শ্যামসুন্দরের নৌবিহার, কদমা বড় আকর্ষণ সম্প্রীতির রাসে

মধ্যরাতের এই আচার আজও মেনে চলা হয়। রাজাদের কীর্তিচিহ্ন ফিকে হয়ে আসলেও আজও ময়নার রাস নতুন প্রজন্মের মনে জায়গা ধরে রেখেছে।

Must read

তুহিনশুভ্র আগুয়ান: রাস উৎসবকে ঘিরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে মেলা। আর সেই মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল কদমা। বুধবার থেকে ময়নায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ময়না রাজবাড়ির রাস উৎসব। সেখানেই কদমার টানে দূরদূরান্তের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। নৌকাবিহার থেকে গাড় পাকের কদমার ঐতিহ্য ও পরম্পরা আজও বহন করে চলেছে ময়নার ৪৬৫ রাস উৎসব। কালীদহ ও মাকড়দহ দিয়ে ঘেরা ময়না যেন ভেদাভেদ ভুলে সব ধর্মের পীঠস্থানে পরিণত।

আরও পড়ুন-অনুসন্ধান

রাজ্যের অন্যতম শতাব্দীপ্রাচীন রাস উৎসবের প্রথম সারিতেই নাম পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না রাজবাড়ির রাস। এবার এই রাসের ৪৬৫ বছর। জেলার প্রাচীন এই রাসযাত্রায় রাজবাড়ির কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউকে নিয়ে আজও অনুষ্ঠিত হয় নৌযাত্রা। যা দেখতে বহুদূর থেকে মানুষ ভিড় জমান। মধ্যরাতের এই আচার আজও মেনে চলা হয়। রাজাদের কীর্তিচিহ্ন ফিকে হয়ে আসলেও আজও ময়নার রাস নতুন প্রজন্মের মনে জায়গা ধরে রেখেছে। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১৫৬১ সালে কালীদহে ময়না রাজবাড়ির কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউর মন্দিরে রাস উৎসবের সূচনা করেন গোবর্ধন বাহুবলীন্দ্র। প্রথম দিকে রাজ পরিবারের উদ্যোগে রাস উৎসব ও মেলা পরিচালনা করা হলেও পরবর্তীতে স্থানীয় মেলা কমিটির উদ্যোগে মেলা হয়ে আসছে। এই রাস উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ নৌবিহার। বুধবার ভোরে শ্যামসুন্দর জিউ ও রাধিকার নৌযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় ময়নার রাসমেলা। এক সপ্তাহ ধরে চলবে নৌযাত্রা। তবে কার্তিক পূর্ণিমার মধ্যরাতের নৌবিহার বড় আকর্ষণের। ফুল এবং রঙিন আলোয় সাজানো নৌকায় রাজবাড়ির কুলদেবতার নৌবিহার দেখতে ভিড় জমান দূরদূরান্তের মানুষজন। কালীদহের প্রায় ৫০০ মিটার জলপথ পরিক্রমা করে কুলদেবতা পৌঁছান রাস মন্দিরে। এরপর রাস উৎসবের শেষে ফের নৌযাত্রা করে ঢাকঢোল, আতশবাজি সহকারে রাজবাড়ির মূল মন্দিরে ফিরবেন শ্যামসুন্দর জিউ। ময়নার এই রাসমেলা বাংলায় জাতপাত ও ধর্মীয় ভেদাভেদহীনতার এক অন্যতম নজির। কালীদহ পরিখার এক প্রান্তে কুলদেবতার পঞ্চরত্ন মন্দির। অপরদিকে সুফি পিরের দরগা। ফলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির অন্যতম নজির হয়ে ওঠে ৭ দিনের এই রাসমেলা। যার অন্যতম আকর্ষণ ফুটবলের মতো বড় বড় সাইজের কদমা। এক-একটি দোকানে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কুইন্টাল চিনির কদমা তৈরি করেন ব্যবসায়ীরা। রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য সিদ্ধার্থ বাহুবলীন্দ্র জানান, রাজবাড়ির রীতিনীতি মেনেই রাস উৎসব পালিত হয়। এখানকার কদমা জগৎজোড়া বিখ্যাত। নৌবিহার দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমান। সপ্তাহখানেক ধরে চলে এখানকার মেলা।

Latest article