পাড়ায় পাড়ায় উৎসব, কেক কেটে উদযাপন, সোনার মেয়ে রিচার অপেক্ষায় শিলিগুড়ি

Must read

সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: পাড়ায় পাড়ায় উৎসব। চলছে কেক কাটা। দেদার মিষ্টিমুখ। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শিলিগুড়ির সোনার মেয়ের পোস্টার, ব্যানারে ছয়লাপ। তাতে লেখা— রিচা, তুমি আমাদের গর্ব!
শিলিগুড়ির মেয়ের হাত ধরে বাঙালি প্রথমবার বিশ্বকাপ হাতে ছুঁয়ে দেখল। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ভারতীয় দলকে সেরার খেতাব এনে দিয়েছেন শিলিগুড়ির সোনার মেয়ে রিচা ঘোষ (Richa Ghosh)। বাবা-মায়ের পাশাপাশি গর্বের চওড়া হাসি গোটা বাংলার। শিলিগুড়ির সোনার মেয়ের দেখা পাওয়ার অপেক্ষায় গোটা শহর। প্রসঙ্গত, শিলিগুড়ি পুরনিগমের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি হাতিমোড় এলাকার বাসিন্দা রিচা ঘোষ। মহিলা বিশ্বকাপ ২০২৫-এ ভারতের হয়ে অবিশ্বস্য জয় রিচার, একদিকে স্বপ্ন পূরণ, অন্যদিকে জেদ! পূর্ণ হল বাঙালির বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন। রবিবার মুম্বই থেকে জানালেন রিচা। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ফাইনালে রিচার ৩৪ রান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শহরের মেয়ের বিশ্বজয়, আনন্দে মাতল শিলিগুড়ি! রিচা ঘোষ (Richa Ghosh)! নামটাই এখন যেন এক আবেগ, এক গর্ব, এক উন্মাদনা শিলিগুড়ির মানুষের কাছে। রবিবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের জয়ে মুখর হয়ে উঠল গোটা শহর। শহরের সর্বত্রই একটাই স্লোগান— রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই হিলকার্ট রোড, বাঘাযতীন পার্ক, হাকিমপাড়ার অলিগলি থেকে শুরু করে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয় আনন্দ উৎসব। আতশবাজির শব্দে, ঢাকের তালে, গানের ছন্দে কেঁপে ওঠে শহর। রিচার বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় সামলানোই দায়। উৎসবমুখর পরিবেশে এলাকার মানুষ চিৎকার করে উঠছিলেন, আমাদের রিচা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে! রিচার প্রতিবেশীদের কথায়, রিচাকে ছোট থেকে খেলতে দেখেছি। ওর মধ্যে আলাদা জেদ, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস সবসময় ছিল। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ফাইনালে রিচার ৩৪ রান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ম্যাচের পর রিচা জানালেন, জীবন বাজি রেখে নেমেছিলেন ফাইনালে। বিশ্বকাপ জিতে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সদ্যপ্রাক্তন ক্রিকেট সচিব মনোজ বর্মা জানান, রিচার জন্য গর্বিত শহর। বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ জীবনের সবটা উজাড় করে রিচাকে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করেছেন। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাব থেকে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন রিচা। সেই সময় গোপালবাবু তাঁর প্রশিক্ষক ছিলেন। এরপর কলকাতায় গিয়ে প্রথমে জেলা স্তর এবং পরবর্তীতে রাজ্য ও আন্তঃরাজ্য খেলে বিসিসিআই-এর নজরে আসেন রিচা। তাঁর ফিল্ডিং, উইকেট কিপিং এবং ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে আইপিএল-এ তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মনোজ বর্মা। হাকিমপাড়ার মোড়ে সাজানো হয়েছে অস্থায়ী মঞ্চ, সেখানেই রাতভর গানবাজনা চলেছে! শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশ মোতায়েন ছিল ভিড় সামলাতে। তবে উৎসব ছিল শান্তিপূর্ণ। রিচার বন্ধুরা জানিয়েছেন, শিলিগুড়ির প্রতিটি বাড়িতেই আজ আনন্দের জোয়ার বয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব জানান, শিলিগুড়িতে এলেই বাঘাযতীন ক্লাবের বাচ্চাদের খেলা নিয়ে নানান গল্প ও টেকনিক নিয়ে আলোচনা করেন রিচা। মহকুমা পরিষদের হাতে বাচ্চাদের জন্য ১ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছেন তিনি বলে জানিয়েছেন মেয়র গৌতম দেব। পাশাপাশি মেয়র আরও জানান, রিচার জয়ে গর্বিত আমরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে রিচা এবং ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। অন্যদিকে মেয়ের জয়ে অবেগপ্রবণ রিচা ঘোষের বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ। বললেন, ৪৫ রাত না ঘুমিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন রিচা। তাঁর সাফল্যে আনন্দাশ্রু বাবার। রিচা পেরেছে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে। বললেন রিচা ঘোষের বাবা। সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ শহরে।

আরও পড়ুন-ক্রিকেট সবার খেলা, বার্তা হরমনপ্রীতের

Latest article