নয়াদিল্লি: সংকটাপন্ন বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কনভেনশন (সিআইটিইএস) ভান্তারার (রিলায়েন্সের চিড়িয়াখানা তথা উদ্ধার কেন্দ্র) প্রাণী স্থানান্তর নিয়ে তদন্তের পর কড়া বার্তা দিয়েছে। কনভেনশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারত যেন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না নিয়ে এবং একাধিক সুপারিশ কার্যকর না করা পর্যন্ত বিপন্ন বন্যপ্রাণী আমদানি বন্ধ রাখে। চলতি বছর ১৫ থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিআইটিইএস-এর একটি দল জামনগরে অবস্থিত অনন্ত আম্বানির পরিচালিত এই কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছিল। এর কারণ ছিল কঙ্গো ও মেক্সিকো সহ বিভিন্ন দেশ থেকে বন্যপ্রাণী আমদানিতে গরমিলের অভিযোগ এবং অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ ওঠা। যদিও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ভান্তারাকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে জানায় যে, সমস্ত প্রাণী স্থানান্তর ‘নিয়ন্ত্রক সম্মতি’ মেনে করা হয়েছে। কিন্তু সিআইটিইএস-এর একটি নথিতে স্পষ্টতই বলা হয়েছে যে ভারত বেশ কিছু প্রাণীর আমদানির অনুমতির ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা অনুসরণ করেনি।
আরও পড়ুন-কর্মী-সমর্থকদের ভালবাসার বন্যায় ভাসলেন অভিষেক
সিআইটিইএস-এর তদন্তে জামনগরের প্রাণীকেন্দ্রে হাইতি থেকে আসা একটি পার্বত্য গরিলা, কঙ্গো থেকে আসা শিম্পাঞ্জি এবং একটি ওরাংওটাং-সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর স্থানান্তরে গুরুতর উদ্বেগের কথা উঠে আসে। ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ‘ক্লিন চিট’ ব্যবহার করে ভান্তারার আমদানি সঠিক ছিল বলে দাবি করলেও সিআইটিইএস ভারতকে তাদের পদ্ধতি ঠিক করতে বলেছে এবং সুপারিশগুলি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনও আমদানি অনুমতি জারি না করার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতকে এই বিষয়ে পরবর্তী ৮১তম স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকের আগে সিআইটিইএস-এর কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ভান্তারার গ্রিনস জুওলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, এই কেন্দ্রে ১০,৩৬০টি ‘উদ্ধারকৃত’ প্রাণী রয়েছে, যদিও কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই সংখ্যাটি অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়। এর পাশাপাশি প্রাণীদের জন্য অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অবৈধ বাণিজ্যে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়, যা ভান্তারা অস্বীকার করেছে। সিআইটিইএস-এর সম্মতি নথিতে বিশেষ করে আটটি শিম্পাঞ্জি আনার জন্য ক্যামেরুন থেকে জাল রফতানি অনুমতির ভিত্তিতে ভারতের আমদানি অনুমতি জারির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানান্তরের জন্য ভুল কোড ব্যবহার করা, মেক্সিকো থেকে চিতার আমদানিতে রফতানি ও আমদানির সংখ্যার মধ্যে গরমিল এবং হাইতির মতো সিআইটিইএস স্বাক্ষরকারী নয় এমন একটি দেশ থেকে গরিলা আমদানির মতো গুরুতর বিষয়গুলিতে ভারত কেন পর্যাপ্ত যাচাই করেনি, সেই প্রশ্নও তুলেছে সিআইটিইএস। আন্তর্জাতিক সংস্থার এই পর্যবেক্ষণ ভারতে প্রাণী উদ্ধার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল সন্দেহ নেই।

