মায়াবী রাতে আবার বিশ্বকাপ

Must read

নবি মুম্বই, ২ নভেম্বর : ২০১১ সালের ২ এপ্রিলের পর, ২০২৫ সালের ২ নভেম্বর। আরব সাগরের পাড়ে ফিরল আরও এক বিশ্বজয়ের রাত!
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল (Indian women’s cricket team)। এর আগে দু’বার (২০০৫ ও ২০১৭ সাল) বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। তৃতীয়বারে শাপমুক্ত হলেন হরমনপ্রীত কৌররা। নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ক্রিকেট। দীপ্তির বলে নাদিন ডি’ক্লার্কের ক্যাচ যখন হরমনপ্রীতের মুঠোয় ধরা পড়ল, তখন গ্যালারিতে ডায়ানা এডুলজি শিশুর মতো নেচে উঠলেন। কমেন্ট্রি বক্সে বসা ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজরাও আবেগে ভেসে গেলেন। এই প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেট তারকাদের দেখে মনে হচ্ছিল, হরমনরা নন, কাপ তাঁরাই জিতেছেন।

১৪ বছর আগে এমনই এক মায়াবী রাতের সাক্ষী ছিল মুম্বই। সেদিন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারত ২৮ বছরের খরা কাটিয়ে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জিতেছিল। রাতভর উৎসবে ভেসে গিয়েছিল গোটা ভারত। মাঠেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন শচীন তেন্ডুলকর, যুবরাজ সিং, হরভজন সিংরা।
রবিবার ওয়াংখেড়ের সেই মায়াবি রাত ফিরে এল ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে। শুধু চরিত্রগুলো পাল্টে গেল। ধোনির জায়গায় কাপ মুঠোয় নিলেন হরমনপ্রীত। এবার ভিকট্রি ল্যাপ দিলেন রিচা ঘোষ, স্মৃতি মান্ধানা, জেমাইমা রডরিগেজ, শেফালি ভার্মারা (Indian women’s cricket team)।

আরও পড়ুন-নীলরানিদের ইতিহাস

এই রাত কি কোনওদিন ভুলতে পারবেন শেফালি? বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। প্রতিকা রাওয়াল চোট না পেলে এই ম্যাচটা গ্যালারিতে বসে দেখতে হত তাঁকে। সেই শেফালি ফাইনালে ৭৮ বলে ৮৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দিলেন। এরপর বল হাতে নিলেন দুই উইকেট! আর দীপ্তি শর্মা? ব্যাট হাতে ৫৮ বলে ৫৮ রান করার পর বল হাতে দীপ্তির শিকার ৩৯ রানে ৫ উইকেট! এক কথায় অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। ভোলা যাবে না লরা উলভার্টকেও। সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও সেঞ্চুরি হাঁকালেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। কিন্তু ৯৮ বলে ১০১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেও ট্র্যাজিক চরিত্র হয়ে রয়ে গেলেন লরা।

বৃষ্টির জন্য ফাইনাল শুরু হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দুয়েক পর। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে, শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন শেফালি ও স্মৃতি। শেফালির ৭৮ বলে ৮৭ রানের অনবদ্য ইনিংসটাই দলের ভিত মজবুত করে দিয়েছিল। স্মৃতিও ৫৮ বলে ৪৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে দেন। দু’জনে মিলে প্রথম উইকেটে ১০৪ রান যোগ করেন। সেমিফাইনাল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করা জেমাইমা ফাইনালে প্রত্যাশাপূরণ করতে পারেননি। ৩৭ বলে ২৪ করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। চাপ আরও বেড়েছিল হরমনপ্রীত ২৯ বলে ২০ করে আউট হলে। আমনজোৎ কৌরও (১৪ বলে ১২) খুব বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি।
যদিও দীপ্তি শর্মা ও রিচা ঘোষের সৌজন্যে স্কোরবোর্ডে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান তুলেছিল ভারত। যা মেয়েদের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। দীপ্তি ৫৮ বলে ৫৮ করে শেষ বলে রান আউট হন। রিচা ২৪ বলে ৩৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে দেন। রান তাড়া করতে নেমে এক কুম্ভের মতো লড়ে গেলেন লরা। কিন্তু তিনি আর কী করবেন! ক্রিকেট দেবতা যে এবারের বিশ্বকাপটা হরমনপ্রীতদের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছিলেন!

Latest article