, ধূমপান ত্যাগ এবং অ্যালকোহল সীমিত বা অথবা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং হৃদযন্ত্র ঠিক রাখার জন্য ভাল ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা) অপরিহার্য। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা— রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্তে সুগার ইত্যাদির জন্য বছরে একবার স্ক্রিনিং ও ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি। বিশেষ ক্ষেত্রে জেনেটিক পরীক্ষা, ফ্যামিলি স্ক্রিনিং দরকার হতে পারে।
পরিশেষে
তরুণ ভারতীয়দের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হৃদরোগ একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয় যার প্রতি জরুরি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ এবং হৃদরোগের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাবের কারণে তরুণ জনগোষ্ঠী হৃদরোগের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে, সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপানের মতো ক্ষতিকারক অভ্যাস এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যকর পছন্দের মাধ্যমে এই অনেক কারণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণগুলি বোঝা হার্ট অ্যাটাকের প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ। হৃদরোগের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেবলমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ভারতের তরুণসমাজ এই শতাব্দীর হার্টের অসুখের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত হয়ে সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারেবে। কেরিয়ার এবং আর্থিক লক্ষ্যের চেয়ে স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে। কারণ মনে রাখতে হবে যে দিনের শেষে একটি সুস্থ হৃদয় হল সমাজে একটি সুস্থ ভবিষ্যতের ভিত্তি।
আরও পড়ুন-এসআইআরের নামে নোংরা খেলা, ২০০২-এর ভোটার লিস্ট থেকে রহস্যজনকভাবে নাম উধাও বসিরহাটে
হৃদরোগে আক্রান্ত ছোটরাও
২০২৩ সালে হৃদরোগে ২,৮৫৩ জন মারা যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আক্রান্তের বয়স ছিল ১১ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী পরীক্ষার সময় মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত।
সেই বছর, ১৭ বছর বয়সি ইন্দোরের এক ছাত্রী, ইন্দোরে তার বাড়িতে মর্মান্তিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, যদিও তার পারিবারিক হৃদরোগের কোনও ইতিহাস ছিল না। চার মাস আগে টাইফয়েড থেকে সেরে উঠেছিল কিন্তু এমনিতে ভালই ছিল। কিন্তু হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যু।
ক্লাসে বসেই আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বছর আটেকের এক শিশুকন্যার। এই ঘটনা বেঙ্গালুরুর।
উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে বছর চারেকের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলার সময়ে আচমকাই হার্ট অ্যাটাক হয় তার। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি তাকে। কেন এমন বিপদ?
শিশুদের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা দু’প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথমটি হল জন্মগত। আর দ্বিতীয়টি জন্মের পরে। জন্মগত ভাবে হৃদযন্ত্রের সমস্যা হল কনজেনিটাল হার্ট ডিজ়িজ়। এটা হলে হৃদযন্ত্রটি আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছোট বা বড় হয়। পরিশোধিত রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক ভাবে না হওয়া বা হৃদযন্ত্রে ছিদ্র থাকার মতো সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি, পালমোনারি ভালভ স্টেনোসিস জাতীয় সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
যদিও জন্মগত ভাবে হার্টের সমস্যার নেপথ্যে কোনও নির্দিষ্ট কারণ এখনও দেখা যায়নি। হৃদযন্ত্রে ত্রুটি থাকলেও তা জন্মের সময় ধরা না-ও পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে জন্মের কিছু পর থেকে হৃদযন্ত্রে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। যেমন, শিশুর অল্পেই হাঁপ ধরা। খেলাধুলার সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা। এই ধরনের উপসর্গে সতর্ক থাকতে হবে, এড়িয়ে গেলে চলবে না। শিশুর ওজন বাড়ছে না। খাওয়া কমে যাচ্ছে। খাওয়ার সময় শিশু ঘেমে যাচ্ছে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। শিশুর ওজন যদি বেড়ে যায়, স্থূলত্ব দেখা দেয় ছোট থেকেই, তা হলে তার হাত ধরেই ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ হতে পারে।
আবার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়ের যদি রক্তাল্পতা দেখা দেয়, তা হলেও তার প্রভাব পড়তে পারে শিশুর হৃদযন্ত্রে। মা-বাবার হাইপারটেনশন থাকলে সন্তানেরও কম বয়স থেকেই তা দেখা দিতে পারে।
বাইরের খাবার, বেশি তৈলাক্ত খাবার খেলে তার প্রভাব পড়তে পারে হার্টের উপরে। এখন শিশুদের মধ্যে খেলাধুলোর প্রবণতা কমে গিয়েছে। ফলে সারা দিন একই জায়গায় বসে পড়াশোনা করা বা গ্যাজেটে অত্যধিক আসক্তি শিশুদের আলস্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শারীরিক কসরত কম হচ্ছে, ফলে ছোট থেকেই গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে যা ক্ষতিকর। সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুকে, শরীরচর্চার অভ্যাস করাতে হবে।

