টাটা ট্রাস্টে চূড়ান্ত ক্ষমতা দখল: ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অপসারিত মেহলি

Must read

নয়াদিল্লি: দেশের শীর্ষ কর্পোরেট গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ফের গড়াতে পারে আদালতে। টাটা গোষ্ঠীর পরিচালন পর্ষদে মতানৈক্য তীব্র হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দ্বন্দ্বে রাশ টানার বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে দুই পক্ষের সংঘাত যে আদালত পর্যন্ত যেতে পারে ইতিমধ্যেই সেই ইঙ্গিত উঠে এসেছে। ১৬ লক্ষ কোটি টাকার টাটা গোষ্ঠীর দাতব্য সংস্থা টাটা ট্রাস্টের ভিতরে ক্ষমতা দখলের লড়াই এখন আরও নাটকীয় মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের মাধ্যমে প্রভাবশালী ট্রাস্টি মেহলি মিস্ত্রিকে গুরুত্বপূর্ণ বোর্ডগুলি থেকে আটকে দেওয়া হয়েছে। মেহলি মিস্ত্রি (Mehli Mistry) বোর্ডের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান নোয়েল টাটা, প্রবীণ শিল্পপতি ভেনু শ্রীনিবাসন এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব বিজয় সিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। গত ২৮ অক্টোবরের রিপোর্ট অনুযায়ী, নোয়েল টাটা, শ্রীনিবাসন এবং বিজয় সিংকে নিয়ে গঠিত একটি জোট স্যার দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট এবং রতন টাটা ট্রাস্টের বোর্ডগুলিতে মেহলি মিস্ত্রিকে পুনর্নিয়োগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, যা তাঁর ট্রাস্টি পদ থেকে বিতাড়নের পথ খুলে দিতে পারে। এর পাশাপাশি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে আরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে মিস্ত্রি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারেন।

আরও পড়ুন-চিন ও পাকিস্তান গোপনে পরমাণু পরীক্ষা চালাচ্ছে, চাপ ভারতের

এই বোর্ডরুমে নাটকীয় সংঘাতের ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটল, যখন ট্রাস্টিদের মধ্যে বড়ধরনের মতপার্থক্য জনসমক্ষে আসার কয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের দুই শীর্ষ পদাধিকারী—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন—নয়াদিল্লিতে নোয়েল টাটা, টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন এবং কয়েকজন ট্রাস্টির সাথে দেখা করেন। ট্রাস্টিদের মধ্যে বিভেদের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল বিজয় সিংকে (৭৭) টাটা সন্সের বোর্ডে পুনর্নিয়োগের বিষয়টি। নোয়েল টাটার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী (যাতে শ্রীনিবাসন ও সিং অন্তর্ভুক্ত) এই পুনর্নিয়োগের পক্ষে থাকলেও মিস্ত্রির নেতৃত্বাধীন অন্য দলটি (যেটিতে প্রাক্তন সিটিব্যাঙ্ক সিইও প্রমিত জাভেরি, পুণের জাহাঙ্গির হাসপাতালের চেয়ারম্যান এইচ সি জাহাঙ্গির এবং সিনিয়র আইনজীবী দারিয়াস খামবাটা অন্তর্ভুক্ত) এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। ফলস্বরূপ, সিংকে টাটা সন্সের বোর্ড থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। অন্য একটি বিতর্কের বিষয় ছিল, টাটা সন্সের সর্বজনীন তালিকাভুক্তি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) টাটা সন্সকে আপার-লেয়ার এনবিএফসি (নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি) হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছিল, যার জন্য সংস্থাটিকে আইপিও-তে যেতে হবে। মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, কিছু ট্রাস্টি উদ্বিগ্ন যে একটি প্রাথমিক পাবলিক অফারিং তাদের ভেটো অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে এবং কোম্পানিকে অধিগ্রহণের ঝুঁকি এবং কঠোর নিয়মের সম্মুখীন করবে। টাটা সন্সের সর্বজনীন তালিকাভুক্তির জন্য আরবিআই-এর সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে যায়। টাটা সন্স ২০২৪ সালের অগাস্টে আরবিআই-এর কাছে তাদের এনবিএফসি লাইসেন্স সমর্পণ করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল যে এটি ঋণমুক্ত হোল্ডিং কোম্পানি হিসাবে চলতে থাকবে। মেহলি মিস্ত্রি হলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির সম্পর্কিত ভাই। তিনি প্রয়াত রতন টাটার অতি ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসাবে পরিচিত। কর্পোরেট ক্ষেত্রে তাঁকে একজন কঠোর পরিশ্রমী পেশাদার হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যিনি ট্রাস্টগুলির পরিচালনায় প্রচুর সময় ব্যয় করেন। কাজের জগতে তিনি তাঁর দৃঢ় নীতি, অসামান্য সততা, নিষ্ঠা ও প্রতিজ্ঞার জন্য প্রশংসিত। প্রকৃতপক্ষে, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী
এইচ পি রনিনা বলেছিলেন যে টাটা সন্সের বোর্ডে টাটা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে মনোনীত হওয়ার জন্য মেহলি মিস্ত্রিই সঠিক ব্যক্তি ছিলেন। গত সপ্তাহে শ্রীনিবাসনকে সর্বসম্মতিক্রমে টাটা ট্রাস্টের আজীবন ট্রাস্টি করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, সেই ঐকমত্য মেহলি মিস্ত্রির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। ট্রাস্টগুলি থেকে মেহলি মিস্ত্রির অপসারণের ফলে ভিতরের ভিন্নমত হয়তো আপাতত দমন করা হয়েছে, কিন্তু মিস্ত্রির (Mehli Mistry) সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। টাটা সন্সের সর্বজনীন তালিকাভুক্তির বিষয়টি আবার সামনে আসবে। টাটা সন্সের ১৮.৩৭ শতাংশ শেয়ার ধারণকারী শাপুরজি পালোনজি (এসপি) পরিবার ১০ অক্টোবর পুনর্ব্যক্ত করে যে টাটা সন্সের একটি পাবলিক কোম্পানি হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত, যা কেবল প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটার কাঙ্ক্ষিত স্বচ্ছতার চেতনাকেই তুলে ধরবে না, বরং কর্মচারী, বিনিয়োগকারী এবং ভারতের জনগণের মধ্যে আস্থা আরও শক্তিশালী করবে। এসপি গোষ্ঠী এই অবস্থানে অনড় থাকার ফলে টাটা ট্রাস্ট এবং বৃহত্তর টাটা গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে মতপার্থক্য চলতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

Latest article