সত্যান্বেষণ সবসময়ই কঠিন। কারণ কাঠখড় পুড়িয়ে সত্যের গোড়ায় পৌঁছনো এবং খুঁজে পাওয়া সেই সত্যকে শরীরে, মনে সহ্য করার মতো সামর্থ্য খুব কম জনের মধ্যেই থাকে। তাই তো সত্যের অনুসন্ধানে গিয়ে কত শত মানুষ নিজেরাই অন্ধকারে হারিয়ে যান। তবুও যাঁরা এই কাজে পিছ-পা হন না তাঁদের পিঠটা একবার সজোরে চাপড়ে দিতেই হয়। আর সেই সত্যান্বেষী যদি হন কোনও নারী তাহলে তাঁর কৃতিত্ব আরও বেশি হয়ে যায়। এমনই এক লড়াকু, সাহসী, ক্ষুরধার ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টের চরিত্রে এবার সবার প্রিয় ‘ইন্দুবালা’ অর্থাৎ শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। গতকাল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-তে স্ট্রিমিং শুরু হল শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘অনুসন্ধান’-এর। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর পর সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চরিত্রে এবার শুভশ্রী।
এই ওয়েব সিরিজের বিশেষত্ব হল নারীকেন্দ্রিক ক্রাইম থ্রিলার যার পরিচালকও একজন নারী। তিনি হলেন অদিতি রায়। পরিচালনার ক্ষেত্রে অবাধ এবং সাবলীল বিচরণ অদিতির। টলিপাড়ায় বহুদিন কাজ করছেন। তাঁর পরিচালিত বেশিরভাগ সিরিজই নারীপ্রধান। ‘নষ্টনীড়’, ‘বোধন’, ‘লজ্জা’— সবগুলোই বেশ চর্চিত এবং প্রশংসিত। কেন তাঁর সিরিজে নারীরাই বেশি প্রাধান্য পায়? এই প্রসঙ্গে অদিতি বলেন, ‘কন্টেন্ট কখনও ওইভাবে নারী বা পুরুষকেন্দ্রিক বলে কিছু হয় না। আমি ভাল কাজে বিশ্বাসী। এমন কিছু করতে চাই যা দর্শক রিলেট করতে পারবে।’
আরও পড়ুন-আঁধারে আইএসএল বিড করল না কেউ, স্থগিত মোহনবাগানের প্রস্তুতি
‘অনুসন্ধান’ প্রসঙ্গে অদিতি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে ছোট ছোট খবর বিভিন্ন কাগজে বেরিয়েছিল যে জেলের মধ্যে কারেকশনাল হোমের মহিলা উইংসে মহিলা বন্দিরা গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল। কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। দেশের বাইরেও এমন ঘটনা ঘটতেও শোনা গেছে। তখন খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। আমাদের এই গল্পের বিষয়বস্তু এটাই। ফলে প্রধান নারী চরিত্রটি যে খুবই বলিষ্ঠ হতে হবে বলাই বাহুল্য। একজন ডাকাবুকো সাংবাদিক। এই চরিত্রটার জন্য প্রথমদিন থেকেই শুভশ্রীর কথাই মনে হয়েছিল কারণ ওর মধ্যে একটা খুব শক্তপোক্ত ব্যক্তিত্ব রয়েছে। শুভশ্রী যেমন লার্জার দ্যান লাইফ আবার তেমনই চরিত্রের প্রয়োজনে ও নিজেকে সাধারণও করে তুলতে পারে। এই ভাবনা থেকেই ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। গল্প শুনে ওর ভাল লাগে। আমরা দুজনেই এই ধরনের কাজ আগে করিনি। ফলে দুজনের কাছেই চ্যালেঞ্জিং ছিল বিষয়টা।’
‘অনুসন্ধান’-এর গল্প সাংবাদিক অনুমিতা সেনের। যিনি বাবার আদর্শ নিয়ে চলেন। সত্যের জন্য লড়তে ভয় পান না। একটি মহিলাদের সংশোধনাগারে ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর রহস্যের খোঁজে নামেন অনুমিতা। জেলটি সম্পূর্ণ মেয়েদের হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার মহিলা বন্দিরা কোনও অজানা কারণে একের পর এক গর্ভবতী হয়ে পড়ে। যে-জেলে পুরুষ প্রবেশের অনুমতি নেই সেখানকার মহিলারা কীভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে! এই সত্যের খোঁজেই দাপুটে ক্রাইম রিপোর্টার অনুমিতা সেন তৎপর। সিরিজের পরতে পরতে খুন, জখম, অ্যাকশন, রহস্য, রোমাঞ্চ। এখানে শুভশ্রী অ্যাকশনও করেছেন। শেষে কী হয় সেটাই দেখার! অভিনেত্রীর কথায়, অনুমিতা অনুসন্ধিৎসু। বাস্তব জীবনে আমরাও তাই কারণ সারাক্ষণ কোনও না কোনও রহস্যের পিছনেই ছুটছি। এই ধরনের কাজ আমি প্রথমবার করলাম। চরিত্রটার মধ্যে প্রচুর চ্যালেঞ্জ ছিল। যেমন অভিনয়ের দিক থেকে তেমনই শারীরিক দিক থেকে। অদিতিদিকে বহুদিন ধরে চিনি ফলে পরিচালক মহিলা হওয়ায় কোনও অসুবিধেই হয়নি। সেটে একজন মহিলা ডিরেক্টরকে পাওয়ার মধ্যে অদ্ভুত একটা গর্বও অনুভব করেছি।
আরও পড়ুন-দুর্নীতি, ১৭৮ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কালো তালিকায়
‘গৃহপ্রবেশ’ এবং ‘ধূমকেতু’র মতো সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন শুভশ্রী, যা বক্স অফিসে সফলও৷ এর আগে দেবালয় ভট্টাচার্যের ওয়েব সিরিজ ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এ তাঁর অভিনয় চমকে দিয়েছিল সকলকে৷ আগামীতে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ এবং পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের ‘রায়বাঘিনী ভবশঙ্করী’র মতো পিরিয়ডিক ড্রামায় চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। ‘অনুসন্ধান’-এ নতুন চরিত্র, নতুন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ক্যামেরার সামনে চ্যালেঞ্জ নিতে কোনও দিনই পিছপা হন না শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে অনুমিতা। অনুমিতা সেনের ‘অনুসন্ধান’ কোন সত্যের মুখোমুখি হয় তা জানতে চোখ রাখুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ।
এই ওয়েব সিরিজে শুভশ্রী ছাড়াও রয়েছেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়, সোহিনী সেনগুপ্ত, স্বাগতা মুখার্জি, অরিজিতা মুখোপাধ্যায়, অরিত্র দত্ত বণিক, সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়, সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। উল্লেখযোগ্য হল— দীর্ঘ বিরতির পর এই সিরিজের মাধ্যমে অভিনয়ে ফিরছেন শিশুশিল্পী হিসেবে পরিচিত অরিত্র দত্ত বণিক। কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপে সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অয়ন চক্রবর্তী। ক্যামেরায় রম্যদীপ সাহা। এডিটিং শুভজিৎ সিংহ। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছেন নবারুণ বোস। প্রযোজনায় সোমা পিকচার্স।

