প্রতিবেদন : এসআইআরের (SIR) নামে বিজেপির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি রাজ্যে একের পর এক প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। একদিনে রাজ্যে চার মৃত্যু হল এই এসআইআর-ত্রাসে। ভোটার তালিকায় নাম না-থাকা ও নামের বানান ভুল থাকায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি, বীরভূমের সাঁইথিয়া, হুগলির শেওড়াফুলি ও জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে ভুগছিলেন তাঁরা। শেষমেশ সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে জীবন বলি দিতে হয়েছে তাঁদের। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে গর্জে ওঠেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও শশী পাঁজা। তাঁরা বলেন, একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে এসআইআরে। হুড়োহুড়ি করে এসআইআরের নামে নাম বাদ দেওয়ার কেন্দ্রীয় চক্রান্তে মানুষকে বিভ্রান্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এ-প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লিখেছে তৃণমূল। তাঁকে উদ্দেশ্য করে ব্রাত্য বসু ও শশী পাঁজার বক্তব্য, আপনি যে এত মৌখিক নির্দেশ দিচ্ছেন, সেগুলি লিখিতভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। প্রতিদিনই এসআইআরের আতঙ্কে মৃত্যু ঘটছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির ঢোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীচরণপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন পাইকের (৪৫) নাম ছিল না ২০০২-এর ভোটার তালিকায়। নাম ছিল না তাঁর স্ত্রীয়েরও। তারপর নথিতে গরমিল ধরা পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। বৃহস্পতিবার শাহাবুদ্দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাসপাতালে যান সাংসদ বাপি হালদার, বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার। তাঁরা জানান, এসআইআর নিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত হয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছেন। এর সম্পূর্ণ দায় কেন্দ্র সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। শাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর কারণ এসআইআর-ভীতি।
আরও পড়ুন-হাইকোর্টে ফের ধাক্কা কেন্দ্রের এখনও কেন আটকে ১০০ দিনের টাকা!
বীরভূমের সাঁইথিয়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিমান প্রামাণিকও গত তিন দিন ধরে চরম মানসিক উদ্বেগে থাকার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর ও তাঁর দিদি মল্লিকা পালের পদবি ভুল ছিল। প্রামাণিকের বদলে লেখা ছিল পাল। এসব নিয়ে চিন্তায় আচমকা বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তারপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এদিন হুগলির শেওড়াফুলির গড়বাগানে যৌনকর্মী বিতি দাসের মৃত্যুর খবর মেলে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁরও নাম ছিল না। সেই আতঙ্ক থেকেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ। বছর ৪৯-এর বিতির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চাঁপদানির বিধায়ক তথা হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁই, বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতো ও স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ সিং।
এই এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়ার আবহে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে। বাড়িতে ফর্ম দিতে যাওয়া মাত্রই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়। মৃতের নাম লালুরাম বর্মন (৭১)। বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ নম্বর দক্ষিণ ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা লালুরামের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। তাই তিনি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন বলে দাবি পরিবারের।
এরপরই এসআইআরের জেরে রাজ্যে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস চিঠি লেখে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। চিঠিতে জানানো হয়, আত্মীয়ের তথ্য-সংক্রান্ত নির্দেশিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ও বিএলও-দের কাছে থাকা নির্দেশ নিয়ে অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন বুথ লেভেল অফিসাররা। শশী পাঁজা প্রশ্ন তোলেন, ভোটের কাজে কেন এত অসঙ্গতি? ভোটার তালিকা সমগ্র ভারতে এক রকম হয় আর বাংলায় কেন আর একরকম? কেন বাংলা টার্গেট? কেন অসম, ত্রিপুরাতে এসআইআর হবে না? এসআইআরের কারণে বাংলায় ১৪ জনের মৃত্যু। এর দায় কে নেবে?

